আজ খবর ডেস্ক: বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ মারা যায় শুধু তামাকের কারণেই! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসেব তেমনই বলছে। এ দিকে, কোভিড (Covid) অতিমারীর আতঙ্কও তামাকের নেশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এই প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানিয়েছে , প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী গাছ কাটা হয় প্রায় ৬০লক্ষ। ফলে পরিবেশে ব্যাপক ভারসাম্যের অভাব ঘটে। এই অভাব মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড জনিত। গাছ কাটার জন্য বাতাসে একদিকে যেমন অক্সিজেনের পরিমাণ কমে অন্যদিকে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হু হু করে বাড়তে থাকে।
মঙ্গলবার অর্থাৎ ৩১শে মে বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ‘তামাক বিরোধী দিবস’ (World No Tobacco Day)। ২০২২ এর শপথ হল ‘কুইট টোব্যাকো টু বি আ উইনার’। অর্থাৎ, তামাক ছেড়ে এগিয়ে চলার শপথ নেওয়ার সচেতনতা বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য।
অধিকাংশ ধূমপায়ীর মনে প্রশ্ন থাকে, তামাক ছাড়লে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে কি? চিকিৎসকদের মতে, তামাক আর ক্যানসার (Cancer) প্রায় সমার্থক। ফুসফুসের (Lungs) ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হল ধূমপান, এমনটাই মত পৃথিবীর অধিকাংশ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের।
তাঁদের বক্তব্য, ফুসফুস ছাড়াও মুখ, গলা খাদ্যনালী, স্বরযন্ত্র, মূত্রথলি ও স্তন ক্যানসারের সঙ্গেও তামাকের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে।
ভারতে মুখের ক্যানসারের অন্যতম কারণ হল গুটখা ও খৈনির নেশা ।
WHO-এর মতে, বিশ্বব্যাপী তামাক সেবন প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে। একটি ফ্যাক্ট-শীটে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাইলাইট করেছে যে গোটা পৃথিবী জুড়ে যে পরিমাণ তামাক সেবন করা হয়, তাতে একটি বড় আকারের জঙ্গল পুড়ে যাওয়ার মত ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে পরিবেশের ওপর। এর ফলে সার্বিকভাবে বন্যপ্রাণী সহ জীববৈচিত্র্যের ও ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এটি পানীয় জলের হ্রাস পাওয়া , জীবাশ্ম জ্বালানী এবং ধাতব সম্পদের নিঃশেষ হওয়ার জন্যও দায়ী।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে জেনে নিন তামাক থেকে মুক্ত হওয়ার কয়েকটি উপায় :
১) যখনই আপনি ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, বাড়ি পরিষ্কার করে ফেলুন। জামাকাপড়, কার্পেট, আসাবাবপত্র সব ধুয়ে ফেলুন। ধূমপানের কোনও গন্ধ যেন বাড়ির কোনও জায়গায় না থাকে।
মনে কষ্ট হবে। তবুও ধূমপানের যাবতীয় উপাচার ছুঁড়ে ফেলে দিন। সিগারেটের প্যাকেট তো বটেই, লাইটারেরও যেন কোনও চিহ্ন না থাকে।
২) যখনই সিগারেট ধরানোর জন্য মুখ উসখুশ করবে, সঙ্গে সঙ্গে মুখে কিছু দিয়ে দিন। হতে পারে মুখশুদ্ধির কোনও উপাদান বা চুইংগাম। মোটকথা মুখে কিছু রাখুন। তাহলে ধূমপানের ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকবে না।
৩) গবেষকদের মতে, ধূমপান ছাড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী হল ফল। সম্ভব হলে প্রতিদিন ফল খান। আঙুর অ্যান্টিটক্সিডেন্টের কাজ করে। এছাড়া ফল দেহের নিকোটিনের মাত্রাকেও কমিয়ে দেয়।
৪) ধূমপান ছাড়ার পর আপনার খিদে পাবে বেশি। তখন হাতের কাছে যা পাবেন, তা না খেয়ে কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
দরকার হলে যেখানে যাচ্ছেন, সঙ্গে করে খাবার নিয়ে যান। এটি আপনার হাতকে যেমন ব্যস্ত রাখে, তেমনই মুখকেও ব্যস্ত রাখে।
৫) ধূমপান যখনই ছাড়ার কথা ভাববেন, সঙ্গে রাখুন স্ট্রেস বল। এটি আপনাকে রিল্যাক্স রাখবে। নিকোটিন থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। এটি আপনাকে নতুন ভাল অভ্যাস তৈরিতেও সাহায্য করবে।
৬) আপনাকে একটি ব্যক্তিগত কারণ খুঁজে বের করতে হবে যা আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করতে সাহায্য করবে। যেমন, সঙ্গীকে চুম্বন অথবা সন্তানের কথা ভেবে ধূমপান বন্ধ রাখুন।
৭) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। শরীরে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল প্রয়োজন। যখন একজন ব্যক্তি ধূমপান ছেড়ে দেন তখন জল শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
৮) আপনি যদি কফি পান করার সময় প্রায়শই ধূমপান করেন তবে কয়েক সপ্তাহের জন্য চা পান করুন।
৯) ব্যয়াম করুন । ব্যায়াম নিকোটিন প্রত্যাহারের লক্ষণ এবং লোভ কমাতে সাহায্য করে।
মনোবিদরা বলছেন, প্রথম প্রথম নেশা ছাড়তে কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সেটাই অভ্যেসে পরিণত হয়। আর এই অভ্যেস আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।