আজ খবর ডেস্ক:
প্রবাদ প্রতিম কমিউনিস্ট নেতা মুজফ্ফর আহমেদের (Muzaffar Ahmed) ১৩৪তম জন্মশতবার্ষিকী আজ। সেই উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এবারও প্রগতিশীল সাহিত্য কর্ম কে পুরস্কৃত করা হবে।
মুজফফর আহমেদ ট্রাস্ট স্মৃতি (Muzaffar Ahmed Trust Prize) এই পুরস্কার দেয়।
মূলত, সিপিএমই এই ট্রাস্ট পরিচালনা করে। দীর্ঘদিন এই ট্রাস্টের সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এবার বিশেষ সম্মান সূচক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে (Amartya Sen)।


জানা গিয়েছে, এই সম্মান গ্রহণের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন অমর্ত্য কন্যা অন্তরা দেব সেন। শুক্রবার বিকেলে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে (PDG Bhawan) এই কর্মসূচি হবে।
প্রবীণ অর্থনীতিবিদ এই মুহূর্তে দেশের বাইরে। তাই সশরীরে উপস্থিত থাকছেন না। তাঁর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করবেন প্রতীচী ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর মানবী মজুমদার।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন শুক্রবার কলকাতায় তাঁর বই, “হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: অ্যা মেমোয়ার”- এর জন্য মুজাফফর আহমেদ মেমোরিয়াল পুরস্কার পাছেন। প্রসঙ্গত, ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মুজাফফর আহমদের ১৩৪তম জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে।


পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বইটি একটি মাস্টারপিস যা ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বর্তমান সঙ্কটগুলি কে তুলে ধরে। যেখানে সাম্প্রদায়িকতার দাগ সর্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। মা সামরিক শাসনের অধীনে রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিপীড়ন – এই সমস্ত বিষয়গুলি এই বইতে স্থান পেয়েছে।

তবে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে অন্য জায়গায়। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই অমর্ত্য সেন সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার গ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছিলেন।


তার অব্যবহিত আগেই সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী রাজ্যের বৃদ্ধজনদের উদ্দেশ্যে একটি আবেদন রেখেছিলেন। যাতে বলা হয়েছিল, রাজ্যজুড়ে সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে যে দুর্নীতি ঘটেছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের দেওয়া পুরস্কার যেন কেউ গ্রহণ না করেন। যদিও অমর্ত্য সেন বাদ দিয়ে বাকি পুরস্কার প্রাপকরা সকলেই “বঙ্গভূষণ” ও “বঙ্গবিভূষণ” পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে এসে।


সে সময় অমর্ত্য সেনের এই পদক্ষেপকে বাহবা দিয়েছিলেন বামপন্থী নেতৃত্ব।
প্রগতিশীল সাহিত্যকে উৎসাহিত করার জন্য মুজাফফর আহমেদের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এবং প্রতি বছর দেওয়া হয়।

শুক্রবার বিকেলে কলকাতার মহাজাতি সদনে আরও ৩জন প্রাপকের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে — কৌশিক চট্টোপাধ্যায় (বাংলায়, একুশ শতকে মার্কসীয় সমাজতত্ত্ব) নেহাল আহমেদ (ইংরেজিতে, জামিয়া থেকে শাহিনবাগ পর্যন্ত কিছুই ভুলে যাবেন না) এবং শম্পা সেন (বং থিয়েটার ইশতেহার থেকে বাজার)।
গত বছর, স্নিগ্ধেদু ভট্টাচার্য এবং মধুশ্রী বন্দ্যপাধ্যায় এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।
মুজাফফর আহমেদের মৃত্যু হয় ১৯৭৩ সালে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং দেশে প্রগতিশীল সাহিত্য প্রকাশের জন্য প্রথম পার্টি প্রিন্টিং প্রেস স্থাপনের সাথে যুক্ত ছিলেন। দেশের প্রথম সিপিআই(এম) মুখপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

নোবেল জয়ী আরেক বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রীকে চলতি বছরের “বঙ্গবিভূষণ” সম্মানে ভূষিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। অর্থনীতিবিদ এবং তাঁর স্ত্রী সেখানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা মঞ্চে এসে সেই পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, প্রভূত সুখ্যাতি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজনৈতিক মহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল সরকারের সম্মান নিতে অস্বীকার করাতেই কি অমর্ত্য সেনকে পুরস্কার দিচ্ছে সিপিএম?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *