আজ খবর ডেস্ক:
ঘটনাক্রম ১
তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) শহিদ দিবসের মঞ্চ। মুখ্য বক্তা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
ভিড়ে ঠাসা ধর্মতলায় সভামঞ্চ থেকে নাম না করে বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতা বললেন,
“২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। চ্যালেঞ্জ করছি। আর বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেই অন্যরা তখন এক হয়ে যাবে।”
বলাই বাহুল্য, অন্যরা অর্থে বিরোধী জোট।

ঘটনাক্রম ২
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশ শেষ হলেই বিকেলে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল এদিন। সেখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) জানিয়ে দিলেন, দলের সিদ্ধান্ত। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস।

ঘটনাক্রম ৩

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় (National Herald Case) কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধীকে (Sonia Gandhi) এদিন দিনভর জেরা করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। গতমাসে একই মামলায় রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেস (Congress) নেতা কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান।
কিন্তু বিজেপি বিরোধী জোটের পরিচিত কোনও মুখকেই এদিন প্রতিবাদে সরব হতে দেখা যায়নি। ধর্মতলার মঞ্চ থেকে বিজেপিকে (BJP) বিভিন্ন কারণে আক্রমণ করলেও এই বিষয়ে নীরব ছিলেন তৃণমূল নেত্রীও।

প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও এদিন ধর্মতলায় আশাতিরিক্ত ভিড় জমিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপির সমালোচনা করলেও তৃণমূল নেত্রী এদিন বিরোধী ঐক্য নিয়ে খুব একটা জোরালো বার্তা দেননি।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে কি সত্যিই যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা সঠিক?
বিজেপি বিরোধী জোট ছন্নছাড়া?


সদ্যই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে বিরোধী ঐক্যের মুখ হয়েছিলেন মমতা। যদিও পরে তিনি প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করা হবে জানলে তিনি বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী করার ক্ষেত্রে সক্রিয় হতেন না।
এদিকে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল ভোটদানে বিরত থাকবে, একথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আজ। বস্তুত উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী ঠিক করার বৈঠকেও ছিল না তৃণমূল। আবার বিরোধী শিবিরের তরফে মার্গারেট আলভা’র নাম ঘোষণা করার পরেও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য আসেনি ঘাসফুল শিবির থেকে।

উপরাষ্ট্রপতি ভোটে এনডিএ প্রার্থী বাংলার সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। তাঁর নাম ঘোষণার অব্যবহিত আগেই দার্জিলিংয়ের রাজভবনে বৈঠক হয় মমতা-ধনখড় এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার।
তারপরেই এদিন তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার কথা। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। বাম কংগ্রেস ও বিজেপি একেক শিবিরের একেক রকম মত। তবে মোটের ওপর যে প্রশ্ন সামনে আসছে তা হল, তৃণমূল ভোট না দেওয়ায় কি অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে যাবেন জগদীপ ধনখড়?


এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করার প্রথম পর্যায় পর্যন্ত লোকসভা ভোট এবং বিরোধী ঐক্য নিয়ে যথেষ্ট সরব ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু এদিন বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে এদিন যেন কিছুটা স্থিমিত ছিলেন মমতা। ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়ে লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওখানে আমরা বন্ধুদের পাশে থাকব।”
তবে ভোটের আগে জাতীয় স্তরে বোঝাপড়া নিয়ে তৃণমূল নেত্রী এদিন তেমন কিছু বলেননি। বরং মমতার বার্তা, “বিরোধী দলগুলিকে নিজেদের মত করে বিজেপিকে হারানোর চেষ্টা চালাতে হবে। তাতেই বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে। তখন বিকল্প সরকার গড়ে নিতে কোনও সমস্যা হবে না।”

এমনকি এদিন উপরাষ্ট্রপতি ভোট সম্পর্কে দলের স্ট্যান্ড পয়েন্ট জানাতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনডিএ-র প্রার্থী জগদীপ ধনখড়কে সমর্থনের প্রশ্নই নেই। আর যে ভাবে বিরোধীদের প্রার্থী তথা মার্গারেট আলভার নাম এক তরফা ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, তাও ঠিক হয়নি। তাই দলের ৮৫ শতাংশ সাংসদের মত নিয়ে তৃণমূল স্থির করেছে উপ রাষ্ট্রপতি নির্বা়চনে ভোট দান থেকেই বিরত থাকবে তৃণমূল।”
সেইসঙ্গে অভিষেক এও বলেন, “বিরোধী প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে। একজন প্রবীণ নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। তাও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়ার পর।”

অভিষেকের কথায়, যে ভাবে বিরোধী শিবির বৈঠক ডেকেছিল, তারপর সেই বৈঠক যে ভাবে শরদ পাওয়ারের বাড়িতে স্থানান্তর হয়ে গেল সেই প্রক্রিয়াটা একেবারেই ঠিক হয়নি। এটা সামগ্রিক বিরোধী ঐক্যের পক্ষে খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।


তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে এদিন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তৃণমূলের এই ভোটদান থেকে বিরত থাকা কি বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরাল না? বিজেপির সুবিধা করে দিল না? জবাবে অভিষেক বলেন, “আমি সেটা মনে করি না যে, ভোট না দেওয়া মানেই বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়া। মাঠেময়দানে লড়াইটাই আসল।”


গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনেকেই মনে করছেন, মূল সমস্যার জায়গা হয়ে উঠছে বিজেপি বিরোধী জোটের মুখ কে হবেন? দেশজুড়ে কংগ্রেসের পারফর্মেন্স ততটা ইতিবাচক না হলেও এনসিপি সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দল সমিয়া গান্ধীদের যে গুরুত্ব দিচ্ছে, সম্ভবত সেটাই “না পসন্দ” মমতার।


আবার মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা হাত থেকে চলে যাওয়ার পর শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও এই মুহূর্তে আর সেভাবে বিজেপি বিরোধিতায় নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন দ্রৌপদী মুর্মুকে।
ফলে সব মিলিয়ে বিরোধী শিবিরের এই “ছন্নছাড়া” ছবি কিঞ্চিৎ স্বস্তি দিচ্ছে গেরুয়া শিবির কে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *