আজ খবর ডেস্ক:
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে দু’দিন অন্তর মেডিক্যাল চেক আপ করানো হচ্ছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arrpieta Mukherjee)।
শুক্রবার সেই মেডিক্যাল চেক আপের জন্যই জোকা ইএসআইতে (ESI, Joka) নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সেখানেই ঘটে যায় নাটকীয় দৃশ্য।
প্রথমে দেখা যায়, গাড়িতে বসে হাউহাউ করে কাঁদছেন অর্পিতা।


হাসপাতাল চত্বরে গাড়ির বাইরে থেকেই স্পষ্ট দেখা যায় এই দৃশ্য। অর্পিতা গাড়ি থেকে নামতেই চাইছিলেন না। কার্যত জোর করে তাঁকে নামানো হয়।
গাড়ি থেকে অর্পিতাকে নামানোর পরেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। মাটিতে গড়াগড়ি খেতে খেতে কান্নাকাটি করতে থাকেন পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা। এর পরে ইডি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে প্রায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ভিতরে। দেখা যায়, হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই ঢুকছেন অর্পিতা।

তবে, গাড়ি থেকে অনেকক্ষণ নামেননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনেকেরই কৌতূহল ছিল, মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়া এবং দলের যাবতীয় পদ হারানোর পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছু বলেন কিনা।
শুক্রবার সকালে হাসপাতালে চেক আপ করিয়ে বেরোনোর সময়ে এ বিষয়ে মুখ খুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার”।
আগের দিন এই হাসপাতালেই মেডিক্যাল চেকআপে আসার সময়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে। সেদিন তিনি সপাটে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, “কী কারণে”?
গতকাল তাঁর মন্ত্রিত্ব খোয়া গেছে, খোয়া গেছে “মহাসচিব” পদও। তৃণমূল তাঁর পাশে নেই, এই বার্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পার্থ’র মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূল অন্দরে এমনিতেই পার্থকে নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। দলের অনেকেই মনে করেন, নিজে ডোবার পাশাপাশি পার্থ এবার দলকেও বিপাকে ফেলতে পারেন। এমন কিছু বলে দেবেন যা প্রমাণ হবে না, কিন্তু কিন্তু দলের রাজনৈতিক সুনাম ধাক্কা খাবে।
গাড়ি থেকে নামানোর সময় রাস্তায় গড়াগড়ি খেতে খেতে অর্পিতা যখন কাঁদছেন, নির্বিকার মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়িতেই বসেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মুখেও কোনও প্রতিক্রিয়া ধরা পড়েনি।

এদিকে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে একাধিক রিয়েল এস্টেট (Real Estate) সংস্থার নথি উদ্ধার করলেন ইডি (ED) আধিকারিকরা। এই নথির সূত্র ধরে ইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, একাধিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল।
গত পরশু রাতে বারুইপুরের “বিশ্রাম” বাগানবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গতকাল রাতে টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি সাউথ আবাসন থেকে অর্পিতার ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি উধাও হয়ে গিয়েছে খবর। চারটি গাড়ির হদিশ জানতে টালিগঞ্জের ওই আবাসনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েছে ইডি। ৪টি গাড়ির মধ্যে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ, একটি হোন্ডা সিটি, একটি হোন্ডা সিআরভি এবং আরেকটি অডি এ৪ রয়েছে বলে ইডি জানিয়েছে।

ইজি হেফাজতে একটানা জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য দিলেন পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা। ইডি সূত্রে খবর, টিভিতে অর্পিতাকে দেখানো হয়, ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। কোটি কোটি টাকার স্তূপ। এই লাইভ টেলিকাস্ট দেখে অর্পিতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, “স্যার, এত টাকা আমার বাড়িতে রাখা হয়েছিল? বিশ্বাস করুন। এত টাকার কথা আমি জানতাম না।”
ইডি অফিসারদের অর্পিতা বলেন, “আমার নামে সম্পত্তি–কোম্পানি সবই আছে। কিন্তু বাস্তবে কোনও কিছুরই মালিক আমি নই। বলতে পারেন আমি একজন বেতনভুক কর্মচারী।”


ইডির তদন্তকারীরা দাবি করেন, শিক্ষা দপ্তরের বদলি ও পদোন্নতির জন্যও লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হত ঘুষ হিসেবে। ইডির প্রাথমিক ধারণা, ঘুষের টাকা তোলার পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই।

ইডি হেফাজত শেষ হলে আলিপুর মহিলা এবং প্রেসিডেন্সি জেলে যথাক্রমে অর্পিতা ও পার্থকেরাখা হবে। প্রতিটি সংশোধনাগারের সেল একেবারে সাফ রাখা হচ্ছে। সেখানে কোনও বিলাসবহুল ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। কারণ তাহলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বাইরের খাবার জেলের ভিতরে আনা যাবে না। সব বন্দিরা যেমন খাবার পান একই খাবার পার্থ–অর্পিতাকে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আদালতের যদি বিশেষ কোনও নির্দেশ থাকে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।


ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভা এবং দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এই আবহে শাসকদলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ময়দানে নামছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।

এদিন ক্যামাক স্ট্রিটে নিজের অফিসে এসএসসি (SSC) চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *