আজ খবর ডেস্ক: প্রথম বৈঠকে মিলল না সমাধান সূত্র। এদিন দিল্লিতে বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী খোঁজার জন্য যে বৈঠক হল, সেখানে এনসিপি (NCP) নেতা শরদ পাওয়ারের নাম উঠলেও তিনি নিজেই তা প্রত্যাখ্যান করেন। বৈঠক শেষে একদিকে যখন শাসক শিবিরে (BJP) বাঁকা হাসি, অন্যদিকে পরিবর্ত প্রার্থী খোঁজার চেষ্টায় বিরোধী জোট।
এদিকে, মোট ২২টি অবিজেপি দলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু ২২টির মধ্যে বুধবার ১৭টি বিজেপি বিরোধী দল বৈঠকে যোগ দেয়। আপ (AAP), টিআরএস (TRS)-সহ পাঁচ দল বৈঠকে অংশ নেয়নি। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আজকের বৈঠকে অনেকে এসেছেন। দু-একটা দল আসেনি। হয়ত ব্যস্ত ছিল।’’

জুলাই মাসে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেখানে বিজেপি বিরোধী জোটের সর্বসম্মত একজন প্রার্থী ঠিক করার কথা ছিল এদিন। সেই হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সবকটি দলই শরদ পাওয়ারের নামে কম-বেশি সম্মতি জানায়। কিন্তু,রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar) রাজি না হওয়ায় বিকল্প হিসেবে ২ জনের নাম এদিন প্রস্তাব করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
তাঁরা হলেন ফারুক আবদুল্লা (Farooq Abdullah) ও গোপালকৃষ্ণ গাঁধী (Gopalkrishna Gandhi)। মমতার প্রস্তাব নিয়ে নিজের নিজের দলের মধ্যে আলোচনা করে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা।
বৈঠকে শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, সবাই চাইলেও পাওয়ার রাজি হননি। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের তরিফে কে প্রার্থী হবেন তা ঠিক করতে খুব শিগগির ফের বৈঠকে বসা হবে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর নাম।

তৃণমূল নেত্রী এও জানিয়েছেন, “বিরোধীদের পক্ষ থেকে একজনকেই প্রার্থী করা হবে। বিজেপির সময়ে যে ভাবে সংবিধান রোজ আক্রমণের মুখে পড়ছে সেখানে দেশের সংবিধানকে রক্ষা করাই এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ।”
এদিনের বৈঠকে ৫টি দলের প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, বিজু জনতা দল এবং পাঞ্জাবের শিরোমণি আকালি দল বৈঠকে আসেনি। এর মধ্যে আকালি দল বাদে প্রতিটি আঞ্চলিক দলই এক বা একাধিক রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।
এনডিএ (NDA) শিবিরের থেকে এদিনের বৈঠককে একদিকে “ফ্লপ” এবং অন্যদিকে বিরোধী শিবিরে ফাটল বলে তুলে ধরা হচ্ছে।
যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট বলেন, “তাঁদের কিছু অসুবিধা ছিল বলে হয়ত আসতে পারেননি। তবে এর আগে এতগুলো দল কখনও একজায়গায় হয়নি।”

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যৌথ রণকৌশল ঠিক করতে এদিন বিরোধী শিবিরের বৈঠক ডাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির কন্সটিটিউশন ক্লাবে হয় বৈঠক। বৈঠকে তৃণমূল ছাড়াও ছিল কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, সিপিআইএমএল, আরএসপি, শিবসেনা, এনসিপি, আরজেডি, এসপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, জেডি(এস), ডিএমকে, আরএলডি, আইইউএমএল ও জেএমএম-র নেতৃত্ব।
বৈঠকে প্রথমেই সর্বসম্মতভাবে শরদ পাওয়ারের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু, রাজি হননি এনসিপি নেতা নিজেই।
জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যের কারণে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানান। যদিও সব দলই তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়।
পরে ট্যুইটারে পাওয়ার লেখেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আমার নাম প্রস্তাব করায় বিরোধী দলের নেতাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যদিও আমি খুব নমনীয়ভাবে সেই প্রস্তাব খারিজ করেছি।”

অতীতে প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময় নাম উঠেছিল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর। আবার রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হওয়ার সময় মিরা কুমারের নাম নিয়েও যথেষ্ট জল্পনা তৈরি হয়েছিল।
তবে রাজধানী রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, একাধিক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা কে দিয়ে বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে কার্যত ব্যতিব্যস্ত করে রাখা হয়েছে।
“ন্যাশনাল হেরাল্ড” নিয়ে যেমন কংগ্রেসকে, এ রাজ্যে একাধিক মামলায় তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের, একইভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের (Arvind Kejriwal) মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেই কারণেই কি ডাক পেয়েও এলেন না মমতা ঘনিষ্ঠ কেজরিওয়াল? কনস্টিটিউশন ক্লাবের বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে এহেন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *