আজ খবর ডেস্ক:
গণ বিক্ষোভ উত্তাল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)।
শুক্রবার সকালে কলম্বোতে রাষ্ট্রপতির সচিবালয় এবং গ্যালে ফেসের কাছে বিক্ষোভকারীদের সরাতে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন নিয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশী কূটনীতিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।


নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার পরেও আমজনতার মধ্যে তুমুল বিক্ষোভ চলছিল। এদিন সকালে কলম্বোতে গ্যালে ফেসে পুলিশ সহ একটি বিশাল সামরিক দল অভিযান চালায়। এরপরে এই বিবৃতিগুলি আসে। যেখানে কার্যত বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল। বিবৃতি থেকে উঠে আসা মূল বক্তব্য, সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা দ্বীপ রাষ্ট্রের গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও তিন মাসের বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে। ফলে শ্রীলঙ্কা সরকারের উচিত, বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, গত কয়েক ঘণ্টায় শ্রীলঙ্কার পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্যালে ফেসের প্রতিবাদ মঞ্চ ও সংলগ্ন ক্যাম্পটি ভেঙে দিয়েছে।
এর পর বিক্ষোভকারীরা কলম্বোর ফোর্ট রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। নতুন রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে (Ranil Wickremesinghe) এবং প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুণবর্ধনের (Dinesh Gunawardena) শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, কয়েক ডজন সৈন্য বিক্ষোভস্থলের মধ্য দিয়ে মিছিল করে। রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়া প্রধান সড়কের দু’পাশে থাকা তাঁবুগুলি পরিষ্কার করে।
বিভিন্ন মিডিয়া ফুটেজে দেখা যায়, অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে সশস্ত্র সৈন্যরা ক্যাম্পটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে। হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা সজিথ প্রেমাদাসা এটিকে “অহংকারের অকেজো প্রদর্শন” বলে অভিহিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী এবং সাংবাদিক সৈন্যদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং বলেছেন, “মাঝরাতে গ্যালে ফেস-এ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”।
তিনি কর্তৃপক্ষের সংযম এবং আহতদের অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কায় কানাডিয়ান হাইকমিশনার ডেভিড ম্যাককিনন বলেছেন, “গ্যালে ফেসে প্রতিবাদের জায়গায় কী ঘটছে তা শুনছি। এখন কেন এমন হচ্ছে তা নিশ্চিত নই।”
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের সংযমের সাথে কাজ করা এবং হিংসা এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ হাল্টন বলেছেন, “গ্যালে ফেস প্রতিবাদ সাইট থেকে রিপোর্ট নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন”।
তিনি যোগ করেছেন, যুক্তরাজ্য (UK) শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের গুরুত্ব স্পষ্ট করেছে।

বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, নতুন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে তা জোর করে ভাঙ্গার চেষ্টা চলবে। বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়া বিক্রমাসিংহে শুক্রবার তাঁর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন।
শ্রীলংকার অধিকাংশ জনতা মনে করেন, শাসক দল এসএলপিপি-র নেতা তথা দেশের প্রাক্তন ও পলাতক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের (Gotabaya Rajapaksa) অনুগত পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রনিল। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত সুর চড়াচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার পরে রনিল বলেছেন, ‘‘আমি রাজাপক্ষেদের বন্ধু নই, শ্রীলঙ্কার আমজনতার বন্ধু।’’

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই মুহূর্তে রনিলের সামনে তিনটি উপায়,
১) আইএমএফ-এর কাছ থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পসূচি আদায় (অন্তত বছর পাঁচেকের মেয়াদে)।
২) অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে বাণিজ্য সহায়ক করে তুলতে হবে।
৩) রাজনৈতিক সং‌স্কার প্রয়োজন। গোতাবায়া রাজাপক্ষে তাঁর দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ক্রমশ বাড়িয়ে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে বেড়েছে সর্বত্র রাজনৈতিক নেতাদের নাক গলানো, দুর্নীতি। অবিলম্বে সেগুলিও বন্ধ করার প্রয়োজন।

এদিকে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এই আপৎকালীন অবস্থা চলাকালীন ভারত কোনও রাজনৈতিক দল বা নির্দিষ্ট সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিতে চাইছে না।
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার গোপাল বাগলে টুইট করে বলেছেন, “ভারত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, সে দেশের সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে শ্রীলঙ্কার সুস্থিতি, এবং অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন চায়।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *