আজ খবর ডেস্ক: মহাভারতের কথা যেন ফলে গেল আধুনিক যুগে এসে! ঋষি পরাশর মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে শরীরী মিলনে তৃপ্ত হয়ে বিশেষ বর দেন। মৎস্যগন্ধা থেকে নাম পরিবর্তিত হয়ে শরীরের সুগন্ধের কারণে তাঁর নাম হয় যোজনগন্ধা। কয়েক যোজন দুর থেকে সত্যবতীর শরীরের সুগন্ধ পাওয়া যেত।


কেন এই প্রসঙ্গের অবতারণা?
সম্প্রতি, ইসরায়েলের (Israel) ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের একজন ঘ্রাণ গবেষক একটি সমীক্ষা চালান।
তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কিছু সম্পর্ক যা তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি তাতে শরীরী গন্ধের কোনও ভূমিকা থাকে কি?

ওই গবেষক ২০ জোড়া “ক্লিক ফ্রেন্ড”(Clique Friend) বেছে নেন। তারপরে তাঁদের এমন একটি ডায়েটে রাখা হয় যা সাধারণত মানুষের শরীরের গন্ধ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। কয়েক দিনের জন্য, তাদের এমন খাবার খেতে দেওয়া হয়। এই খাবার মূলত মানুষের শরীরের এমন হরমোনাল গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে, যা থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাম নির্গত হয়।

সেইসঙ্গে এই ৪০ জনকে বাহ্যিক কোনও সুগন্ধি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি বেশ কয়েকদিন। যাতে তাদের শরীরের স্বাভাবিক গন্ধটুকুই শুধুমাত্র পাওয়া যায়।
সাধারণত, মানুষ বিশ্বাস করে যে তাঁরা একে অপরের গায়ের গন্ধ পায়। এ কথাও ঠিক, প্রত্যেক মানুষের শরীরেই একটি নির্দিষ্ট গন্ধ থাকে। মৃদু অথবা কড়া।

সম্প্রতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষা সামনে এসেছে। যেখানে শরীরের গন্ধের সঙ্গে মানুষের প্রেমের সম্পর্কের একটি প্যাটার্ন পাওয়া গেছে। সহজ কথায় সমীক্ষা অনুযায়ী, শরীরের গন্ধের ওপর প্রেম বেড়ে যাওয়া ও কমে যাওয়া নির্ভর করে।


শরীরের গন্ধ নিয়ে গবেষণা করেছেন অথবা করছেন এমন গবেষকদের মতে, মানুষের ত্বক থেকে নিঃসৃত অণুগুলি অজান্তেই পাশের মানুষের নাকে এবং মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়।
মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হল কার সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক তৈরি করবে, শারীরিক ভাবে পরস্পর মিলিত হবে কী না তা নির্ভর করে এই শরীরী গন্ধের ওপর।

বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক নিয়ে অধ্যয়নরত মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দুজন অপরিচিত মানুষ যখন পরস্পরের সান্নিধ্যে আসে তাতে সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করে জেনেটিক্স, মস্তিষ্কের কাজ এবং চেহারার ধরণ। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একে অপরের শরীরী গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হলে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে।


এখন প্রশ্ন হল, কার কেমন গন্ধ পছন্দ তা কী ভাবে ঠিক হবে?
আদতে গন্ধের বিজ্ঞান হল ঘ্রাণ সংবেদন যা পরিবেশে অ্যারোসোলাইজড গন্ধযুক্ত পদার্থের শনাক্তকরণের ফলে সৃষ্ট হয়। দৃষ্টি, স্বাদ, শ্রবণ এবং ভারসাম্যের মত ঘ্রাণশক্তি ও একটি ইন্দ্রিয়। মানুষ ঘ্রাণতন্ত্রের উপাদানগুলি ব্যবহার করে গন্ধ শনাক্ত করতে পারে।


ফলে কার কেমন বন্ধ পছন্দ তা একেবারেই সেই মানুষটির মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করে।
যেমন পারফিউম প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো সাধারণভাবে ধরে নেয় পুরুষদের “মাস্ক” (Musk) এবং মহিলাদের “ফ্রুটি”(Fruity) গন্ধ বেশি পছন্দ।


যেমন বহু মহিলা পছন্দ করেন পুরুষের ঘামের গন্ধ। অনেক মহিলা আবার পুরুষের শরীরে সিগারেটের গন্ধ খুবই পছন্দ করেন। যৌনতায় তৃপ্তির ক্ষেত্রেও এই গন্ধের কার্যকরীতা অনেক বেশি। বলছেন গবেষকরা।


অন্যদিকে, সমীক্ষা বলছে মেয়েদের শরীরের ঘামের গন্ধ মোটেই পছন্দ করেন না পুরুষরা। বরং, হালকা মিষ্টি গন্ধই নারীর প্রতি পুরুষদের আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *