আজ খবর ডেস্ক:
তুমুল নাগরিক বিক্ষোভ। জ্বলছে শ্রীলঙ্কা(Sri Lanka)।
শনিবার দুপুরে বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের প্রাসাদে ঢুকে পড়েন।
পরিস্থিতি রীতিমত অগ্নিগর্ভ। আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, নিজের বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ড গোতাবায়া রাজাপক্ষে(Gotabaya Rajapaksa)।


হাজার হাজার বিক্ষোভকারী, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, ট্রেন এবং ট্রাকে করে কলম্বো পৌঁছন। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে এদিন সকালে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন ঘেরাও করেন তাঁরা।
এমনকি জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বেশ কিছু সামরিক কর্মীও নাগরিকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

গত বেশ কয়েকমাস ধরেই প্রবল আর্থিক ভাবে ধুঁকছিল শ্রীলঙ্কা।গণবিক্ষোভের এই আবহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দু’মাসের মধ্যেই ইস্তফা দিলেন রনিল বিক্রমসিংহ। শনিবার এক বিবৃতিতে ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছাপ্রকাশের কথা জানান রনিল। তার পরই পদত্যাগ করেন ।


টুইটারে(Twitter) বিক্রমসিংহ জানিয়েছেন, দেশের মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে সর্বদলের সরকার গঠন যাতে করা যায়, সে কারণেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্কট কাটাতে শনিবার সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

কার্যত, শুক্রবার থেকে দ্বীপরাষ্ট্রের পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় গণবিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভের জেরে আগেই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন বিক্রমসিংহ। কিন্তু তার পরও শ্রীলঙ্কার সঙ্কটময় পরিস্থিতির বদল হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী নেতা সাজিত প্রেমদাসা।


শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের প্রাসাদে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।
যদিও একটি সূত্র দাবি করছে, দেশের গোয়েন্দাদের কাছে এই খবর আগে থেকেই ছিল।

ফলে ঘটনা ঘটার অনেক আগে শুক্রবার রাতেই প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয় সেনা। প্রবল উৎকণ্ঠায় রাত কাটলেও জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে সকালে। কার্ফু উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ কলম্বোয় রাজাপক্ষের সরকারি প্রাসাদ ঘিরে ধরেন।


কাঁদানে গ্যাসের গোলা ছুড়ে, শূন্যে গুলি চালিয়েও তাঁদের রুখতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। একটি অংশের দাবি, তাতেই আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আমজনতা। এক সময় ব্যারিকেড ভেঙে স্রোতের মত মানুষ ঢুকে পড়তে শুরু করেন রাজাপক্ষের প্রাসাদের অন্দরে।
শনিবার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা তাঁর সরকারি বাসভবনে হামলা চালান। শ্রীলঙ্কার বিপর্যস্ত রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে পালিয়ে যান।

আন্তর্জাতিক মহলের মতে, শ্রীলঙ্কায় এই মুহূর্তে জ্বালানী, খাদ্য এবং ওষুধের আমদানি সীমিত করা হয়েছে। যায় আর্থিক সঙ্কটের সময় দেশের অর্থ কম পরিমাণে বাইরে যায়। এর ফলে দেশের মধ্যে প্রবল ভাবে জিনিসের দাম বেড়েছে।
গত সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আর্থিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার তিন বিচারক শনিবারের বিক্ষোভকে অবৈধ করার জন্য পুলিশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যা থেকে স্পষ্ট, শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের এই বিক্ষোভে প্রশাসনের একাংশের সায় রয়েছে।
জীবনে দেশবাসীকে এত ঐক্যবদ্ধ দেখিনি। টুইট করে মন্তব্য করেছেন শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য সনৎ জয়সূর্য(Sanath Jayasuriya)। টুইটে তিনি লিখেছেন, “আমার পুরো জীবনে আমি কখনোই দেশ ইউনাইটেডকে এভাবে এক লক্ষ্যে একজন ব্যর্থ নেতাকে বের করে দিতে দেখিনি। লেখাটি এখন আপনার অফিসিয়াল হাউস ওয়ালে রয়েছে। দয়া করে শান্তিতে যান, ” GoHomeGota.


রাজাপক্ষের ইস্তফা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তাঁর দলেরই ১৬ জন এমপি। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *