আজ খবর ডেস্ক:
মিলল না জামিন। শুক্রবার পার্থ-অর্পিতার (Partha Chatterjee) ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত।
আগামী ১৮ই আগস্ট আবার শুনানি। আদালতে পেশ করা হবে দু’জনকে। অর্পিতাকে রাখা হচ্ছে আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শুক্রবার ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে ইডির বিশেষ আদালত। পার্থ থাকবেন প্রেসিডেন্সি জেলে।


এদিন এজলাসে মাত্র ২/৩ মিনিট ছিলেন পার্থ। সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশি প্রহরায় এগিয়ে যান। মাঝপথে হঠাৎই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। এক বার চার পাশে চোখ বুলিয়ে নিতে দেখা যায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কে। তার পর মাথা নামিয়ে আবার এগিয়ে চললেন লিফটের দিকে। পুলিশি ঘেরাটোপেই লিফটে উঠে যান পার্থ।
গাড়িতে ওঠার সময় উপস্থিত সংবাদমাধ্যম পার্থকে জিজ্ঞেস করে, “জেলে যাওয়ার আগে কিছু বলবেন?” তবে এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেন নি পার্থ।

এরপরেই প্রিজন ভ্যানে তোলা হয় অর্পিতাকে। পার্থর ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার, অর্পিতা যাচ্ছেন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে।
পার্থর জেল হেফাজতের নির্দেশ আসার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। আরও এক বার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করেন কুণাল। বলেন, “সারদা মামলায় জেলের কুঠুরিতে থেকে বন্দিজীবন কাটিয়েছিলাম। অতিরিক্ত কোনও সুবিধা পাইনি। পার্থও সেভাবেই বন্দিজীবন কাটান।”
এরপরে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে পাথর উদ্দেশ্যে কুণাল বলেন, ‘‘জেল হেফাজতে ঢুকে দেখুন কেমন লাগে। আমি মাথা উঁচু করে বলছি, আমি কোনও অপরাধ করিনি। আশা করব, আমি যেমন নাগরিক হিসেবে বন্দি জীবনের প্রত্যেকটি নিয়ম মেনেছি, পার্থের ক্ষেত্রেও ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম প্রযোজ্য হোক। কারা দপ্তর যেন সে রকমই করেন। তাঁকে কোনও জেল হাসপাতালে নয়, সেলে রাখতে হবে। আমাকেও সেলে রাখা হয়েছিল। আমার সঙ্গে তখন থেকে বহু বন্দির যোগাযোগ রয়েছে। আমি খবর পাব।’’
সেই সঙ্গে অবশ্য কুনাল ঘোষ এও জানিয়ে দেন, এই বক্তব্য দলের নয়, তাঁর ব্যক্তিগত।

শুক্রবার পার্থের জামিনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাঁর আইনজীবী। পার্থর জামিনের আবেদন জানিয়ে শুক্রবার আদালতে পার্থর আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেল কখনও এক পয়সাও ঘুষ নেননি, ঘুষ নেওয়ার কোনও প্রমাণও মেলেনি। পাশাপাশি এও বলেন, বেহালা পশ্চিম থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী তৃণমূল নেতা তাঁর বিধায়ক পদটি থেকেও ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছেন।


ব্যাঙ্কশাল আদালতে সওয়াল-জবাব চলাকালীন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর সওয়াল ” পালানোর লোক নন পার্থ। তিনি এখন আর প্রভাবশালী নন, একজন সাধারণ মানুষ”। পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন, ”এখনও পর্যন্ত কোনও সম্পত্তি পার্থর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। এমনকী পার্থর কাছ থেকে কোনও কিছুই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। সমস্ত ডিড যা উদ্ধার হয়েছে, সবই নকল।”
যে-কোনও শর্তে পার্থের জামিনের জন্য আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। বলেন, ”পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার প্রয়োজন।”

এদিকে এদিন অর্পিতার আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদন না জানালেও তিনি বলেন, তাঁর মক্কেল “নিরাপত্তাহীনতা”য় ভুগছেন। অর্পিতার আইনজীবীর আর্জি, তাঁর মক্কেলকে যা খেতে দেওয়া হোক, তা যেন পরীক্ষা করে দেওয়া হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার নির্দেশে উল্লেখ করে, অর্পিতা যে জেলে থাকবে সেই জেলের সুপারকে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। এমনকি অর্পিতার নিরাপত্তা বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আগামী ১৮ অগস্ট আদালতে রিপোর্ট আকারে জমা দিতে হবে সুপারকে।
অন্যদিকে, ইডি-র তরফেও আইনজীবী আর্জি জানান, জেলে অর্পিতাকে ডিভিশন ওয়ান প্রিজনার হিসাবে দেখা উচিৎ। এও বলেন, তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাবার ও জল দেওয়ার আগে যাতে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়, সেই আবেদনও করেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ইডি-র দাবি মেনে পার্থ ও অর্পিতার জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত।
পার্থ ও অর্পিতার মামলায় শুক্রবারের শুনানির পর রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে আদালত। সূত্রের খবর, আদালতে ইডি জানায়, ৫০টির ওপর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই-সমস্ত বিষয়ে পার্থ-অর্পিতাকে জেল হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *