আজ খবর ডেস্ক:
আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তি (TMC Leaders Property) মামলায় সোমবার বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta HighCourt)। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নেতা মন্ত্রীদের সম্পত্তি কীভাবে ও কী হারে বেড়েছে তা খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে।


এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ED) এই বিষয়ে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই মামলায় এবার তদন্ত করবে ইডি।

ওই ১৯ জন হলেন, রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক, জাভেদ আহমেদ খান, অরূপ রায়, অর্জুন সিং, সব্যাসাচী দত্ত, শিউলি সাহা, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম দেব, ইকবাল আহমেদ ও স্বর্ণকমল সাহা।


তালিকায় তৃণমূলের দুই প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাধন পাণ্ডের নামও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার নাম।
মন্ত্রী নেতাদের আয়ের অতিরিক্ত সম্পত্তি নিয়ে এর আগে একটি মামলা করেছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। বর্তমান মামলাটি করেছেন বিপ্লব কুমার চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। নিজের পরিচয় দিয়েছেন সমাজকর্মী হিসেবে।

সোমবার এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। জবাবে তিনি বলেছেন, তাঁর সম্পত্তির হিসাবে অস্বাভাবিকতা পেলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
ব্রাত্য বসু এদিন বিকাশ ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমি তিনবার ভোটে দাঁড়িয়েছি। নির্বাচন কমিশনে হলফনামা দিয়েছি। যদি কোনও অস্বাভাবিকতা পান তাহলে রাজনীতি থেকে সরে যাব।”


প্রসঙ্গত, ব্রাত্য বসু বাংলার অধ্যাপক। সিনেমা পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন। তাঁর আয়ের একাধিক উৎস রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সে ব্যাপারেই মামলা দায়ের হয়েছিল আদালতে।

অন্য কোনও মন্ত্রী বা নেতা এদিন এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেননি।
তবে উত্তরবঙ্গের নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, “যা বলার আদালতেই বলব।”
২০১১ বিধানসভা ভোটে জিতে গৌতম দেব উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন ও পর্যটনমন্ত্রী হয়েছিলেন।


গৌতম দেব বলেছেন, “আমি আইনজীবী মহল থেকে এসেছি। আমার বাবা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি আইনজীবী পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা আছে, আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আছেন। প্রধান বিচারপতি আজ কিছু পর্যবেক্ষণ রেখেছেন। সেটা নিয়ে কিছু বলব না। আদালতে এর উত্তর দেব এবং মামলাকে মামলার মত লড়ব।”
এই মামলার মূল বক্তব্য , ২০১১ সালের হলফনামা আর ২০১৬ সালের হলফনামায় আয়, সম্পত্তির পরিমাণের বিপুল বদল হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে তা হাজার গুণ পর্যন্ত বেশি বলে আদালতে উল্লেখ করেছেন মামলাকারীর আইনজীবী।

পাল্টা এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, জনস্বার্থেই কি নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি ইডিকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোনও রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে? দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি দলেরই নেতা-মন্ত্রীদের নামের তালিকা কেন দেওয়া হল?


তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা এই ব্যাপারগুলির ঘটাচ্ছেন, তাঁদের ভাবতে হবে এটাকে একটা সার্বিক চেহারা দেওয়া দরকার নাকি বেছে বেছে ব্যাপারগুলো করা দরকার। ২০১১ সাল এবং ২০১৬ সালের হলফনামা মিলিয়ে সম্পত্তির হ্রাসবৃদ্ধির হিসেব শুধু একটি দলের বিরুদ্ধে কেন, সারা ভারতবর্ষে সমস্ত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে হোক, বিজেপির হোক, কংগ্রেসের হোক, সমাজবাদী পার্টির হোক, যত পার্টি আছে, সবার হোক। তবেই বুঝব জনস্বার্থে মামলা হয়েছে।’’ এর পরই সুখেন্দুর সংযোজন, ‘‘কিন্তু এর সঙ্গে যদি বিশেষ কোনও রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকে, তবে আমার মনে হয় একে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *