আজ খবর ডেস্ক:
চলতি বছরে ইলিশের জোগান ভালো হবে বলে আশা করেছিল রাজ্য মৎস্য দপ্তর (Fisheries Department)। কারণ, এবছর বর্ষায় বড় কোনও দুর্যোগ দেখা যায়নি। প্রথম দিকে সমুদ্রে নিম্নচাপও ছিল না তেমন। মাঝেমাঝেই ঝিরেঝিরে বৃষ্টি হচ্ছিল রাজ্যের উপকূল এলাকায়।
ফলে ইলিশ (Hilsa) ধরার এটাই আদর্শ সময় বলে মনে করছিলেন মৎস্যজীবীরা।


এবার সেই সময় এল! গত এক সপ্তাহে ৮০ টন ইলিশ উঠেছে দিঘায় (Digha)। মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি ফুটেছে। জানা গেছে, গত রবিবার শুধু একদিনেই জালে উঠেছে ২৫ টন ইলিশ মাছ। তাছাড়া কোনও দিন ৫ টন, কোনও দিন ১০ টন করে ইলিশ উঠছে দিঘা মোহনায়। চলতি মরসুমে যা সর্বাধিক।

দিঘার পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ড হারবারেও (Diamond Harbour) প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টন ইলিশ উঠেছে। আগামী কয়েক দিন এমন আবহাওয়া থাকলে জালে আরও ইলিশ উঠবে বলে মনে করছেন মৎস্যজীবীরা।


জল থেকে এমন পরিমাণ “রুপোলি শস্য” উঠে এলে বাজারে ইলিশের দামও নাগালের মধ্যে চলে আসতে পারে। এমনটাই মনে করছেন মাছ বিক্রেতারা। মঙ্গলবার প্রায় ১০ থেকে ১২ টন ইলিশ উঠেছে দিঘা মোহনায়। যে মাছগুলি দিঘা মোহনার বাজারে এসেছে সেগুলি আকারে বেশ বড়। সেই সঙ্গে সুস্বাদুও। ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাইকারিতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক থেকে দেড় কিলো ওজনের মাছ কেজি প্রতি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার ইলিশ যে টাকায় বিক্রি হয়েছে তা, স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৩০০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।

স্বাভাবিকভাবেই এই মাছ যখন কলকাতার বাজারে আসছে, তার দাম বেড়ে যাচ্ছে বেশ খানিকটা। দিঘা, নামখানা, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ এবং বালাসোর থেকে ইলিশ আপাতত এসেছে কলকাতার বাজারে । আনুমানিক ৬০ টন মতো ইলিশ এসেছে এখানে। যদিও কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার থেকে যোগানের পরিমাণ অনেকটাই কম। তারপরেও সুখবর এটাই, শহরে প্রথম এসেছে দিঘার ইলিশ।

দাম কেমন?
চাহিদা মত অন্যান্যবারের তুলনায় এবার দিঘা থেকেও কম ইলিশ এসেছে। অন্যান্যবার শুধুমাত্র দিঘা থেকেই আসে ১০০টন মত ইলিশ। কিন্তু এবার এসেছে মাত্র ২০ টন। ফলে ঘাটতির পরিমাণ। ঘাটতি থাকার কারণেই ইলিশের দাম সেভাবে কমছে না।

কলকাতার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের পাঁচ দিন এক রকমের দাম থাকলেও সপ্তাহান্তে অর্থাৎ শনি ও রবিবার মাছের দাম বেশ বাড়ছে।
দিঘা থেকে আসা ৪৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ইলিশের দাম শহরের বাজারে ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ছোট বাজারে দাম আরও বাড়তে পারে।
নামখানা, কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ডহারবারের ইলিশের (৪৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি) দাম ৪৫০ থেকে ১১০০ টাকা। আর সবাইকে টেক্কা দিচ্ছে উড়িষ্যার বালেশ্বরের ইলিশ। ৫০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি ইলিশের দাম ৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।

ফলে ইলিশের দাম এখনও আমজনতার নাগালের বাইরে। তাই দিঘার বাজারে যেমন ইলিশ কিনতে এসেও অনেকেই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন, ঠিক তেমন ছবি ধরা পড়েছে কলকাতার বাজারেও।
জামাইষষ্ঠী চলে গেছে। জামাইদের পাতে কষ্টের সৃষ্টির ছোট ইলিশ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শ্বশুর শাশুড়ি। তবে ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গে পূবালী হাওয়ায় বেশ মৌজ করে ইলিশ ভাজা, সর্ষে ইলিশ, অথবা ইলিশ ভাপা খাওয়ার সুযোগ মিলছে না বাঙালির।


বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। এই বর্ষাতেই বাজারে ইলিশের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রচুর ইলিশ জালে উঠলেও দামটা কিছুতেই কমছে না। তাই আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও পথ নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *