সায়েদুল ইসলাম মন্টু, অস্ট্রেলিয়া:
প্রায় ১১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরেই অস্ট্রেলিয়ার লেবার সরকার দেশটির অভিবাসন নীতিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী অভিবাসীদের জন্য ফেডারেল সরকার গ্রহণ করেছে নানা প্রকল্প।

বিশাল আয়তনের দেশটিতে জনসংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৫০ হাজার। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব কর্মক্ষম জনশক্তি মাত্র ৩৬ লাখ, এবং তাই বিদেশের শ্রমশক্তির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল অস্ট্রেলিয়া।

মহামারি চলাকালে অস্ট্রেলিয়ায় কম অভিবাসনের কারণে ব্যাপক শ্রম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ওই সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের একটি ঘোষণায় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ও অস্থায়ী ভিসাধারী বিদেশি শ্রমিক অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করায় সে দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়ে যায়। শ্রমিকের অভাবে বন্ধও হয়ে যায় অনেক প্রতিষ্ঠান।

২০২১ সালের ২০শে মার্চ এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, স্কট মরিসন (Scott Morrison) বলেছিলেন, ‘অস্থায়ী নাগরিক এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অস্ট্রেলিয়া সরকার গ্রহণ করবে না। তাদেরকে অবিলম্বে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে’।

এরপর প্রায় ২ বছর অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ ছিল। ২০২১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সীমান্ত খুলে দিলেও গত ৭ মাসে ভিসা জটিলতার কারণে খুব কম সংখ্যক বিদেশী নাগরিক ও শিক্ষার্থী ফিরতে পেরেছে।

এ বছরের মে মাসে নির্বাচিত নতুন সরকার বলেছে, ‘ভিসা ব্যাকলগ’ তারা আগের সরকার সূত্রে পেয়েছে। তবে এর সমাধান করার জন্য লেবার সরকার আগ্রহী।

১লা জুলাই অভিবাসীদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন করে ইমিগ্রেশন পদ্ধতি সাজানো হয়। এতে মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের জায়গাগুলো নতুন করে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের পথ প্রসারিত হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম প্রতি আর্থিক বছরে ১লা জুলাই থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত চলে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ সালে অভিবাসন ৪১ হাজার হওয়ার পূর্বাভাস আছে। ২০২২-২৩ সালে এটি ১ লাখ ৮০ হাজার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ২ লাখ ৩৫ হাজার বিদেশি নাগরিককে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিসা দেওয়া হবে বলে ফেডারেল সরকার পূর্বাভাস দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ACCI) মহামারি পরবর্তী অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক পথকে সুরক্ষিত করার জন্য ফেডারেল সরকারের কাছে প্রতি বছর ২ লাখ দক্ষ অভিবাসীকে ভিসা দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই অস্থায়ী অভিবাসনে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি নাগরিকদের স্থায়ী বসবাসের জন্য নতুন রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত মাসে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই অ্যান্টনি আলবেনিজ (Anthony Albanese) বিদেশি নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের ভিসা পদ্ধতি বিলম্বের বিষয়টি উথাপন করেন এবং তা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে বলেন।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্রদপ্তর বলেছে, ‘ভিসা ব্যাকলগ মোকাবিলায় নতুন কর্মী নিয়ে আসা হয়েছে। ভিসা পদ্ধতি বিলম্বের কারণে আবেদনকারী ও ব্যবসার উপর যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এখনও সময় লাগবে’।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *