আজ খবর ডেস্ক:

আপডেট: কয়লা ও গরু পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের রাজ্যের ৮ আই পি এস অফিসার কে দিল্লীর ইডির সদর দপ্তর হাজিরার নির্দেশ ৩১ আগস্টের মধ্যে। হাজিরা না দিলে ক্যাডার কোড বাতিলের ভাবনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।


এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) কয়লা চোরাচালানের মামলায় পশ্চিমবঙ্গে নিযুক্ত ৭ আইপিএস অফিসারকে (IPS Officer) তলব করেছে বলে খবর।
সূত্রের দাবি, সরকারী গাড়িতে নগদ অর্থ এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরানোর কাজে কয়েকজন পুলিশ কর্তা জড়িত ছিলেন।
আইপিএস অফিসার
১) জ্ঞানবন্ত সিং (এডিজি, সিআইডি),
২) কোটেশ্বর রাও (এসপি, ডব্লিউবি),
৩) এস সেলভামুরুগান (এসপি, পুরুলিয়া),
৪) শ্যাম সিং (ডিআইজি, মেদিনীপুর রেঞ্জ),
৫) রাজীব মিশ্র (এডিজি এবং আইজিপি, পরিকল্পনা),
৬) সুকেশ কুমার জৈন (সাইবার, সিআইডি),
৭) তথাগত বসু (এসপি, ডব্লিউবি)

৮) ভাস্কর মুখার্জি (এসপি, ডব্লিউ বি)
আইপিএস অফিসারদের ইডি জুলাই এবং আগস্টে বিভিন্ন তারিখে তদন্তে যোগ দিতে বলেছে। এই আইপিএস অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ ২৬শে জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগস্ট পর্যন্ত দফায় দফায় চলবে বলে জানা গেছে।

কয়লা চুরি মামলায় সিআইডির (CID) অতিরিক্ত মহাপরিচালক জ্ঞানবন্ত সিংকে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের (PMLA) অধীনে মামলার অর্থ পাচারের দিকটি তদন্ত করছে।

জ্ঞানবন্ত সিং


জ্ঞানবন্তকে এর আগেও একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে তলব করেছে ইডি। এর আগে, কেন্দ্রীয় সংস্থা তাঁকে তৎকালীন ADG (আইন শৃঙ্খলা) হিসাবে তাঁর ভূমিকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ১৯৯৩-ব্যাচের আইপিএস অফিসার জ্ঞানবন্ত সিং ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের ADG (আইন ও শৃঙ্খলা) ছিলেন।
ইডি সূত্রে দাবি, সংস্থার কর্মকর্তারা নতুন কিছু লিড অনুসরণ করে আবার তাঁর বিবৃতি রেকর্ড করতে চান। কয়লা পাচার কাণ্ডে অনুপ মাঝি ওরফে লালার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং লালা ঘনিষ্ঠ কয়েকজনেরবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। সেখান থেকেই পাওয়া গিয়েছে নতুন বেশ কিছু তথ্যসূত্র।

রাজীব মিশ্র

ইডি মারফত আরও জানা গেছে, তলব করা আইপিএস অফিসারদের মধ্যে কয়েকজনকে সেইসব এলাকায় নিযুক্ত করা হয়েছিল, যেখানে অবৈধ কয়লা খাদান আছে এবং ওই সব এলাকা থেকেই পরে চোরাচালানের অভিযোগ উঠেছে।
ইডির তদন্ত ইঙ্গিত দেয় যে আইপিএস অফিসাররা কয়লা চোরাচালান র‌্যাকেট সম্পর্কে অবগত ছিলেন, কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে বা আইনিভাবে তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেন নি।
শুধু প্রথম সারির এই পুলিশ কর্তারাই নন, সঙ্গে আছে ৩ জন আইএএসের (IAS) নামও। ইডি সূত্রের খবর, ১৫ আগস্টের পরেই দিল্লিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁদের।

শ্যাম সিং

উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই পুলিশকর্তাদের সকলেই কোনও না কোনও সময় আসানসোল, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় কর্মরত ছিলেন। এবং পশ্চিমবঙ্গে কয়লাপাচার মামলার মূল জায়গা এই অঞ্চলগুলিই। 
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা মাফিয়াদের জেরা করেই এই আইপিএস অফিসারদের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। সেই সূত্র ধরেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। উল্লেখযোগ্য, অতীতে জ্ঞানবন্ত সিং ছাড়াও দিল্লিতে ডাকা হয়েছিল আইপিএস অফিসার সুকেশ জৈনকে।
ইডি এবং সিবিআই (CBI) কয়লা ও গরু পাচার মামলায় অতীতে বারবার আদালতে বলেছিল, পাচারকারী, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ এবং ইসিএল ও বিএসএফের বোঝাপড়া ছাড়া দিনের পর দিন এই কাজ চলতে পারে না।
এই আইপিএস অফিসারদের মধ্যে কয়েকজন সম্প্রতি পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া এবং মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বে রয়েছেন।

সূত্রের খবর, সিবিআই, প্রাথমিকভাবে দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশ থেকে কয়েকশ কোটি টাকার কয়লা পাচারের অভিযোগ পেয়েছে এবং তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই এই আইপিএস অফিসারদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মে মাসে সিবিআই অফিসারদের একটি দল নিজাম প্যালেসে জ্ঞানবন্ত সিংকে জেরা করেছিল। সিবিআই অফিসাররা তখন দাবি দিয়েছিলেন, জ্ঞানবন্ত সিং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকাকালীন বেশিরভাগ চুরি হয়েছিল।
এমনকি সিবিআই অফিসাররা এও বলেছিলেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকার আগে জ্ঞানবন্ত সিং রাজ্যের পশ্চিম অঞ্চলেরও দায়িত্বে ছিলেন। এইসব অঞ্চলে থাকা একা একাধিক কোলিয়ারি থেকে কয়লা চুরির অভিযোগ উঠেছিল অতীতে। যা তদন্তের সময় ইডি ও সিবিআই, দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাই অনুপ মাঝি ওরফে লালার বেশ কয়েকটি ঠিকানায় অনুসন্ধান করেছে।

অনুপ মাঝি

গত জুন মাসে, ইডি-র আধিকারিকদের একটি দল কিছু নথির সন্ধানে পুরুলিয়ায় অনুপ মাঝির পৈতৃক বাড়িতে গিয়েছিল।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, রাজ্যের আইপিএসদের একাংশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *