আজ খবর ডেস্ক: ৭৫ মাইক্রনের নিচে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে রাজ্যে। মঙ্গলবার সেকথা জানিয়েছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
মন্ত্রী বলেছেন, চলতি বছরের জুলাই থেকেই চালু হচ্ছে এই নিয়ম। রাজ্যের মোট ১ হাজার ২৬টি প্লাস্টিক উৎপাদনকারী সংস্থাকে ইতিমধ্যেই এই বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ফিরহাদ।
কিন্তু এই বিষয়ে অসন্তোষ রয়েছে আম জনতার মধ্যে। পুরমন্ত্রী আবার কলকাতার মেয়র ও বটে। বুধবার aajkhobor.com কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে কথা বলে নাগরিকদের সঙ্গে। সেখানেই উঠে এল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ইতিমধ্যে শহরের বেশ কিছু বড় বাজারে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের ব্যাগ দেওয়া হয় ক্রেতাদের। এমনকি দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর পুর বাজারেও প্লাস্টিকের বদলে কাগজের ব্যাগ দেওয়া হয়।
কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতাই বলছেন, জিনিসপত্র আনা নেওয়ার জন্য প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগেই স্বচ্ছন্দ তাঁরা।
এদিকে পুরপ্রশাসনের বক্তব্য, কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে বর্ষায় ভোগান্তি বাড়ছে। যত্রতত্র ব্যবহৃত প্লাস্টিক ফেলে রাখার কারণে নিকাশি নালার মুখ বন্ধ হয়ে থাকছে। আর তাই একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটে দীর্ঘক্ষণ জল দাঁড়িয়ে থাকছে।
এর পাশাপাশি পরিবেশবিদরাও সরব হচ্ছেন পরিবেশ দূষণের বিষয় নিয়ে। এমতাবস্থায় ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্ব বিশিষ্ট প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ১লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের নিচে সমস্ত প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, র্যাপার, ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এও জানিয়ে দেও হয় যে, ৫০ মাইক্রনের নিচে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, প্যাকেট ব্যবহার করা যাবে না।
প্লাস্টিকের কাঠি-সহ ইয়ার বাড, বেলুনের জন্য প্লাস্টিকের লাঠি, প্লাস্টিকের পতাকা, আইসক্রিমের স্টিক, পলিস্টেরিন (থার্মোকল), প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, কাঁটাচামচ, চামচ, ছুরি, নল, মিষ্টির বাক্সের চারপাশে মোড়ানোর কাগজ সহ একাধিক জিনিস রয়েছে নিষিদ্ধ তালিকায়।
এই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবহিত করা জন্য বিভিন্ন সংস্থা, রাস্তার বিক্রেতা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, স্কুল, কলেজ, অফিস, হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তা পাঠানো হয়েছে সরকারের তরফে। ৩০শে জুন ২০২২ চিহ্নিত জিনিসপত্রগুলির ব্যবহার শেষ করতে হবে ।
শহর কলকাতার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে এবং সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে যে ছবি উঠে এল তা কিন্তু যথেষ্ট হতাশা ব্যঞ্জক।
ঢাকুরিয়া দক্ষিণাপনের সামনে এক মহিলা যেমন বললেন, “প্লাস্টিকের প্যাকেট বা ক্যারি ব্যাগ বহন করা অনেক সহজ। কাগজের ব্যাগ জিনিসের ভাঁড়ের ছিড়ে যায়। মাঝরাস্তায় তখন খুব অসুবিধে।”
বাঘাযতীন মোড়ের এক প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানের কর্মী বললেন, “ক্রেতারা সব সময় প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ চায়। আমরা মাঝখানে কাগজের ব্যাগ দেওয়া চালু করেছিলাম। কিন্তু লোকেরা নিতে চায় না। তাহলে আমরা কী করব?”
প্রসঙ্গত অতীতে শোভন চ্যাটার্জি কলকাতার মেয়র থাকার সময়, প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ধর্মতলা চত্বর থেকে গড়িয়াহাট বাজার, ক্রেতারাই সেই নিয়ম মানতে চায় নি।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কম বেশী চিন্তিত সকলেই। কিন্তু বাস্তবে প্রশাসনিক বিধিনিষেধ মানতে অনীহা কার্যত সব স্তরের মানুষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। তাই এ বার প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হল বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড সাফ জানিয়ে দেয় যে, ১লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার করলে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়কেই ৫০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।