আজ খবর ডেস্ক:
প্রায় ১০বছর আগে বিদ্যা বালনের সঙ্গে ‘কাহানি’তে (Kahani) একটি ক্যামিও (Cameo) করেছিলেন তিনি। আবীর চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee) অবশ্য বাঙালির কাছে পছন্দের ব্যোমকেশ! আদরের সোনা দা! “বিসর্জন”, “বিজয়া”-র নাসির আলি।
এবার আবীর এলেন হিন্দি ওয়েব সিরিজে, ওটিটি প্লাটফর্মে। সোনি লিভ (Sony Liv) এ অবরোধ২ (Avrodh 2) সিরিজে তিনি সেনা অফিসার প্রদীপ ভট্টাচার্য।
এমন একজন সেনা অফিসার, যাঁর শরীরের পেশি বাঁকানোর দরকার পড়ে না। বরং বাঙালি গোয়েন্দার “মগজাস্ত্র” দিয়েই বিপক্ষকে ঘায়েল করা সম্ভব। গোটা সিরিজে আবীর চট্টোপাধ্যায় কোনও শারীরিক কসরত বা জিঙ্গোইস্টিক সংলাপ বলেন না। বরং দেশপ্রেমকে বাস্তবের সীমার মধ্যে রাখেন। আর তাতেই দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন এই বাঙালি অভিনেতা।
বস্তুত, এই প্রথম নয়। অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে পরিচালক, টলিউড থেকে বলিউডের দিকে পা বাড়িয়েছেন অনেকেই। তবে প্রথম অভিযানেই সাফল্য পেয়েছেন মাত্র কয়েকজন। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্যতম নাম থেকে গেল আবীরের।
একজন ভারতীয় সেনা ক্যাপ্টেন, একজন অতিরিক্ত আয়কর কমিশনার, একজন গুপ্তচর, যার সন্ত্রাস-বিধ্বস্ত জম্মু ও কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ অংশে বিস্তর চেনা জানা মানুষ রয়েছে। যাঁরা নিয়মিত নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খবর পৌঁছে দেয় ভারতীয় সেনা কে। প্রদীপ ভট্টাচার্য অবরোধ২ এর কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে , এভাবেই দাপিয়ে কাজ করে গেলেন গোটা সিরিজ জুড়ে।
রাজ আচার্য পরিচালিত অবরোধ: দ্য সিজ উইদিন 2 একটি সামরিক থ্রিলার। সন্ত্রাসবাদ, জাল মুদ্রা, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টা এবং ভারতীয় সেনার দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম ঘিরে আবর্তিত হয়।
এই ওয়েব সিরিজের প্রথম সিজনে উরি (Uri) হামলার পর ভারতীয় সেনা কমান্ডোদের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের গল্প বর্ণনা করা হয়েছিল।
সিজন ২ সন্ত্রাসী হামলা এবং জাল মুদ্রা জড়িত একটি ISI ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আয়কর বিভাগের যুদ্ধকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
দর্শক সমালোচকদের মতে, অতি অভিনয় নয়। বরং মাপা অভিব্যক্তিতে কামাল করেছেন তিনি।
আবীরের নখ কামড়ানোর পরিস্থিতিতেও একটি সংমিশ্রিত আচরণ বজায় রাখার ক্ষমতা এবং তারপরও তাঁর মনের ভেতরে কী চলছে তা আন্ডারলাইন করার কৌশলটি অবরোধ ২-তেও কাজ করেছে। আবীর অভিনীত প্রদীপ চরিত্রটি অত্যধিক অভিব্যক্তিপূর্ণ, দেশপ্রেম-প্রাণিত নেতা নয়। বরং শত্রুদের মাথায় তিনি একজন শান্ত ব্যক্তিত্ব যিনি খুব ধুমধাম বা অ্যাকশন সিকোয়েন্স ছাড়াই নিজের কাজ সম্পন্ন করেন।
সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবীর জানান, ”একটা অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা সবসময়ের জন্যই আলাদা হবে। কারণ, সেখানকার কাজের ধরন প্রায় পুরোটাই আলাদা। সামনে ও পিছনে অপরিজিত মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রায় প্রতি মুহূর্তেই নতুন জিনিস আত্মস্থ করেছি। নতুন জায়গায় কাজ করতে গেলে কিছু জিনিস ভুলে থাকতে হয়। আর সর্বভারতীয় স্তরে এটা আমার প্রথম বড় কাজ। আবার, আমি নবাগতও নই। এই কাজে অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। সবমিলিয়ে একটা মিশ্র অনুভূতি।”
বেশকিছু প্রতিষ্ঠিত নাম এই ওয়েব সিরিজের সঙ্গে জড়িত। যেমন মোহন আগাসে, নীরজ কবি, সঞ্জয় সুরি, অনন্ত মহাদেবনের মত বাঘা বাঘ অভিনেতাদের সঙ্গে এখানে কাজ করেছেন আবীর।
তবে সামগ্রিক চিত্রনাট্য নিয়ে কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও সামনে এসেছে। যদিও নেটিজেনদের বক্তব্য, এতে অভিনেতা আবীরের কার্যত কিছুই করার ছিল না।
যেমন পুরো সিজন জুড়ে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রের প্রেক্ষাপট।
তিনি একজন আয়কর কর্তা এবং টেরিটোরিয়াল সেনাবাহিনীতেও আছেন। তিনি হঠাৎ অফিসে উপস্থিত থাকবেন না এবং সীমান্তে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এই দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য তাঁর পিছনের গল্প কী? আবীরের অভিনীত চরিত্রের স্ত্রী ও একটি কন্যা আছে অথচ পারিবারিক জীবন সেভাবে দেখানো হয় নি। সর্বোপরি, “নোট বন্দী” (Demonetization) পর্বে দেশের বহু মানুষ বিপাকে পড়েছিলেন। অথচ এই সিরিজে বিষয়টি কে অনেকটাই ইতিবাচক প্রোপাগান্ডা হিসেবে দেখানো হয়েছে।