আজ খবর ডেস্ক:
হলি-বলি -টলি থেকে বিশ্ব রাজনীতি অথবা খেলার দুনিয়া, অসমবয়সী প্রেম (Age Gap Love) চোখে পড়ে। কখনও পুরুষ তাঁর সঙ্গিনীর তুলনায় ১০ বছরের বেশি বড়। কখনও আবার এর উল্টোটা।


এই আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ে যায় ফারহান আখতারের “দিল চাহতা হ্যায়” ছবির কথা। যেখানে পাশাপাশি তিন ধরনের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। একদিকে যেমন আমির খান প্রীতি জিন্টা জুটির সমবয়সী প্রেম অন্যদিকে ডিম্পল কাপাডিয়া এবং অক্ষয় খান্নার তুমুল অসমবয়সী প্রেম।
বস্তুত সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে একাধিকবার কাটাছেঁড়া করেছে বলিউড। উদাহরণ হিসেবে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত দুটি ছবির কথা মনে করা যায়।
একদিকে “চিনি কম”, যেখানে তাবু এবং অমিতাভ বচ্চনের বয়সের বিরাট ব্যবধান। অন্যদিকে পরিচালক রামগোপাল বর্মার ছবি “নিঃশব্দ”। প্রায় নিজের বাবার বয়সী অমিতাভের প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকেন জিয়া খান।

সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার পর এই নিয়ে চর্চা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একদিকে যেমন ছি ছি চলছে অন্যদিকে একাধিক মনোবিদ জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা বিরল নয়।
রাজনীতির জগতেও হামেশাই ঘটছে এমন ঘটনা। অনেকেই মনে করেন, এমন কিছু বিষয় ভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে ট্যাবু (Taboo)।
অথচ ভারতীয় রাজনীতিতেই গত কয়েক বছরের সামনে এসেছে এমন একাধিক ঘটনা। পিছিয়ে নেই বলিউডও।
এমন কয়েকটি উদাহরণ খুব সহজেই আমরা দিতে পারি।

১) বঙ্গ রাজনীতিতে শোভন বৈশাখী জুটি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, বিধায়ক তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee)।বয়স এই মুহূর্তে ৫৯। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Baisakhi Banerjee) শোভনের বান্ধবী এবং পেশায় অধ্যাপিকা। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গেছে, শোভন বৈশাখীর বয়সের ব্যবধান কমবেশি ১৪।

২) সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বয়সের ব্যবধান ৩০ বছরেরও বেশি।

৩) পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা ভগবত সিং মানের বয়স এখন ৪৮। দ্বিতীয় বার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন চলতি বছরেই। পেশাল চিকিৎসক তাঁর স্থির বয়স এই মুহূর্তে ৩২।
জানা গেছে, তাঁরা একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন।

৪) তামিলনাড়ুতে টিভি সাংবাদিক অমৃতা রাইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং। দুজনের বয়সের পার্থক্য ২৫ বছর।
শুধু তাই নয় নিজেদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি ফেসবুকে লিখেছিলেন অমৃতা।


তিনি লিখেছিলেন, “আমি জানি, আমাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে এবং উত্থাপিত হবে। কিন্তু আমি আন্তরিকভাবে অনুভব করি এবং আমার বয়সে আমি জানি আমার জন্য কী ভাল এবং আমি আমার নিজের বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমরা একটি দেশে বাস করি। আধুনিক, প্রগতিশীল ভারত, এবং সাংবিধানিক ও আইনি কাঠামো আমাকে আমার জীবন এবং আমার জীবনের পছন্দ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।”

৫) দক্ষিণী অভিনেতা রাধিকা কুট্টিকে বিয়ে করেন এইচডি কুমারস্বামী। এই জুটির বয়সের পার্থক্য ২৭ বছর।
প্রসঙ্গত নির্বাচনের আগে কুমারস্বামী তাঁর প্রথম স্ত্রী অনিতার সঙ্গে সম্পর্কে থাকা সত্ত্বেও রাধিকাকে বিয়ে করার জন্য যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছিলেন।

হালফিলের রণবীর-আলিয়া অথবা সুস্মিতা সেন-ললিত মোদির বয়সের ব্যবধান ও প্রচুর। বাংলার ফিল্মি জগতে যেমন যথেষ্ট চর্চিত দীপঙ্কর দে ও দোলন রায়ের সম্পর্ক।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনা সামনে আসার পর অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র “সুগার ড্যাডি” (Sugar Daddy) ধারণাটি সামনে নিয়ে আসেন।


সোজা বাংলায় যে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এইভাবে যে, একটি সম্পর্কে পুরুষ সঙ্গীটি যখন মহিলার থেকে বয়সে অনেক বড়, অথবা প্রায় বাবার বয়সী তখনই সেই সম্পর্ককে এই নামে ডাকা হয়।
মনোবিদরা বলছেন, ভারতীয় সমাজের আধুনিক আদর্শ ধারণা অনুযায়ী পুরুষ ও মহিলার বয়সের ব্যবধান ৩ থেকে ৫ বছর হওয়া উচিত।
এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আরও বেশি মিল থাকতে পারে এবং তাঁদের বয়সের ব্যবধান কম হলে একই রকম বিশ্বাস, ভাবনা ও মানসিকতা তৈরি হতে পারে।
কিন্তু যখনই বয়সের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবধান থাকে, দম্পতিদের জীবনের লক্ষ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে, যা প্রমাণ করতে পারে যে দুজন ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদে বেমানান।

প্রত্যাশা
যদিও এটি যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু সঙ্গীর প্রত্যাশা সম্পর্কে সচেতনতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন দুজনের বয়সের ব্যবধান অনেকটাই বেশি থাকে।

বয়সের পার্থক্য স্বীকার করুন

একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় পুরুষদের ক্ষেত্রে “বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা” খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় হিসেবে দেখা হত।
অল্প বয়সী স্ত্রীয়ের মনোরঞ্জন করতে লুকিয়ে চুলে কলপ লাগাতেন স্বামী।
এখন দিন পাল্টেছে। তবু মনোবিদরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বয়সের ব্যবধানটা মেনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে পুরুষ যদি নিজের বেশি বয়সের বিষয়টি নিজে মানতে পারেন তাহলে সম্পর্কে অনেক সুবিধা হয়।

নিজের দায়িত্ব পালন করুন
তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে আপনার ভূমিকা বিবেচনা করুন। ভারতীয় সমাজে এখনো মনে করা হয় পুরুষরাই মূলত উপার্জন করবেন। সে ক্ষেত্রে সংসার করতে গেলে বয়সে অনেক বড় পুরুষটিকে ভবিষ্যতের জন্য আগাম পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, সন্তানের কথা। নিজেদের শারীরিক অসুস্থতা এবং বার্ধক্যে সাংসারিক ব্যয়ের কথা।

পরিণত মানসিকতা
সঙ্গীকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে দেখতে হবে। কাউকে শেখানোর, নির্দিষ্ট আকৃতি বা ছাঁচে ফেলে তৈরি করার চেষ্টা করবেন না।
যখন আপনি বয়সে বড়, তখন বয়স-অর্জিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার নামে উপদেশ দিতে থাকলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

সবশেষে মনোবিজ্ঞানীরা বারবার একটা কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সম্পর্কের আসল মানে দুজনে ভাল থাকা। নিজেরা না চাইলে সেখানে বয়সের ব্যবধান খুব বেশি ছাপ ফেলতে পারে না। শুধু সম্পর্কে যাওয়ার আগে একাধিকবার নিজে নিজেকে প্রশ্ন করে নেবেন, কেন এই সম্পর্ক আপনি চাইছেন?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *