আজ খবর ডেস্ক:

রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন এই আটপৌরে মহিলা। আর এই বাজারে তাকে কাছে টানতে রীতিমত “দড়ি টানাটানি” শাসক ও বিরোধী শিবিরে।
জোকা ইএসআই (ESI) হাসপাতালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) লক্ষ্য করে জুতো ছুঁড়েছিলেন শুভ্রা ঘোড়ুই (Subhra Ghorui)।


তারপরেই আমতলার এই গৃহবধূকে “প্রকৃত মহিষাসুরমর্দিনী” অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য (Amit Malavya)।
আবার তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে শুভ্রার নাম ইতিহাস বইয়ে রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অনুপম হাজরা। 1
রাজ্য রাজনীতিতে এমন ঘটনা নজির বিহীন হলেও অদ্ভুতভাবে শাসকদলের প্রায় সকলেই এই প্রসঙ্গে নীরব।
প্রসঙ্গত, সর্বসমক্ষে এই ঘটনা ঘটলেও শুভ্রার বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের হয়নি।

সেদিনের ভিডিও টুইট করে অমিত মালব্য লিখেছিলেন, “এই সেই মহিলা, যিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে জুতো ছুড়েছেন এবং খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ইনি হলেন তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে বাংলার প্রতিরোধের প্রতীক”।
আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে “খোলা চিঠি” লেখেন প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা।
তিনি লেখেন, “শুভ্রা (ঘোড়ুই) দেবীকেও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দেওয়ার অনুরোধ জানাই।”
সমাজ মাধ্যমে সেই টুইট ও ভাইরাল হয়ে যায়।

ইতিমধ্যেই অবশ্য আমজনতার মধ্যেও শুভ্রা কে নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। সেদিনের পর থেকে নিয়মিত খবরের শিরোনামে থাকছেন তিনি।
তবে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত বাড়ির বাইরে বেরোতে কিঞ্চিৎ কণ্ঠাবোধ করছেন এই প্রতিবাদী মহিলা। প্রতিবেশীরা বলছেন, স্বভাবে শান্ত, পাড়াতেও সেভাবে কোনও কিছুর মধ্যে থাকেন না। তাঁর এখানে কাণ্ডে পরিচিতরা অবশ্য অবাক।
সেদিন দাঁতের যন্ত্রণার জন্য ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে।
এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে অবশ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। শুভ্রার স্বামী সমীর ঘড়ুইয়ের আর্জি, তাঁদের নিজেদের মত থাকতে দেওয়া হোক।


শুভ্রার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে এবার স্নাতকে ভর্তি হবে। ছোট মেয়ে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। প্লাইউড কারখানায় কাজ করেন স্বামী সমীর। মাসে যা আয় তাতে ভাল করে এই বাজারে সংসার চলে না।

গেরুয়া শিবিরের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন এক প্রতিবাদী মহিলা মুখ তাঁদের কাছে আদতে “মেঘ না চাইতে জল”। তার ওপর আবার শুভ্রার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণার আমতলায়। যা তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সংসদীয় এলাকায়। ফলে রাজনীতির কারবারিদের পর্যবেক্ষণ, সামনে পঞ্চায়েত এবং তারপর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই শুভ্রা কে এহেন স্তুতি বিজেপি নেতাদের।


অন্যদিকে স্রেফ মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকেও বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। এমনকী, তৃণমূলে যে পদে ছিলেন পার্থ, সেই “মহাসচিব” পদটিরও বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে কৌতূহলের বিষয় হল, জানা যাচ্ছে তৃণমূল নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে এই ঘটনা নিয়ে আলাপ আলোচনা করলেও প্রকাশ্যে কিছুই বলতে চাইছেন না। জুতোকাণ্ডের পরে একমাত্র নিন্দা করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি অপরাধ করে থাকেন, প্রাথমিকভাবে যা তথ্য তাতে মুখ্যমন্ত্রী যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের কাছে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। দল কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি যদি কোনওভাবে দোষী প্রমাণিত হন, তাঁর শাস্তি হবে। কিন্তু আইনের বাইরে কোনওরকম শাস্তি বা কোনও ধরনের কোনও দৃশ্যের অবতারণার যদি চেষ্টা হয়, তবে সেটা সুস্থ সমাজে কতটা গ্রহণযোগ্য, নিশ্চয়ই সবাই ভেবে দেখবেন।”

রাজনৈতিক মহল বলছে, শুধু প্রচুর মানুষের সামনেই নয় পুলিশ ও ইডি কর্তাদের সামনেই এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন শুভ্রা।
অথচ পুলিশে কোনও অভিযোগ হল না। সে ক্ষেত্রে কি ধরে নেওয়া যেতে পারে, শাসকদলের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে?
অনেকে আবার মনে করছেন, এস এস সি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে জনমানসে যথেষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সামনে কেউ এগিয়ে না এলেও শুভ্রা ঘড়ুইয়ের এই প্রতিবাদে সমর্থন রয়েছে সাধারণ মানুষের।


তাই একদিকে যেমন তাঁর এই কাজকে কোনরকম আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হচ্ছে না, অন্যদিকে বিরোধী বিজেপি এই গৃহবধূকে নানান প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি মুখে শিকার না করলেও গেরুয়া শিবিরের একাংশের বক্তব্য, মহিলা মোর্চার পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধিদল যেতে পারেন শুভ্রার সঙ্গে দেখা করতে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *