আজ খবর ডেস্ক:
৬০ জনের ও বেশি দলীয় মন্ত্রীর সমর্থন হারানোর পর অবশেষে পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson)।


সরকার প্রধানের পাশাপাশি কনজারভেটিভ পার্টির (Conservative Party) দলীয় প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছে তিনি। তবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাগ্রহণ না করা পর্যন্ত অন্তবর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্বে থাকছে জনসনই। এ অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনায় উঠে এসেছে- কে হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম অবশ্য বলছে, এই দৌড়ে এককভাবে কেউই এগিয়ে নেই। তবে আলোচনায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক নেতা।


১) লিজ ট্রাস
দলের নিঁচু তলার কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে ৪৬ বছর বয়সী এই নেতার। গত সেপ্টেম্বর থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লিজ ট্রাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union)) সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।

২) নাদিম জাহাবী
যুক্তরাজ্যের নতুন এই চ্যান্সেলরের জন্ম বাগদাদের একটি কুর্দি পরিবারে। সাদ্দাম হুসেনের শাসন আমলে ইরাক (Iraq) ছেড়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যখন পাড়ি দেন, তখন ঠিকমত ইংরেজিও বলতে পারতো না যাহাবী।
কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার জোরে আজ তিনি মিলিওনিয়ার। ২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশের আগে পাঁচ বছর পোলিং ফার্ম ইউগভের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। তেল শিল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে ৫৫ বছর বয়সী এই নেতার।

৩) ঋষি সুনাক
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪২ বছর বয়সী এই নেতা একসময় বরিস জনসনের উত্তরসূরী হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। করোনা ভাইরাস মহামারির সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কর্মীদের জন্য হাজার কোটি পাউন্ডের ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ করায় ঘরে ঘরে পৌছে গিয়েছিল সদ্য পদত্যাগকারী ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীর নাম।
তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে স্ত্রীর নন-ডোম ট্যাক্স স্ট্যাটাস, নিজে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড নেওয়া এবং যুক্তরাজ্যে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিতে প্রতিক্রিয়া জানানোয় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সুনাক। তাঁর খ্যাতি অনেকটাই ম্লান এখন। এরপরও বরিস জনসনের উত্তরসূরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় তাঁর নাম রয়েছে সামনের সারিতেই।

৪) বেন ওয়ালেস
কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বেন ওয়ালেসের নাম উঠে এসেছে বেশি দিন হয়নি। তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া এবং আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর লোকজন সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সাবেক আর্মি ক্যাপ্টেন ওয়ালেস ২০০৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হন। এর আগে অবশ্য স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের সরকারের জুনিয়র মন্ত্রী থেকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে পদোন্নতি পান ৫২ বছর বয়সী এই নেতা।

৫) সাজিদ জাভিদ
ব্রিটিশ সরকারের হাল ধরার মত আরেকজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক হলেন পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত সাজিদ। সদ্যই যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সরকারের ৬টি বিভাগে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
এর মধ্যে ২০১৯ সালে লিডারশিপ কন্টেস্টে চতুর্থ ও হয়েছিলেন তিনি। সাবেক অর্থমন্ত্রী সুনাকের সঙ্গে সাজিদের বন্ধুত্ব সর্বজনবিদিত। ফলে তাঁদের মধ্যে যে কোনও একজন প্রধানমন্ত্রী এবং আরেকজন চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা এখন বেশ আলোচিত। সুনাক আগে রাজস্ব মন্ত্রণালয়ে সাজিদের সহযোগীও ছিলো।

৬) পেনি মর্ডান্ট
বর্তমান মন্ত্রিসভার বাইরে থেকে কেউ যদি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তবে তার এক নম্বর দাবিদার পেনি। ৪৯ বছর বয়সী এই নেতা কনজারভেটিভ পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় এমপিদের একজন।
বেটিং কোম্পানি ল্যাডব্রোকসের নজরে জনসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার দৌড়ে যৌথভাবে শীর্ষস্থান দখলকারী পেনি। তাছাড়া, চলতি সপ্তাহে কনজারভেটিভ হোমের জরিপে সম্ভাব্য দলীয় প্রধান হিসেবে ওয়ালেসের কাছে সামান্য ভোটে হেরেছেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী।

অন্যান্য
এছাড়াও যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান টম টুগেনধাট, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, জ্বালানি মন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং, আবাসন মন্ত্রী মাইকেল গভ প্রমুখ।
(অতিরিক্ত তথ্য সুত্রঃ সায়েদুল ইসলাম মন্টু)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *