আজ খবর ডেস্ক:
ভারতের বিচার ব্যবস্থায় আজ এক ঐতিহাসিক দিন। আজ থেকে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির লাইভ টেলিকাস্ট শুরু হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে আজই অবসর নিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা (NV Ramana)। নতুন প্রধান বিচারপতি হবেন ইউ ইউ ললিত (UU Lalit)।


অবসর নেওয়ার আগে ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসাবে তার শেষ দিনে, শুক্রবার এনভি রমনা পাঁচটি হাই-প্রোফাইল মামলার রায় দেবেন।
সেগুলি হল, নির্বাচনের মুখে উপঢৌকন নিষিদ্ধ করার জন্য পিআইএল, ২০০৭ সালের গোরখপুর দাঙ্গা মামলা, কর্ণাটক খনির মামলা, রাজস্থান খনির ইজারা ইস্যু এবং দেউলিয়া আইনের অধীনে লিকুইডেশন প্রবিধান।

অশ্বিনী উপাধ্যায়

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুক্রবার শুনানি হয় ‘খয়রাতি রাজনীতি’ নিয়ে জনৈক অশ্বিনী উপাধ্যায়ের দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার (PIL)। বহুদিন ধরেই ভোট পাওয়ার জন্য সরকারি অর্থে ‘বিনামূল্যে “পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি” নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দায়ের হয়েছে একাধিক জনস্বার্থ মামলা। যার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি রমণার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত ১১ই আগস্ট তাঁদের পর্যবেক্ষণে বলেছিল, “জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি আর বিনামূল্যে বিতরণ (Freebies) এক বিষয় নয়।”

বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং হিমা কোহলির সমন্বয়ে গঠিত সিজেআই-এর (CJI) নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে যে একটি নির্বাচনী গণতন্ত্রে, সত্যিকারের ক্ষমতা ভোটারদের হাতে থাকে এবং আমজনতাই দল ও প্রার্থীদের বিচার করেন।
এদিন সলিসিটর জেনারেল, ভারতের নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য দলগুলি বলেছে যে ফ্রিবিজ এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যেখানে ভোটের আগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, রাজ্যের নতুন সরকার প্রদান করতে সক্ষম নাও হতে পারে।
যে করদাতার তহবিল ব্যবহার করে বিনামূল্যের উপহার দেওয়ার ঘোষণা করে, তা আসলে রাজনৈতিক দলগুলির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। আমরা সমস্ত কোণ থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করেছি। প্রমাণ শেষ পর্যন্ত নির্বাচকদের কাছেই রয়েছে। নির্বাচকমণ্ডলী দলগুলোর কর্মক্ষমতা বিচার করে,” বলেছেন CJI।

বস্তুত, ভারতে ভোট ইস্তেহারে ঢালাও ঘোষণায় এখনও তামিল রাজনীতিকে ছুঁতে পারেনি অন্য কোনও রাজ্য। একদিকে করুণানিধি বিনামূল্যে টিভি দেওয়ার ঘোষণা, তো অন্যদিকে জয়ললিতার সোনার চেন!
এ ব্যাপারে ৯ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম বালাজি একটি রায় দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এমন ঘোষণা করতেই পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি সিটি রবিকুমার ও বিচারপতি হিমা কোহলিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ শুক্রবার জানিয়ে দিল, পুরনো রায় বিবেচনা করে দেখার সময় এসেছে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, এ ব্যাপারে আদৌ বিচারব্যবস্থা হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা, বা কোনও নির্দেশ দিতে পারে কিনা তা বিচার করে দেখা হবে।

বস্তুত ভোট ইস্তেহারে ভাতা বা বিনামূল্যে পণ্য সরবরাহের ঘোষণা নিয়ে হালফিলে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi) নিজেই। উত্তরপ্রদেশের এক সভায় মোদি বলেন, “এ হল “রাবড়ি রাজনীতি” (Rabri Politics)।
এ ভাবে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন অনেকে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।” প্রধানমন্ত্রী সেই বিতর্ক উস্কে দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন বিজেপি নেতা অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়।
তবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন
তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রী পালানিভেল থিয়াগারাজন। তিনি বলেছেন,
“প্রধানমন্ত্রী কী বলছেন তাতে কী আসে যায়? আমরা কেন ওনার কথা শুনব? এ ব্যাপারে কি কোনও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, নাকি উনি নোবেলপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ কিংবা উনি এমন বিকল্প মডেল তৈরি করেছেন যাতে মানুষের ঘরে ঘরে শিক্ষা ও কাজ পৌঁছে যাচ্ছে। এর কোনওটাই যখন নয়, তখন ওনার কথা শোনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করি না।”।
এবার তাই দেশের রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী ইস্তেহারে বিস্তর প্রতিশ্রুতি ঘোষণা কতটা সঙ্গত তা বিবেচনা করে দেখবে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ।
ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, একুশের ভোট ইস্তেহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে মহিলাদের মাথাপিছু মাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন। সেই মত “লক্ষ্মীর ভান্ডার” প্রকল্প ও চালু করেন মমতা।


অর্থনৈতিকভাবে রাজ্য যে সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে, সে ব্যাপারে বারবার সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এবার কি তবে বন্ধ হয়ে যাবে “লক্ষীর ভান্ডার”? শীর্ষ আদালতের এই ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *