আজ খবর ডেস্ক:
সব স্বপ্ন আলো হয়ে ফোটে না! আবার হঠাৎ করেই কিছু স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায়। ঠিক যেমন হল, হাওড়া দেউলপুরের অচিন্ত্য’র।
কমনওয়েলথ গেমসে (CWG 2022) দেশের তৃতীয় সোনা এল বাংলার এই ছেলের হাত ধরে৷
বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথ গেমসের মঞ্চে ভারতকে (India) গর্বে ভরিয়ে দিলেন বাংলার (Bengal) ছেলে। ভারোত্তলনে (Weighlifting) ছেলেদের ৭৩ কেজি বিভাগে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন অচিন্ত্য শিউলি (Achinta Sheuli)।


স্ন্যাচ বিভাগে ১৪৩ কেজি ওজন তুলেছেন। পাশাপাশি ক্লিন অ্যান্ড জার্ক বিভাগে তিনি ১৭০ কেজি ওজন তুলে দেশের হয়ে এক নয়া ইতিহাস রচনা করেছেন। মোট ৩১৩ কেজি ওজন তুলে সোনার হাসি হেসেছেন প্রত্যন্ত দেউলপুরের অচিন্ত্য।

প্রথম স্ন্যাচ পর্বে ১৩৭ কেজি, দ্বিতীয়টিতে ১৪০এবং তৃতীয়টিতে ১৪৩ ওজন তোলেন। যায়নি। এই পর্বে শীর্ষে অবস্থান, তাঁকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে “ক্লিন অ্যান্ড জার্ক” বিভাগের জন্য।
” ক্লিন ও জার্ক” বিভাগে প্রথম চেষ্টায় ১৬৬ কেজি তোলেন৷ দ্বিতীয় চেষ্টায় তাঁর টার্গেট ছিল ১৭০কেজি৷ কিন্তু তিনি তুলতে পারেননি, তবে চেষ্টা ছাড়েননি৷ তৃতীয়বারেও তিনি ১৭০ কেজিই ট্রাই করেন৷
ইতিমধ্যেই অচিন্ত্য’র এই সাফল্যের খবর বাংলার এবং দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।


টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)।
সবার মনে তবু এখন একটাই প্রশ্ন। এই সাফল্য কতটা পাল্টে দেবে ২০ বছরের এই যুবকের দৈনন্দিন জীবন?
প্রশ্ন যখন উঠছে তখন একবার দেখে নেওয়া যাক, বার্মিংহামে প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগের দিনগুলো কেমন কাটিয়েছিলেন অচিন্ত্য?

হাওড়া থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা বাসে চেপে পৌঁছতে হয় দেউলপুর গ্রামে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। মজার কথা হল, সোনার ছেলে অচিন্ত্য’র ছোটবেলা ভারোত্তোলনের ​​প্রতি বিশেষ কোনও আগ্রহ ছিল না। দাদা আগ্রহ যুগিয়ে গেছেন বরাবর। সেই অনুপ্রেরণায় আজ তিনি বাংলা পেরিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে দেশকে গর্বিত করেছেন সোনা জিতে। দাদা অলোককেই তাঁর সোনার পদক উৎসর্গ করেছেন অচিন্ত্য।
ছোট থেকেই লড়াই করেছেন দারিদ্রের সঙ্গে। অচিন্ত্য’র বাবা ভ্যান রিকশা চালাতেন।


৯ বছর আগেই তিনি মারা যান। কার্যত নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারের হাল ধরেন অচিন্ত্য’র দাদা অলোক।
যাই হোক, ভাইয়ের খেলা বন্ধ হতে দেননি তিনি। ভাইয়ের জন্য নিজে খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
বাবা মারা যেতে মা কোনও মতে জরির কাজ করে সংসার চালাতেন। তাঁর সাপ্তাহিক আয় খুব বেশি হলে ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। মাকে সাাহায্য করতে দুই ভাইও জরির কাজ করতেন। সেই টাকাতেই চলত সংসার।

রেকর্ড করে সোনা জেতার পরে অচিন্ত্য বলেছেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে দাদাই আমার জন্য সব কিছু করেছে। আর তাই এই পুরস্কার আমি আমার দাদা এবং কোচকে উৎসর্গ করতে চাই। দাদা নিজে ওয়েট লিফটিং করত। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে ও ছেড়ে দেয়।”
এর আগে অচিন্ত্যর দাদা অলোক শিউলি বলেছিলেন, “পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপের জন্য আমরা দুই ভাই পড়াশুনার পাশাপাশি জরির কাজ করতাম। ২০১০ সালে আমি ভারোত্তোলন প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করার পর ২০১১ সাল থেকে ভাইকে সেখানে নিয়ে যাই। ২০১৩ সালে আমরা দুই ভাই একসঙ্গে ন্যাশানাল ভারোত্তলক প্রতিযোগিতায় অংশও নিয়েছিলাম।”

রবিবার মাঝরাতের পর থেকে হাওড়ার দেউলপুর গ্রামের অচিন্ত্যকে চিনে গেছে গোটা দেশ। তবে কমনওয়েলথে সোনা জিতেও খুশি হতে পারেননি অচিন্ত্য। তাঁর দাবি, “এই লড়াইটা ছিল আমার নিজের সঙ্গে। সোনা জিততে আমি আসিনি। এসেছিলাম নিজের রেকর্ডটা টপকে যেতে। চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটা আর করতে পারলাম না। তাই খানিকটা খারাপই লাগছে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *