আজ খবর ডেস্ক:
তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। প্রাক্তন এই রাজ্যসভা সাংসদ “সারদা” কাণ্ডে হাজত বাস করেছেন এক সময়ে। তবে এখন তিনি তৃণমূলে গুরুত্বপূর্ণ একজন পদাধিকারী।
রাজ্যজুড়ে সাম্প্রতিক চলতে থাকা নানান রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে শনিবাসরীয় বিকেল ও সন্ধে যে বেশ জমাটি কাটলো এই নেতার, তা বলাই বাহুল্য।


যদিও দিন কয়েক আগেই দলের নির্দেশে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন কুনাল। ইডি, সিবিআই (ED/CBI) সহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও মুখ খোলেননি। সেই পর্ব কাটিয়ে শনিবার বিকেলেই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন কুণাল। যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) মন্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে কুনাল বলেন, “দল এর দায় নেবে না”।
আর তারপরেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে যান কুনাল ঘোষ। উপলক্ষ ছিল, কুনালের নতুন বই প্রকাশ। অভিষেকের হাতে হাত দিয়ে উদ্বোধন হল উপন্যাস সমগ্র প্রথম খন্ডের। তারপরেই হাসিমুখে কুনালের মুখে কেকের টুকরো গুঁজে দিলেন অভিষেক। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সমাজমাধ্যমে যে ছবি ভাইরাল।

রাজনৈতিক মহলের মতে এই মুহূর্তে রাজ্যের শাসক দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাই গোটা বিষয়টিকে নিছক একটি বই প্রকাশ এবং কেক খাইয়ে উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথাও তাঁরা বলছেন, বিকেলের সাংবাদিক সম্মেলনে ববিকে (ফিরহাদ হাকিম) তোপ দাগার পুরস্কার পেলেন কুনাল।
তবে পুরোটা ভালো করে বোঝার জন্য দিন কয়েক পিছিয়ে যেতে হবে।
নারদকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari)। তাঁর বক্তব্য ছিল, “নারদকাণ্ড ষড়যন্ত্র, কোনও অপরাধ নয়।” এই নিয়ে বিভিন্ন সমীকরণ শুরু হয়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্য ঘিরে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। পরোক্ষে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমার একটা কেস হয়েছিল। সে জন্য আমি গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। কিন্তু, হাসপাতালে থাকিনি। আদালত বলেছিল তাই জেলেই ছিলাম। সেই কেসের ব্যাপারে যা বলার বিরোধী দলনেতাই বলে দিয়েছেন। আর রিপিট করব না।”
এরপরেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। তৃণমূল শিবিরে প্রশ্ন ওঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সহ গোটা তৃণমূল যখন শুভেন্দুকে “মীরজাফর” বলছে, তখন কেন শুভেন্দুর বক্তব্যকে সমর্থন জানালেন রাজ্যের এই সিনিয়র নেতা?

শনিবারের সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষকে ফিরহাদের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবে না। যিনি বলেছেন, কোন প্রেক্ষিতে বলেছেন, তিনি আরও ভাল বলতে পারবেন। CBI এবং ED-র ব্যবহার নিয়েও তিনি বিস্তারিত বলেছেন।”
প্রসঙ্গত ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই নারদ স্টিং অপারেশন প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ভিডিওতে সরকারের একাধিক মন্ত্রীকে টাকা নিতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে ফিরহাদ হাকিম অন্যতম।


বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন সেরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে যান কুনাল ঘোষ। সেখানে উদ্বোধন করা হয় কুণালের প্রথম উপন্যাস সমগ্র। ছিলেন রাজ্যের বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও।


বই প্রকাশের পর হুবহু বইয়ের আদলে বানানো কেক কাটা হয়। এরপরেই অভিষেক নিজের হাতে কেক খাইয়ে দেন কুনালকে।
নিজের ফেসবুক পেজে সেই ছবি শেয়ার করেছেন কুনাল।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে ফিরহাদ বলেন, “সামাজিক গ্লানি নিয়ে ভয় লাগে। সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। সামাজিক সম্মান চলে গেলে আর কীই বা থাকবে?”
সূত্রের খবর, তৃণমূলের অভিষেক ঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রশ্ন ছিল কেন ফিরহাদ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই কথা বারবার বলছেন? তাঁদের মতে,
ফিরহাদের এই কথায় আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট।
সে ক্ষেত্রে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, ফিরহাদের মন্তব্যে দলের সায় নেই বুঝিয়ে আসলে অভিষেকের মন জয় করেছেন কুনাল। তারপরেই সামাজিক মাধ্যমে কেক কাটার ছবি ভাইরাল হওয়া! দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন অনেকেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *