আজ খবর ডেস্ক:
একদিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি (SSC Scam) নিয়ে ইডি (ED)। অন্যদিকে, গরু পাচার (Cattle Smuggling Case) নিয়ে সিবিআই (CBI)। গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূলের (TMC) দুই দুঁদে নেতা।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে এই সব কিছু নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) গ্রেপ্তার হওয়ার পরে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ম্যান্টনে দলীয় সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু এদিনের মঞ্চ এবং মমতার বক্তব্য দুটোই কৌতূহলের বিষয় ছিল রাজনৈতিক মহলের কাছে। ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রথমবার পার্থর নাম মুখে আনলেন মমতা।


মেয়ো রোডের সভা থেকে এদিন নিজের এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) সম্পর্কেও একাধিক মন্তব্য করেন মমতা।
তবে অনুব্রত মণ্ডল ( Anubrata Mondal) অথবা ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) পাশে থাকলেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে যে তিনি সদয় নন, এদিন একাধিকবার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। টিএমসিপির সমাবেশে মমতা বলেন, “পার্থ চোর কিনা সেটা বিচার হবে। তাই বলে কেষ্ট চোর, ববিও চোর, অরূপও চোর, অভিষেকও চোর, মমতা ব্যানার্জিও চোর, মেয়ো রোডও চোর, রেড রোডও চোর? আর তোমরা সব সাধু?”

এর আগে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) ফ্ল্যাট থেকে যখন ৫০ কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, তখন বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এটা আসলে তৃণমূলের টাকা। এমনকি অভিযোগের আঙুল উঠেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও। সোমবার মমতা স্পষ্ট বললেন, তিনি ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটান। পরিবার তথা ভাই বোনেদের সম্পত্তি তাঁর নয়। তিনি একা।
এদিন বলেন, “আজ আমাকে একজন বলেছে, দিদি আপনার নামেও কেস করেছে। আপনার নাকি প্রপার্টি অনেক বেড়েছে! আমি তাঁকে বলেছি, এ সব গল্প কোথায় পায়?”


এরপরে রামায়ণের গল্প শুনিয়ে মমতা বলেন, “রাজা দশরথ একা ছিলেন। তাঁর চার ছেলে হয়। রাম বিয়ে করে, লক্ষ্ণণ বিয়ে করে। তাঁদেরও সন্তানাদি হয়। এভাবেই বংশ বাড়ে। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ২ বোন। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একমাত্র আমার কাছে ছিল। মাও মারা গিয়েছে। আমার ভাই বোনেরা সবাই নিজেদের মত আলাদা আলাদা থাকে। আমরা সম্পর্ক রাখি উৎসবে। রাখি বন্ধনের সম্পর্ক রাখি, ভাইফোঁটার সম্পর্ক রাখি, কালিপুজোর সম্পর্ক রাখি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন , এই কথার মধ্যে দিয়ে মমতা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁর ভাই কার্ত্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়দের যদি সম্পত্তি বেড়ে থাকে, তা হলে সেই বৃদ্ধিকে মমতার সম্পত্তি বৃদ্ধি হিসাবে দেখালে চলবে না।


তৃণমূল নেত্রী বলেন, “গত ১২ বছর প্রতিমাসে ১ লক্ষ টাকা করে আমার পেনশন পাওয়ার কথা ছিল। প্রাক্তন এমপি হিসাবে ওটা আমার প্রাপ্য। কিন্তু আমি পেনশন নিইনা। একবার হিসাব করে দেখুন ১২ বছরে কত টাকা হয়।” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সব খরচ খরচা, বেতন ইত্যাদি মিলিয়ে মাসে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আমার পাওয়ার কথা। কিন্তু এক পয়সাও আমি নিইনা। বাইরে গেলে এক কাপ চাও নিজের টাকায় খাই। যে বাড়িটায় থাকি, সেটাও ঠিকা শর্তে। আমরা আইনত প্রজা। ওটা রানী রাসমনির জমি।”
রীতিমত গর্জে উঠে মমতা বলেন, “কী ভেবেছে? পার্থ চ্যাটার্জির কেস হলেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবে, ববির ব্যাপার হলেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবে।”

বস্তুত এই মুহূর্তে রাজ্যের শাসকদলের যে ইমেজ দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশেই প্রশ্নের মুখে। পার্থ-অনুব্রত কাণ্ডে মমতার ব্যক্তিগত সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই কি নিজের নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে পাল্টা জবাব দিলেন মমতা?
তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন এও বলেন,
১) “এখনও কিছু প্রমাণ হয়নি, বিচার চলছে। কিন্তু বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।”
২) ”ইডি-সিবিআই-কে আমি সম্মান করি। কিন্তু কিছু কিছু ইডি-সিবিআই আধিকারিকও দুর্নীতিতে যুক্ত। আমাদের পুলিশকে দিল্লি কিছু করতে গেলে আইনি লড়াইয়ে যাব। আমরা খেয়াল রাখছি।”
৩) ”আমি রাজনীতিতে এসেছি সমাজসেবা করব বলে। কয়েকটা ভাড়া করা, চোর ধাপ্পাবাজ নেতাদের সাহায্যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের গায়ে কালি ছেটাচ্ছে।”
৪) বিজেপি দল এই আট বছরে দেশটাকে বারোটা বাজিয়েছে। কোটি কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের ভান্ডার ভরাচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে এদিন মমতা মূলত দলের তরুণ ব্রিগেডের সামনে দুটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
১) খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিরোধীদের কুৎসার পাল্টা জবাব দিতে হবে রাজনৈতিক ভাবে।
২) এখনও তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজই তাঁর রাজনীতির পুঁজি। সেটায় কেউ আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করতে হবে।
সেইসঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে বাম আমলের ৩৪ বছরকে এবং সিপিএমকে (CPIM) তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। তৃণমূলনেত্রী বলেন,”আমাদের দশ বছরে এক লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন। আর সিপিএম আমলে কী হয়েছিল? সেই তালিকা কোথায়? আলমারি কোথায় কমরেড? সিপিএম তো গোটা ৩৪ বছরটাই চুরি করে খেয়েছে!”

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘‘যতদূর দেখা যাচ্ছে কালো মাথা! বাংলার মানুষের এই সমর্থন অন্য কারও আছে? বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস একসঙ্গে নামলে তাদের ১০ গোলে দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেব।’’


তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশে এত ভিড় দেখে বিরোধীরা ফের অন্য কোনও প্রতিহিংসমূলক পরিকল্পনা নিতে পারে। এহেন আশঙ্কা প্রকাশ করে অভিষেক বলেন, ‘‘এই যে আজকে এত বড় সমাবেশ, আপনারা আমার কথা লিখে রাখুন, চার পাঁচ দিনের মধ্যে আবার কিছু একটা করবে।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *