আজ খবর ডেস্ক:
প্রথমে এসএসসি (SSC) দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)।
বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর বাদ পড়েছেন পরেশ অধিকারী, হুমায়ুন কবীর, সৌমেন মহাপাত্র, রত্না দে নাগ।
প্রসঙ্গত শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল পরেশ অধিকারীর। আদালতের নির্দেশে চাকরি খাওয়াতে হয় তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী কে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরে পরেশ অধিকারীর (Paresh Adhikari) মন্ত্রিত্ব ও যে আর থাকবে না, তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল।

কিন্তু চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বাকিদের মন্ত্রিত্ব হারানো নিয়ে।
মুখ্যমন্ত্রী যদিও বলেছিলেন বেশ কয়েকজনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে সংগঠনের কাজে লাগানো হবে। কিন্তু একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসছে এই সব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে।

হুমায়ূন কবীর
এতদিন রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবীর। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। তৃণমূল কংগ্রেস অন্তরে খবর, সেই সব কারণেই
হুমায়ুন কবীরকে (Humayun Kabir) মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এখন থেকে এই দপ্তরের নতুন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen)।
দল ও প্রশাসনে ইন্দ্রনীল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) দুজনেরই আস্থাভাজন বলে পরিচিত.

সদ্য প্রাক্তন চার মন্ত্রীর মধ্যে পরেশ অধিকারীর পরে সবথেকে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে
এক তরুণী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন যে, চাকরির দেওয়ার নামে প্রতারিত করা হয়েছে তাঁকে। অভিযোগকারিণী সবিতা লায়েক একজন স্নাতক।
তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের অস্থায়ী চাকরি দেওয়ার নামে তাঁকে দিয়ে কসবায় নিজের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করাতেন মন্ত্রী এবং তাঁর স্ত্রী। আরও অভিযোগ, “নিচু জাত” বলে নিয়মিত অপমান করা হতো তাঁকে।


সবিতা লিখিত অভিযোগে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করানো, কাপড় ধোয়ানো এমনকি কুকুরের মল পরিষ্কারের মত কাজও করানো হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে পান থেকে চুন খসলে তাঁকে জাত তুলে অপমানও করতেন মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী। অথচ সবিতা কারিগরি শিক্ষা দপ্তর থেকে বেতন পেতেন প্রতি মাসে।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় সবিতাকে। এর পরে কারিগরি শিক্ষা দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে ওই তরুণীকে জানানো হয়, তিনি নিজেই চাকরি ছেড়েছেন।
গত এপ্রিলে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর (CMO), রাজ্যপাল ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান সবিতা।
অভিযোগ ওঠার পরে হুমায়ুন কবীর স্বীকার করেন, সবিতা তাঁরই বাড়িতে থাকতেন। তবে তাঁর দাবি পরিচারিকার কাজ করানো হত না সবিতাকে দিয়ে। সবিতা ‘নন টেকনিক্যাল কনট্র্যাকচুয়াল ওয়ার্কার’ ছিলেন, তাই তাঁর বাড়ি ও অফিসের ব্যক্তিগত সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন।

স্কুল সার্ভিসে দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেছেন মমতা। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর নামও জড়িয়েছে দুর্নীতি কাণ্ডে। মেধা তালিকায় তাঁর ওপরে থাকা প্রার্থীকে টপকে চাকরি পেয়েছিলেন পরেশের মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট, সেই সঙ্গে পরেশের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর পরেশের মন্ত্রিত্ব যাওয়া নিয়ে সংশয়ের অবকাশ ছিল না।

বছর ঘুরলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফলে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনিতেই পূর্ব মেদিনীপুরে দিকে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী, দুপক্ষেরই “পাখির চোখ” রয়েছে।


শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলের অনেকে মনে করেন, শুধু অখিল গিরি এবং তাঁর ছেলেকে দিয়ে এই কাজ হবে না।
সে জন্য একজন প্রবীণ নেতার পূর্ণ সময় দেওয়া উচিত। সম্ভবত সেই কারণেই সৌমেন মহাপাত্রকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে।

গত লোকসভা ভোটে রত্না দে নাগ বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হওয়ার পর তৃণমূলের অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে দুঃখ পেয়েছিলেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই নেত্রীর সংসদে যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স ছিল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই একুশের ভোটে তিনি জেতার পর তাঁকে মন্ত্রী করা হয়।
কিন্তু সূত্রের খবর, রত্না দে নাগের শরীর ভাল নয়। তিনি অসুস্থ। সেই কারণেই তাঁকে মন্ত্রিসভার দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে অন্য একটি প্রশ্নে। মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং কাছের কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে পরিবহন দপ্তর থেকে কেন সরানো হল?


সরকারিভাবে এর কোনও কারণ জানানো হয়নি। যদিও তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতান্তর রয়েছে তাঁর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *