আজ খবর ডেস্ক:
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে (Gotabaya Rajapaksa) শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালালেন। অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে (Ranil Wickremesinghe)। তারপরেই শ্রীলঙ্কায় জারি হল “জরুরি অবস্থা” (Emergency)।
আপাতত, সস্ত্রীক মালদ্বীপে (Maldives) রয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর জলপথে নয়, আকাশপথেই দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট।
গোতাবায়া’র প্রাসাদ আগেই দখল করে নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বুধবার কলম্বো শহরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে ফেলে কয়েক হাজার মানুষ।
তবে, গল্প মোটেই এত সহজ নয়। ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে আরও সব তাক লাগানো তথ্য।
জানা যাচ্ছে, মালদ্বীপ পালানোর আগে ভারতে (India) আশ্রয় চেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
এমনকি, আমেরিকাতে (America) ও নাকি ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। দুটি দেশই সাড়া দেয়নি।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক এই সংকটে নানাভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত।
নয়াদিল্লি আপাতত শ্রীলঙ্কার আর্থিক সুস্থিতি ফেরাতে চাইছে। চাইছে গণবিক্ষোভ প্রশমিত করতে। সে দেশের মুদ্রা ভাণ্ডার মজবুত করতে নগদ অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি তেল এবং রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ভর্তি জাহাজ পাঠিয়েছে।
বুধবার সকালেই ৪টি জাহাজ কলম্বো বন্দরে পৌঁছনোর কথা। বস্তুত, শ্রীলঙ্কা সংসদে স্পিকারের কাছে মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র পাঠানোর আগে গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট হিসাবে শেষ যে নির্দেশটি জারি করেছিলেন।
আর তা হল, জ্বালানি ভর্তি ভারতীয় জাহাজগুলি যেন দ্রুত ফাঁকা করে পেট্রল, ডিজেল ও এলপিজি সিলিন্ডার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
#WATCH Military personnel use tear gas shells to disperse protestors who scaled the wall to enter Sri Lankan PM's residence in Colombo pic.twitter.com/SdZWWRMwTn
— ANI (@ANI) July 13, 2022
রাজাপক্ষে বুধবারই পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তিনি শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেননি। ইস্তফা দেওয়ার আগেই দেশ ছেড়েছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি রাজাপক্ষে ইস্তফা দেওয়ার আগে দেশ না ছাড়তেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের পরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হত।
সেই কারণেই দেশ ছাড়ার জন্য এত ব্যাগ্র হয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কায় তুমুল গণবিক্ষোভ হয়। রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ঢুকে পড়েন শত সহস্র জনতা। তারপর রাজাপক্ষের ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে আন্দোলনকারীরা সুইমিং পুলে সাঁতার কেটেছেন, বেডরুমে লাফালাফি করেছেন। বাড়ির সিন্দুক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকাও পাওয়া গেছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, গোটা দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।
কার্যত, জনরোষ উপেক্ষা করেই বুধবার অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পালানোর পরই বিক্রমসিঙ্ঘে যে প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব সামলাবেন, সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বিক্রমসিঙ্ঘে যেন কোনও ভাবেই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব না নেন।
তবে রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালানোর পরে শ্রীলঙ্কায় বুধবার সকাল থেকে আবার নতুন করে জনরোষের ছবি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে ফেলেছে সেনা। এই পরিস্থিতিতেই জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা।
রাজাপক্ষের পালানোর খবর সামনে আসতেই হাজার হাজার বিক্ষোভকারী কলম্বোর রাস্তায় নামেন। তাঁরা পার্লামেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্দেশে মিছিল করে যান। পার্লামেন্টের ২০০ মিটার আগেই তাঁদের রুখে দেয় সেনা। প্রেসিডেন্টের ইস্তফা দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। শুধু তাই-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘেরও পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তাঁরা। স্থানীয় সময় দুপুর ১টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা না দিলে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে যে ছবি সামনে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে ফেলতেই সেনা এবং পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ফাটানো হয়, সঙ্গে লাঠিচার্জও করা হয়। কিন্তু তাতেও আটকানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দেওয়াল টপকে বিক্ষোভকারীদের ভিড় ঢুকে পড়েন।