আজ খবর ডেস্ক:

আপডেট: গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারি এড়াতে এবার নয়া কৌশল। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল। সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করছেন তাঁর আইনজীবী। আবেদনের মূল বার্তা, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক কিন্তু গ্রেপ্তার নয়।
পাশাপাশি, নিজের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল এ বার বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হলেন। অর্শ এবং ফিশচুলার সমস্যার সমাধান করতে অনুব্রত অস্ত্রোপচার করানোর আর্জি জানালেন শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার মলয় পীঠকে বাড়িতে ডেকে পাঠান অনুব্রত। বেলা ১২টার কিছু পরে মলয় যান অনুব্রতর বাড়িতে। আধ ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তিনি।

কথা ছিল, বুধবার নিজাম প্যালেসে হাজির না হলে কড়া ব্যবস্থা নেবে সিবিআই (CBI)। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার এই হুঁশিয়ারিকে আদৌ পাত্তা দিলেন না বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি।
গরু পাচার মামলায় এদিন আবার সিবিআইয়ের তলব এড়ালেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। আইনজীবীর মারফত চিঠি পাঠিয়ে সিবিআইকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন বীরভূমের এই দাপুটে তৃণমূল নেতা।


এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্য রাজনীতিতে আপাতত চর্চার বিষয়, এবার কী করবে সিবিআই?
অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হচ্ছে, মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, চাপ নিয়েই বোলপুরের বাড়ি থেকে কলকাতার চিনার পার্ক এবং এসএসকেএম হাসপাতাল (SSKM) হয়ে ফের বোলপুরে! ২দিনে প্রায় ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়েছেন গাড়িতে। তাতে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। স্ট্রেস আরও বেড়েছে। এর মধ্যে সিবিআইয়ের এই দশম নোটিশ। তিনি রীতিমত বিপর্যস্ত। সূত্রের খবর, সিবিআই কে দেওয়া আজকের বার্তায় অনুব্রত এমনটাই জানিয়েছেন।

সূত্রের খবর, শারীরিক অবস্থার কারণ দেখিয়েই এদিনের হাজিরা এড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। চিঠির সঙ্গে তাঁর চিকিত্‍সা সংক্রান্ত নথিও জমা দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
চিঠিতে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি দাবি করেছেন, তিনি অসুস্থ। “বেড রেস্টে” আছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বোলপুরের চিকিৎসক ও এসএসকেএমের প্রেসক্রিপশন পেশ করেছেন। ২টি প্রেসক্রিপশন পাঠিয়েছেন অনুব্রত।

এদিকে এসএসকেএম থেকে প্রথম দফায় অনুব্রতকে বাড়ি পাঠিয়ে যে প্রশংসা করিয়েছিলেন সরকারি চিকিৎসকরা, গতকাল থেকে তা আবার ধুলোয় মিশেছে। অভিযোগ উঠেছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
যদিও অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা করে আসা সরকারি চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, তিনি যতোটুকু যা করেছেন পুরোটাই সুপারের নির্দেশে।


এমনকি, তাঁর এ-ও দাবি, অনুব্রতকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সুপারই তাঁকে বলেন, নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখে আসতে।
যা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। বিরোধীদের প্রশ্ন, অনুব্রত কোনও মন্ত্রী বা বিধায়ক নন, তাহলে মেডিক্যাল টিম নিয়ে তাঁর বাড়িতে কেন গেলেন সরকারি চিকিৎসকেরা?

সৌজন্য: সমাজ মাধ্যম

এদিকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু কার্যত “ভ্যানিশ”। হাসপাতালে তিনি অনুপস্থিত, আবার ফোন সুইচড অফ।
ডেপুটি সুপারের বক্তব্য, তিনিও জানেন না সুপার এই মুহূর্তে কোথায়!
মঙ্গলবার অনুব্রত কে দেখতে রীতিমতো একটি মেডিকেল টিম নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী।
রাতেই সামনে আসে চন্দ্রনাথের স্বীকারোক্তি। যা রীতিমত চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

ডাঃ চন্দ্রনাথ অধিকারী


তিনি জানান, সেখানে ‘রোগী’ অনুব্রত নিজেই তাঁকে বলেন ১৪ দিনের ‘বেড রেস্ট’ লিখে দিতে। আর সেটাও কোনও ডাক্তারি প্যাডে নয়, একটি সাদা কাগজে লিখতে হয়েছে। এবং এই পুরো কাজই হাসপাতালের সুপারের নির্দেশে করতে হয়েছে।


এদিকে, বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু গত শনিবার থেকে ছুটিতে রয়েছেন। ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে অধস্তনকে এমন নির্দেশ দিতে পারেন তিনি? এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
একাংশের মতে, এর ফলে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে এই দুই চিকিৎসকের ওপরে।
ফলে সবমিলিয়ে একদিকে যেমন বিতর্কে সরকারি চিকিৎসকদের ভূমিকা, অন্যদিকে এদিন হাজিরা এড়ানোর পরে সিবিআই কি করে সেদিকে ও নজর রয়েছে সকলের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *