আজ খবর ডেস্ক: বিরোধীরা এক জোট। কেউ বলছে “চাটুকারিতা”, কেউ আবার তোপ দাগছে “তোষামোদ”!
বিষয় হল, রাজ্যের শাসক দল এখন “স্বখাত সলিলে” অবস্থায়। সৌজন্যে, নিজের দলের বিধায়ক, নেতা।
ফলে, সামনে ২১শে জুলাইয়ের মেগা ইভেন্ট সামাল দিতে কড়া অনুশাসন তৈরি করল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)।
যেখানে একেবারে নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হল, নেতারা কী বলবেন আর কী বলবেন না। কী করবেন আর কী করা একেবারেই নিষিদ্ধ। এমনকি ২১শে জুলাইয়েরর প্রচার পর্বেও দলের নেতাদের কড়া নিয়মের আওতায় আনা হল।
শুরু করেছিলেন সিনিয়র নেতা ও বিধায়ক নির্মল মাজি(Nirmal Maji)। বাঁকুড়ার একটি সভায় আচমকায় সারদা মায়ের সঙ্গে তুলনা টেনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee)। পরবর্তীতে যা নিয়ে বিতর্ক এত দূর পৌঁছয় যে, খোদ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তরফ থেকে বিবৃতি জারি করে নির্মলের বক্তব্যকে “ভিত্তিহীন” আখ্যা দেওয়া হয়। যদিও এতে নির্মলের দল তৃণমূল কংগ্রেস চরম বিব্রত হলেও এখানেই থেমে যাননি উলুবেড়িয়ায়া উত্তরের বিধায়ক। স্পষ্ট জানান, তাঁর বক্তব্যে কোনও ভুল নেই।
এই বিতর্ক শেষ হতে না হতেই এগিয়ে এলেন আরেক তৃণমূল নেতা। বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস গত রবিবার একটি সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা টানলেন রানী রাসমণির।
বিশ্বজিতের একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওর বক্তব্য যে তাঁরই, অস্বীকার করেন নি বিশ্বজিৎ। রবিবার বনগাঁ শহরে তৃণমূল কর্মীদের এক সভায় বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে আমি রানি রাসমণির ছায়া খুঁজে পাচ্ছি। আগামী একশো বছর পরেও মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন রয়েছেন রানি রাসমণি।’’
এখানেই না থেমে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রাসমণির মতই।’’
প্রসঙ্গত, প্রথমে তৃণমূলে থাকলেও ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে(BJP) যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পরে ফিরে আসেন পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে। তবে খাতায়-কলমে, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এখন ও বিজেপির বিধায়ক হিসেবেই আছেন।
এসবের মধ্যেই এবার নড়েচড়ে বসেছে ঘাসফুল শিবির। গত সপ্তাহে তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন ভবনে ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠক হয় যেখানে হাজির ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
দলের নেতাদের তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট বলেছিলেন, ২১শের কর্মসূচির নামে চাঁদা না অনুদান বাবদ এক টাকাও তোলা যাবে না। শুধু তাই নয়, একগুচ্ছ “গাইডলাইন” ও দেওয়া হয়েছে দলের নেতা কর্মীদের।
এরমধ্যেই পর পর নির্মল মাজি ও বিশ্বজিৎ দাসের এহেন বক্তব্যে যথেষ্ট বিব্রত ও বিরক্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এবার তাই নেতাদের মুখে এবং কাজে রাশ টানতে চাইছে তৃণমূল।
করোনা’র কারণে কার্যত দুবছর পর ধর্মতলার পুরনো জায়গায় ফিরছে একুশে জুলাই কর্মসূচি। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ও বাংলার বাইরে বেরিয়ে ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ওয়াকিবহাল যে এবছরের ২১শে জুলাইয়ের দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের।
সেই কারণেই বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে আলাদা করে নজর দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রের খবর, নয়া নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে
১) প্রচারে কোনও স্থানীয় নেতা, কাউন্সিলর, বিধায়ক বা সংসদের নাম দেওয়া যাবে না। লিখতে হবে সংগঠন ও স্তরের নাম
২) তৃণমূলের ব্যানার, ফ্লেক্স, হোর্ডিং মানেই তাতে নীচের দিকে বোল্ড ফন্টে লেখা থাকে কোনও না কোনও নেতার নাম, পাশে পদ। অনেকের মতে, নেতারা সেসব দিয়ে এলাকায় শক্তি প্রদর্শন করতে চান।
৩) দলের তরফে প্রচার চালানোর সময় ব্যক্তি ভজনা চলবে না। বিশেষত নির্মল বা বিশ্বজিৎ যে ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তাতে আসলে দলের ক্ষতি। তাই এবার সেটাকে বন্ধ করতে চাইছে তৃণমূল।
সূত্রের খবর, এই দুই বিধায়কের বক্তব্যে অত্যন্ত বিরক্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪) একাধিক নেতার ছবি দিয়ে দলীয় কর্মসূচির ব্যানার যেন কোনওভাবেই “যাত্রার পোস্টার” না হয়ে যায়। এ ব্যাপারে শাসকদল বলেছে, রাজ্যগত ভাবে যে ডিজাইন পাঠানো হবে তাই ছাপাতে হবে।
৫)বুথ পিছু দুটি করে দেওয়াল লিখন, পথসভা ইত্যাদি করতে বলা হয়েছে।
৬) রোজ কোথায় কী কর্মসূচি হচ্ছে তা জেলা সভাপতিকে পাঠাতে হবে।