আজ খবর ডেস্ক: সোমবার ভর সন্ধে বেলায়, জনবহুল ভবানীপুরে জোড়া খুন! নাড়িয়ে দিয়েছে শহরবাসীকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর খাস তালুকে এহেন ঘটনা ঘিরে অবশ্য ক্রমেই ঘনাচ্ছে রহস্য।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার এল মুখ্যমন্ত্রীর ফোন। নিহত দম্পতির কন্যাকে তিনি জানিয়েছেন, খুনি কে তা খুঁজে বার করবেন তদন্তকারীরা। তিনি যেন পুলিশের উপর ভরসা রাখেন।
প্রসঙ্গত তিন দিনের সফরে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

সোমবারের এই খুনের ঘটনায় ভবানীপুর থানার(Bhawanipur PS) পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগেই বাড়ি বিক্রি নিয়ে এক ক্রেতার সঙ্গে সামান্য বচসা হয় ওই দম্পতির।
প্রাথমিক ময়নাতদন্ত হলেও চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেতে আরেকটু সময় লাগবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। সম্ভবত বুধবার এই রিপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে। এদিকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদের পরেও
প্রৌঢ় দম্পতির কন্যা সেভাবে নির্দিষ্ট করে সন্দেহভাজন কারোর নাম জানাতে পারেননি।

ওই দম্পতির কন্যা জানিয়েছেন, বাড়ি বিক্রির মূল্য হিসাবে ৬০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন তাঁরা। সেই টাকা দিতে রাজি হননি ক্রেতা। খুনের ঘটনার নেপথ্যে বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সেইসঙ্গে মৃত অশোক শাহ বর্তমানে শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সংক্রান্ত কোনও বিরোধ কারোর সঙ্গে তৈরি হয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, সোমবারই ৩ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেদিনই তাঁর বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে জোড়া খুনের ঘটনায় হতচকিত সকলে।
বিশেষত ভবানীপুরের মত জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনার ফলে আতঙ্কে এলাকাবাসী।


ভবানীপুর একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র। অন্যদিকে ওই ওয়ার্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। স্থানীয় কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধু। স্বভাবতই হাই সিকিউরিটি এলাকা।
উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী এই গুজরাতি দম্পতি খুনের তদন্তে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিলেন। সূত্রের খবর, ফোনে পুলিশ কমিশনার(CP) বিনীত গোয়েলকে(Vineet Goel) তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে”।

জানা গিয়েছে, ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন ওই গুজরাতি পরিবার। মৃতদের নাম, অশোক শাহ ও রেশমী শাহ। এই খুনের খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখানে পৌঁছন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল নিজেও। স্নিফার ডগ নিয়ে অকুস্থলে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারী দল।


লুঠে বাধা, তাই কি খুন হতে হল? মূলত এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। সোমবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখতে পায় বাড়ির একটি দরজা বন্ধ থাকলেও আরেকটি খোলা। চলছে টিভি। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে খাবার। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বেশ ভালরকমই ধস্তাধস্তি হয়েছে সেই দম্পতির!
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত অশোক শাহ (৫৬)-এর শরীরে একটি বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যা থেকে গুলি করে খুন করেই খুন বলে মনে করছে পুলিশ। যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয় সেই সময় তিনি ছিলেন খালি গায়ে। পরনে ছিল একটি হাফ প্যান্ট। তবে অশোক এবং তাঁর স্ত্রী রশ্মিতা শাহের (৫২) শরীরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, ওই ফ্ল্যাটে দম্পতি একা থাকতেন না। সঙ্গে তাঁদের ৩মেয়েও থাকতেন। ছোট মেয়ে কাজের সূত্রে আগেই বাইরে বেরিয়েছিলেন। আরেক মেয়ে বারবার ফোন করেও দুপুর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর তিনিই সন্ধে নাগাদ বাবার ফ্ল্যাটে চলে আসেন। সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন বাবা-মাকে। তারপর খবর দেন প্রতিবেশীদের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ভবানীপুর থানার পুলিশও। পরে সেখানে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল।

সূত্রের খবর, খুন করার পর মোবাইল ফোন নিয়ে ফেরার সময় আততায়ীদের ফোনের শেষ টাওয়ার লোকেশন পাওয়া গেছে ডালহৌসি এলাকায় । যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রহস্য। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানে দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা গিয়েছে।

তবে তাদের ছাতা মাথায় ছিল বলে মুখ দেখা যাচ্ছে না।
উদ্ধার করা হয়েছে গুলির খোল। পুলিসের তরফে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ওই দম্পতির সঙ্গে কারোর কোনও শত্রুতা ছিল কি না? সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে কে বা কারা, কেন এসেছিল?


পুসিস সূত্রে খবর, অশোক শাহর গলার নলি কাটা হয়েছে। একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে দেহে। জানাr চেষ্টা হচ্ছে , প্রোমোটিংয়ের কোনও চক্রান্ত এই খুনের পিছনে থাকতে পারে কি না । এ বিষয়ে একজন ঠিকাদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দম্পতির তিন মেয়েকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *