আজ খবর ডেস্ক:
এক মনে নিজের শিল্প কাজে মগ্ন শিল্পী! চারপাশে তাঁকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার ঢেউ।
অথচ তিনি নিরুত্তাপ। অথবা এসবের মধ্যে নিজেকে জড়ানোর প্রয়োজন বোধ করেন না। তিনি ব্যস্ত তাঁর সৃষ্টি নিয়ে।


এই বাংলার ছেলে সনাতন দিন্দা (Sanatan Dinda)। আরও একবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পালক লাগলো তাঁর মুকুটে।
বিশ্ব বডি পেন্টিং চ্যাম্পিয়নশিপে ফের সেরার শিরোপা পেলেন তিনি।
পৃথিবী জুড়ে বডি আর্ট (Body Art) নিয়ে চর্চা নতুন কিছু নয়। তবে ভারতে বিষয়টি চিরকালই কিছুটা বিতর্কিত, কিছুটা নিন্দিত। আর তার একটা বড় কারণ, বডি আর্ট মূলত নগ্ন শরীরের ওপর করা হয়। অনেকেরই মনে থাকবে, নয় এর দশকে বলিউড অভিনেত্রী পূজা ভাট (Pooja Bhatt) একটি ম্যাগাজিনের কভার শুটের এর জন্য বডি পেইন্ট করিয়েছিলেন, যা সেসময় তুমুল বিতর্ক তৈরি করেছিল।

সনাতন দিন্দা এর আগে আর ও দুবার এই বডি আট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এবছর
অস্ট্রিয়ার (Austria) ক্লাগেনফুর্টে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের বিষয়বস্তু ছিল ‘জেনারেশন নেক্সট’। অর্থাৎ কোন পথে হাঁটতে পারে দুনিয়া! কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে রয়েছে আগামী প্রজন্মের জন্য।
মডেলের শরীরে নানা রঙের রেখায় নিজের শৈল্পিক ভাবনার ছোঁয়ায় ভবিষ্যতের একটুকরো পৃথিবী ফুটিয়ে তুলেছেন সনাতন।


যদিও এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন। যত আধুনিক হচ্ছে মানব সভ্যতা ততই কি আবেগহীন হয়ে পড়ছি আমরা? প্রযুক্তি আর যান্ত্রিক সভ্যতার মোড়কে ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে আবেগ-অভিমান-যন্ত্রণা আর ভালবাসার মানবিক অনুভূতি?

এই মুহূর্তে আমস্টারডমে রয়েছেন শিল্পী। সেখান থেকেই ফোনে কথা বললেন aajkhobor.com এর সঙ্গে।
বললেন, ” ওয়ার্ল্ড বডি পেইন্টিং চ্যাম্পিয়নশিপের এবার ছিল ২৫তম বছর। শিল্পী হিসেবে আমার দুর্গাপুজো করার ক্ষেত্রেও এবার ২৫ তম বছর।
আমার ভাবনায় একদিকে যেমন ক্লিন্টের বিখ্যাত “দ্য কিস” ছবিটি এসেছে আবার ঠিক তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকার চিত্রসাংবাদিক কেভিন কার্টারের তোলা কঙ্কালসার শিশু আর ক্ষুধার্ত শকুনের ছবিটিও ফুটিয়ে তুলেছি মডেলের শরীরে। সেই সঙ্গে পিকাসোর গুয়ার্মিকা (Guermica) যেমন আছে ঠিক সেভাবেই মডেলের পায়ের দিকে
পিকাসোরই “ম্যাসাকার ইন কোরিয়া”, যা পৃথিবীজুড়ে একটি অন্যতম যুদ্ধ বিরোধী ছবি হিসেবে পরিগণিত হয় সেটিকে রেখেছি। এক শরীরে আমি মোট ৮টি ছবির কোলাজ করেছি।”

আসলে শিল্পীর মূল ভাবনা জুড়ে ছিল মানব সভ্যতার সেকাল, একাল এবং আগামীকাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) কি পারবে মানবিক অনুভূতির দিকগুলোকে সামলে রাখতে?
শিল্পীর এই ভাবনা এবং সৃষ্টি মন ছুঁয়েছে প্রতিযোগিতার হাজির থাকা সকলের। বিচারকদের রায়ে সেরার শিরোপা উঠেছে সনাতন দ্বীনদার মাথায়। উচ্ছ্বসিত শিল্পী aajkhobor.com কে জানিয়েছেন আপাতত কিছুদিন আমস্টারডাম এবং প্যারিস ঘুরে দেশে ফিরবেন তিনি। তারপর হাত দেবেন পুজোর কাজে।

এই প্রতিযোগিতার মোট নম্বর ছিল ১৬০। সনাতন পেয়েছেন ১৪৯। বাংলার শিল্পীর পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন জার্মানি ও ইটালির শিল্পী। এই নিয়ে তৃতীয়বার বডি পেন্টিং চ্যাম্পিয়নশিপে (World Body Painting Championship) সেরার মুকুট উঠল তাঁর মাথায়। অতীতে এই মঞ্চে দু’বার রানার্স হয়েছেন তিনি।
প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক এই যুগে কি শেষ পর্যন্ত মানুষের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়াবে যন্ত্র মানব? নিজের সৃষ্টিতে রোবটিক রিলেশন থেকে রোবটিক সেক্স, এমন নানা বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন শিল্পী সনাতন দিন্দা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *