আজ খবর ডেস্ক:
২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) স্পষ্ট ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘এটা অন্য তৃণমূল।’’
কাকতালীয়ভাবে সেই মঞ্চে সশরীরে হাজির ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও (Partha Chatterjee)।


সম্ভবত এই দুজন কেন, সমাবেশে উপস্থিত কেউই আন্দাজ করতে পারেননি ঠিক তার পরের দিন কী ঘটতে চলেছে!
২২শে জুলাই পার্থর নাকতলার বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (ED) হানা, সেই সূত্রে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার,
পার্থ-অর্পিতার গ্রেপ্তারি এবং বুধবার আবার কোটি কোটি টাকা নগদ এবং লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না উদ্ধার।
বস্তুত পরিস্থিতি এখন যেদিকে গেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা কর্মী চাইছেন দলের তরফে পার্থকে সরানো হোক।

যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) একাংশের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) এখনও কিছুটা হলেও সহানুভূতি রয়েছে পুরনো দিনের সঙ্গী পার্থর প্রতি।
তবে দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত) যেভাবে পার্থ সম্পর্কে উপর্যুপরি আক্রমণ শানাচ্ছেন তাতে দলের একাংশ মনে করছে, অভিষেক দলের অন্দরে কার্যত একটি “প্রেশার গ্রুপ” তৈরি করতে চাইছেন। যাতে দলের অন্দরে বিভিন্ন দুর্নীতি ইস্যুতে অভিযুক্তদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।
আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল ভবনেই ডাকা হয়েছে এই বৈঠক। টুইট করে এ কথা জানিয়েছেন, দলের রাজ্য সম্পাদক তথা কুণাল ঘোষ। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই বৈঠকেই পার্থের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিতে পারে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান।
কিন্তু বিপুল টাকা এবং রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে পার্থর নামে ও বেনামে একের পর এক সম্পত্তি উদ্ধার হচ্ছে, তাতে যথেষ্ট বিচলিত তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ।
সূত্রের খবর, সেই চাপই তাঁরা দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দিতে চাইছেন। তাঁরা চাইছেন, পার্থকে যথাসম্ভব দ্রুত মন্ত্রিসভা, দলীয় পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হোক। এমনকি, দল থেকে বহিষ্কারও করা যেতে পারে। তাতে জনমানসে একটা বার্তা যাবে যে, তৃণমূল দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করে না।

প্রথমে বৃহস্পতিবার সকালে কুণাল ঘোষের একটি টুইট ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। কুণাল ওই টুইটে পার্থকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। পরে অবশ্য সেই টুইট মুছে দিয়ে আরও এক বার টুইট করে কুণাল লেখেন, এ বার দল বিষয়টি দেখছে। তাই আগের টুইটটি তিনি মুছে দিচ্ছেন।
পরের টুইটে কুণাল লিখেছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকেও সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কুণাল।

এদিকে নবান্ন সূত্রে গতকালই জানানো হয়েছিল, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্য মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র মারফত এমন গুঞ্জনও তৈরি হয়েছে, বেশ কয়েকটি দপ্তরের মন্ত্রীত্বের রদবদল হবে। স্বভাবতই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে থাকা একাধিক দপ্তরের দায়িত্ব অন্য কারোর হাতে যেতে পারে।


শোনা যাচ্ছে, আপাতত শিল্প দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। পার্থর হাতে থাকা পরিষদীয় দপ্তর যেতে পারে অন্য কোনও সিনিয়র বিধায়কের হাতে। তালিকায় বেশ কয়েকজনের পাশাপাশি নাম রয়েছে তাপস রায়ের।
বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি যে মন্ত্রিত্ব ছাড়তেন নারাজ, তা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আবার তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পদেও রয়েছেন পার্থ। ফলে একদিকে প্রশাসনিক বৈঠক আর অন্যদিকে দলের সাংগঠনিক বৈঠক, দুদিক থেকেই বৃহস্পতিবার শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে পাথর মাথায়।

আপডেট: চার মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হল পার্থ চ্যাটার্জীকে। সব দপ্তরই আপাতত নিজের কাছে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *