আজ খবর ডেস্ক:
সংসদে বাদল অধিবেশন (Monsoon Session) চলাকালীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হল আরও তিন জন বিরোধী সাংসদকে। বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড হয়েছেন অসমের আঞ্চলিক গণমোর্চার অজিতকুমার ভুইয়াঁ এবং আম আদমি পার্টির (AAP) সুশীলকুমার গুপ্ত ও সন্দীপ পাঠক। সাসপেনশনের মেয়াদ চলতি সপ্তাহের শেষ (শুক্রবার) পর্যন্ত।


এর আগে অভব্যতার অভিযোগে মঙ্গলবার রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয় ২০ জন সাংসদকে। শুক্রবার পর্যন্ত সাসপেন্ড হওয়া সেই সাংসদদের তালিকায় রয়েছেন তৃণমূলের (AITC) ৭ জন। রয়েছেন ডিএমকের (DMK) ৬ জন, তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (TRS) ৩ জন, সিপিএমের (CPIM) ২ এবং আপ (AAP) ও সিপিআইয়ের (CPI) ১ জন করে সাংসদ। তার আগে সোমবার একই অভিযোগে লোকসভার (Lok Sabha) ৪ কংগ্রেস সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।

সংসদ থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদরা কিন্তু তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সংসদ ভবনের ঠিক বিপরীতে গান্ধী মূর্তির সামনে লাগাতার ধর্ণা শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার থেকেই। পেট্রল, ডিজেল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এবং জিএসটি বৃদ্ধির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার আবেদন জানিয়েছিলেন বিরোধী সাংসদরা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, সেই প্রস্তাবে রাজি নয় কেন্দ্রীয় সরকার।
দীর্ঘ প্রায় ৫০ ঘন্টা ধরে দিনরাত কার্যত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন বিজেপি (BJP) বিরোধী দল গুলোর সাংসদরা।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছে এই ধর্ণা। শেষ হল শুক্রবার বেলা ১টায়।


রাতের বেশি ভাগ সময় আড্ডা দিয়ে, গান গেয়ে সময় কাটিয়েছেন সাংসদরা। আর্দ্র আবহাওয়া এবং মশার উৎপাত তো ছিলই। তবে তাতে কাবু করা যায়নি বিক্ষোভকারী সাংসদদের।
সংসদ চত্বরে যেখানে ধর্ণা চলছে, সেখানে একটি তাঁবুর ব্যবস্থা করেছিল আম আদমি পার্টি।
বহিষ্কৃত সাংসদদের মধ্যে তৃণমূলের সুস্মিতা দেব, মৌসম বেনজির নূর, শান্তা ছেত্রী, দোলা সেন, শান্তনু সেন, আবির রঞ্জন বিশ্বাস, মহম্মদ নাদিমুল হক ছিলেন। ডিএমকে-র কানিমোঝি, এনভিএন সোমু, এম আহামেদ আবদুল্লা, এস কল্যাণসুন্দরম, আর নিরঞ্জন, এনআরলাঙ্গো, এম সম্মুগাম; টিআরএস-এর বি লিঙ্গাইয়া যাদব, রবীন্দ্র ভাদ্দিরাজু, দামোদর দিভাকোন্ডা; সিপিআইএম-এর এ.এ. রহিম, ভি শিবদাসন; এবং সিপিআই-এর সন্তোষ কুমার পি।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলেও, রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেলেও প্রায় প্রত্যেক সংসদ দাবি করছেন বেশ অন্যরকম কেটেছে এই সময়টুকু। প্রতিটি পার্টির তরফে সাসপেনডেড সাংসদদের পালা করে লাঞ্চ ডিনারের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছিল। কখনও লাঞ্চের দায়িত্ব নিয়েছিল ডিএমকে। আবার কখনও ডিনার ও ব্রেকফাস্টের দায়িত্ব নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
মেনু ও রকমারি। তালিকায় দইভাত থেকে তন্দুরি চিকেন অথব পনির, সবই এসেছে ঘুরেফিরে।
যেমন এর মধ্যে একদিন ডিএমকে’র দেওয়া ব্রেকফাস্টে ছিল ইডলি ও সম্বর। খাবারের দায়িত্ব মূলত সামলেছেন ৪ মহিলা সাংসদ, তৃণমূলের সুস্মিতা দেব, মৌসম বেনজির নুর, ডিএমকে’র কানিমোঝি ও জেএমএমের (JMM) মহুয়া মাঝি।

শাস্তির মেয়াদ ছিল শুক্রবার পর্যন্তই। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এই শাস্তি তাঁদের মধ্যে ঐক্য বাড়িয়েছে। এক মঞ্চে প্রায় তিন দিন একটানা একসঙ্গে থাকা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও সুদৃঢ় করেছে বলেই দাবি করছেন তাঁরা।
এক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ আবার বলছেন, লোকসভা ভোটের আগে আগামী দিনের সংসদের একাধিক অধিবেশন হবে। কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি নিয়ে সরব হওয়ার জন্য এখন থেকেই ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছেন তাঁরা। এই কদিনের রাতভর আড্ডা, আলোচনা সেই পরিকল্পনাকে মজবুত করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *