আজ খবর ডেস্ক:
প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা (Rohingya)। আর তাই নিয়ে এবার সরাসরি মতপার্থক্য কেন্দ্রের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রীর মধ্যে। একদিকে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি (Hardeep Singh Puri) আর অন্যদিকে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)।
সকাল থেকে দফায় দফায় টুইট যুদ্ধ চলছে দুই দপ্তরের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বুধবার বলেন, সমস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লির বক্করওয়ালায় EWS ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত করা হবে । এর কয়েক ঘণ্টা পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কার্যালয় কেন্দ্রের এই ধরনের কোনও পদক্ষেপকে অস্বীকার করে একটি বিবৃতি জারি করেছে।

মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আবাসন ও নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে ট্যুইট করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। এই ট্যুইটের কয়েক ঘণ্টা পরেই মন্ত্রীর নিজের সরকারই তাঁর বিবৃতির বিরোধিতা করে জানাল, “অবৈধ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের” জন্য এই ধরণের কোনও সুবিধা ঘোষণা করা হয়নি।
“যারা ভারতের শরণার্থী নীতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে CAA (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন)-এর সঙ্গে যুক্ত করে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে তারা হতাশ হবে। ভারত জাতিসংঘের উদ্বাস্তু কনভেনশন ১৯৫১ কে সম্মান ও অনুসরণ করে এবং জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আশ্রয় দেয়”। টুইটে লিখেছিলেন হরদীপ সিং পুরি।

বস্তুত, রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারতে মেরুকরণের অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি (BJP) নেতারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোট নিশ্চিত করতে প্রায়ই রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির নেতারাও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেই মন্তব্য করেছেন।
এ কথা জানিয়ে রাখা ভাল যে, শরণার্থী অধিকার এবং তাঁদের সুরক্ষার জন্য দেশগুলির মধ্যে নীতি নির্ধারকের কাজ করে জাতিসংঘ (United Nations)। জাতিসংঘের কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ভারত।

প্রাক্তন কূটনীতিক, হরদীপ পুরী আবাসন, নগর বিষয়ক, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মন্ত্রী। অমিত শাহের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তিনটি ট্যুইটকে অনুসরণ করেই নিজে ট্যুইট করেছিলেন হরদীপ। উল্লেখ্য, অতীতে অবৈধ শরণার্থীদের ‘উইপোকা’ বলে অভিহিত করেছিলেন অমিত শাহ।
এর আগে মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মায়ানমার থেকে আসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ফের দেশেই ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। কয়েক বছর ধরে নিজেদের জন্মভূমিতে নিপীড়ন ও হিংসা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) নতুন দিল্লির বক্করওয়ালায় রোহিঙ্গা অবৈধ অভিবাসীদের EWS ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য কোনও নির্দেশ দেয়নি,” স্পষ্ট জানানো হয়েছে অমিত শাহের অফিস থেকে।


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আরেকটি টুইটে বলা হয়েছে, “অবৈধ বিদেশীদের আইন অনুযায়ী তাদের নির্বাসন না হওয়া পর্যন্ত ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে। দিল্লি সরকার বর্তমান স্থানটিকে ডিটেনশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করেনি। তাদের অবিলম্বে একই কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,”।
এর আগে বুধবার সকালে, পুরী ঘোষণা করেছিলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের EWS ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত করা হবে এবং পুলিশ সুরক্ষা প্রদান করা হবে। “ভারত সবসময় তাদের স্বাগত জানিয়েছে যারা দেশে আশ্রয় চেয়েছে। একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে সমস্ত #রোহিঙ্গা #শরণার্থীদের দিল্লির বক্করওয়ালা এলাকার EWS ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত করা হবে। তাদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা, ইউএনএইচসিআর আইডি এবং সার্বক্ষণিক @DelhiPolice সুরক্ষা প্রদান করা হবে, ”পুরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অফিসকে ট্যাগ করে সকাল ৭.৩০ টার দিকে টুইট করেছেন ।

কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রীর টুইটের প্রায় পাঁচ ঘন্টা পরে পরপর টুইট করতে থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর মধ্যে চলতে থাকা মতপার্থক্য কার্যত প্রকাশ্যে চলে আসে।
পুরো ঘটনা ঘিরে যে মোদি সরকার যথেষ্ট বিব্রত তা ইতিমধ্যেই সামনে চলে এসেছে। বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী টুইটে আক্রমণ করেছেন হরদীপ সিং পুরিকে। আবার সমাজবাদী পার্টির (SP) পক্ষ থেকেও কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে এই ইস্যুতে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *