আজ খবর ডেস্ক: সলিল চৌধুরীর ভাষায় বলা যেতেই পারে, “ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে”! তবে এই ঢেউ আসলে পার্টির সদস্যদের প্রতিবাদের ঢেউ। আর, কারা মানে মোটেও কারাগার নয়। এ যেন সিপিএমের সাংগঠনিক “বজ্র আঁটুনি”তে টান পড়েছে।


প্রাথমিক ভূমিকার পরে আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। বিষয় হল, দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যেখানে একদিকে এনডিএ (NDA) শিবিরের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু আর অন্যদিকে অবিজেপি জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা।


গোল বেধেছে ঠিক এখানেই। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতা কর্মীদের একটা বড় অংশ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা কে সমর্থন করছে তাঁদের দল। ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক-টুইটারে প্রতিবাদের ঝড়। যা সামাল দিতে কখনও সিপিএমের সর্বভারতীয় ফেসবুকপেজে কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার পার্টি সদস্যদের “ওপেন ফোরামে” পার্টি সমালোচনা করলে শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেওয়া দেখানো হচ্ছে।

সংখ্যাগত বিচারে এমনিতেই কেন্দ্রের শাসক শিবির রাষ্ট্রপতি পদে তাদের মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সাংসদ ও বিধায়কেরা। যে অঙ্কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়, তাতে মোট ভোটের মূল্য কমবেশি ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ৯০৩। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৫২ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের নয়া বিধি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক বিধায়কের ভোটমূল্য ১৫১।
এই হিসেব মেনে প্রত্যেক সাংসদের ভোটমূল্য দাঁড়ায় ৭০৮।

এই রাজ্যের বিধানসভায় বামেরা শূন্য। আছেন শুধু বাম ও কংগ্রেস সমর্থিত একমাত্র বিধায়ক আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকী। অন্যদিকে লোকসভায় এই রাজ্য থেকে কোনও বাম সাংসদ নেই। রাজ্যসভায় একমাত্র সিপিআইএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
ইতিমধ্যেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীদের প্রার্থী নির্বাচন সঠিক হয়নি।


এই অবস্থায় দলের অন্দরে ওঠা প্রতিবাদের ঢেউ সামাল দিতে নতুন কোন পন্থা ভাবছে কি সিপিএম?

এমনিতে, সোজা হিসেব বলছে, বিজেপি এবং তার শরিক দলগুলির হাতে রয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ভোট। এদিন নবীন পট্টনায়কের বিজেডি (BJD) এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে, নবীনের দলের ৩১ হাজার ভোট যুক্ত হচ্ছে দ্রৌপদী মূর্মুর পক্ষে।
অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেসও বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেবে বলে জানিয়েছে। জগন রেড্ডির দলের মোট ভোট প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার।
তেলঙ্গানার টিআরএসের (TRS) প্রধান, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তরফেও দ্রৌপদী মুর্মু কে সমর্থনের আশা রাখছে গেরুয়া শিবির।

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় সিপিআইএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ। তাদের মূল বক্তব্য,
আ পাদমস্তক গেরুয়া শিবিরের লোক , বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি, দলের মুখপাত্র এবং বাজপেয়ী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত যশবন্ত সিনহা কে কেন সমর্থন করবে সিপিএম? কেন সমর্থন করবেন বামপন্থীরা?
প্রসঙ্গত, যশবন্ত সিনহার নাম চূড়ান্ত হয়েছিল শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাড়িতে বসে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে।
সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের প্রশ্ন, সবকিছু জেনেও কেন সীতারাম যশবন্ত সিনহার নামে সিলমোহর দিতে রাজি হলেন?

এখানেই উঠে আসছে নানান সমীকরণ, নানান জল্পনা। করোনা পরবর্তী সময়ে একটু একটু করে দলের ছাত্র-যুব’দের সামনের সারিতে নিয়ে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম।
পুরভোট এবং বিধানসভা ভোটে কিঞ্চিৎ সাড়াও মিলেছে তাতে। এই পরিস্থিতিতে পার্টি সদস্যদের মধ্যে তৈরি হওয়া অসন্তোষ আটকাতে নানাবিধ অংক কষছে আলিমুদ্দিন এবং এ কে গোপালন ভবন।
রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন মাত্র একজন সাংসদ। রাজনৈতিক মহলে প্রবল জল্পনা, শেষ মুহূর্তে হয়ত
ভোটে গরহাজির অথবা ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সিপিএম। তবে আরেকটি মহল অবশ্য বলছে, আগাম ঘোষণা করে এহেন সিদ্ধান্ত জানানোর কোনও প্রশ্নই নেই দলের তরফে।
ঠিক কী হয়, আপাতত সেদিকে তাকিয়ে সকলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *