আজ খবর ডেস্ক: ১৬৭ হয়ে গেল ১৮২। আর ৫৭ হল ৪০! গণনায় কারচুপির অভিযোগ। তাও আবার বিধানসভার (Assembly) অধিবেশন কক্ষের অন্দরে। সোমবার দিনভর এই নিয়ে টানাপোড়েন চলল রাজ্য রাজনীতিতে।
রাজ্যের ১৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে ভোটাভুটিতে প্রাথমিক ফলাফল ছিল শাসক দলের পক্ষে ১৮২। বিরোধী ভোট ৪০।
কিন্তু এর পরেই বেঁকে বসেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, বাকি ১৭ জন বিজেপি বিধায়ক কোথায় গেলেন?
ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
মঙ্গলবার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত সেই অভিযোগ কে মান্যতা দিয়ে ভোটাভুটির গরমিল নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেন।
বিতর্কের পারদ চড়তে থাকায় পরে শাসক দলের তরফে জানানো হয়েছিল, ভোটাভুটিতে ভুল হয়েছে। তবে শাসক দলের এই তথ্য মানতে নারাজ বিজেপি (BJP)। তাঁদের বক্তব্য, ভুল নয় কারচুপি হয়েছে।

ভোট দিয়েছেন ৪০ জন বিজেপি (BJP) বিধায়ক। আর এই ৪০ নিয়েই গোল বেঁধেছে। শুভেন্দু দাবি করেছেন, তাঁদের ৫৭ জন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভোট পড়েছে ৪০টি। তাহলে ১৭ জন গেলেন কোথায়? তাঁরা কি ভোটাভুটির সময়ে ছিলেন না? নাকি তাঁরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ভোট দিয়ে দিয়েছেন?
বিরোধী দলনেতা এও বলেন, এই ভোটাভুটি নিয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস ও। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে বলেন, “সকাল থেকে ধর্নায় না বসে, বড় বড় বুলি না দিয়ে নিজেদের বিধায়কদের সামলাক। আমি জানি না ৫৭ কী ভাবে ৪০ হয়ে গেল। তবে আরএকটু ঝাঁকা দিলে ওই ৪০টা আরও নীচে নেমে যাবে।”
বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “কোর্টে চাইলে যেতেই পারেন।” 

বিধানসভার মধ্যে এই ভোটাভুটিতে কীভাবে এমন ভুল হল, তা নিয়েই সব মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তারপরই এদিন পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলে বিধানসভায় জানালেন, অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee)। তিনি বলেন, “আমি আবারও বলছি বিধানসভার এক কর্মী এক নম্বর ব্লকের ভোট গুনতে ভুল করে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুল এর বিষয়ে আমি ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধের পরই শাসক দলের পক্ষে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, সেই সময়ে গণনায় ভুল হয়েছিল। আসলে বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৬৭ ও বিপক্ষে ৫৫।
যদিও বিরোধীরা একে ভুল বলে মানতে নারাজ। মঙ্গলবার বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী এই নিয়ে কার্যত কটাক্ষ করেন বিধানসভার স্পিকার কে। তিনি বলেন, “এরকম স্পিকার আমি কোথায় পাব? আমি তো ভাগ্যবান। অধ্যক্ষ মহাশয়ের যে সিদ্ধান্ত তা আমি সর্বান্তকরণে সাপোর্ট করি।”

তবে বিধানসভার ভেতরে এমন বেনজির ভুলের দৃষ্টান্ত নিয়ে মঙ্গলবার কক্ষের বাইরে সরব হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা ও মিহির গোস্বামী। তাঁদের বক্তব্য, এটা ভুল নয়, ইচ্ছাকৃত ভুল। ভোটে কারচুপি করার উদ্দেশেই এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
এদিন তাঁরা বিধানসভার কক্ষের বাইরে বসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, বিধানসভার ডিভিশনে যদি এমন কারচুপি করা হয়ে থাকে তো গত বিধানসভা নির্বাচনে গণনায় কীভাবে কারচুপি করা হয়েছে তা পরিস্কার। আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জায়গা বিরোধী শূন্য চান। তাই বিধানসভার অন্দরেও সেই রেশ থেকে যাচ্ছে।
তাঁদের দাবি, এই ভুল নজিরবিহীন। এটা ভুল নয়। গণনায় কারচুপি করা হয়েছে। যেহেতু শুভেন্দু অধিকারী এই গণনার ফল নিয়ে আজ আদালতে যাবেন বলেছিলেন তাই তড়িঘড়ি সঠিক ফলাফল দিতে বাধ্য হয়েছে।
 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *