আজ খবর ডেস্ক:

আপডেট: এই প্রতিবেদন লেখা চলাকালীন, নিজের ফেসবুক প্রোফাইল লক করে দিলেন চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী।

গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ শিরোনামে বোলপুরের ডাক্তারবাবু। চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী (Chandranath Adhikary) নিজেই নিজের “মেরুদন্ড” প্রসঙ্গে একাধিক পোস্ট করেছেন সমাজ মাধ্যমে। এবার একদিকে যেমন এই চিকিৎসকের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠল অন্যদিকে, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তারির পর তাঁর বাড়িতে পৌঁছল সিবিআই (CBI)।


জানা গিয়েছে, বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও সংগ্রহ করতেই ডাঃ অধিকারীর বাড়িতে যান কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) এসএসকেএম (SSKM) থেকে বোলপুরে ফেরার পরই তাঁর বাড়িতে গিয়ে চেকআপ করেন বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। তারপরই কার্যত বোমা ফাটিয়েছিলেন। সেই থেকে চর্চায় চিকিৎসক।

রাজ্যজুড়ে যখন এই চিকিৎসকের নামে সুখ্যাতি,
ঠিক তখনই শুক্রবার সকালে হঠাৎ চন্দ্রনাথ অধিকারীর বাড়িতে যায় সিবিআইয়ের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সেই সময় বাড়িতেই ছিলেন ওই চিকিৎসক। খবর পাওয়া কাছে, প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁর বাড়িতে ছিল সিবিআই টিম।
ওই চিকিৎসকের বয়ান রেকর্ড করার পাশাপাশি বোলপুর হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথোপকথনের অডিও সিবিআই সংগ্রহ করেছে। বোলপুর হাসপাতালের সুপার ডাঃ বুদ্ধদেব মুর্মুকে সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছে বলেও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।

গত মঙ্গলবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এবং পুরুষ নার্স মিলিয়ে পাঁচ জনের একটি দল গিয়েছিল তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে। ঠিক তার পর দিন, অর্থাৎ বুধবার গরুপাচার মামলায় (Cattle Smuggling Case) সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অনুব্রতর। যদিও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুব্রত ওই সমন শেষ পর্যন্ত এড়িয়ে যান। কিন্তু তাঁর বাড়িতে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক দল যাওয়া নিয়ে রাজ্য জুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়।


সেই দলেরই নেতৃত্বে ছিলেন চন্দ্রনাথ। যিনি দাবি করেছেন, অনুব্রতই তাঁকে সাদা কাগজে ১৪ দিনের ‘বেড রেস্ট’ লিখে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি সেইমত লিখেও দেন
কিন্তু পরে তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘সত্য’ বলেন। জানান, তাঁর ওপর ‘চাপ’ তৈরি করা হয়েছিল। তাঁকে ‘ফাঁসানোর’-ও চেষ্টা হয়েছিল। রাজ্যের শাসকদলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার ‘অনুরোধ’, সরকারি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘নির্দেশ’ উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি।

বুধবার সংবাদমাধ্যমের সামনে চন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স- সবেতেই স্ট্যান্ড করেছি। কলকাতা মেডিকেলে এমবিবিএস পড়েছি৷ কোনওদিন নিজের মেরুদণ্ড বাঁকতে দেব না।”
উল্লেখ্য, মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হয়েছিলেন চন্দ্রনাথ অধিকারী৷ উচ্চ মাধ্যমিকে গোটা রাজ্যে প্রথম স্থান দখল করেন৷ জয়েন্ট এন্ট্রান্সেও গোটা রাজ্যে ক্রমতালিকায় তাঁর স্থান ছিল ২২৷ পরবর্তী সময়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে সার্জারিতে স্নাতকোত্তর।
গত প্রায় ৬ বছর বোলপুরের হাসপাতালে কর্মরত।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ নাগাদ ফেসবুকে চন্দ্রনাথ পোস্ট করেন, ‘আই অ্যাম টায়ার্ড, নিড সায়লেন্স অ্যান্ড পিস’। অর্থাৎ, ‘আমি ক্লান্ত, নৈঃশব্দ্য এবং শান্তি চাই।’ বুধবারেই চন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমি যেটা বলতে পারিনি, সেটা এখন বলছি। আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে।’’

গতকাল রাত থেকেই একের পর এক সামনে আসতে থাকে চিকিৎসকেন্দ্রনাথ অধিকারীর করা ফেসবুক পোস্ট। পরক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই পোস্টগুলো প্রকাশ্যে এনে কি অন্যরকম কিছু বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
ফেসবুকে করা চন্দনাথ অধিকারীর একাধিক পোস্টে কোথাও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সম্পর্কে মন্তব্য রয়েছে, কোথাও “আবার বাংলা বলছে বিজেপি আসছে” নামে একটি গ্রুপের পোস্ট শেয়ার করেছেন এই চিকিৎসক। এমনকি “মোদি আর্মি” নামে একটি প্রাইভেট গ্রুপের পোস্ট ও শেয়ার করেছেন তিনি।


আর এর পরেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী কি তৃণমূল বিরোধী? তিনি কি আসলে বিজেপি ঘনিষ্ঠ? সে কারণেই কি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি থেকে বেরিয়েই সমাজ মাধ্যমে ওই পোস্ট করেছিলেন?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *