আজ খবর ডেস্ক:
নতুন সম্পর্ক তৈরি করা এবং টিকিয়ে রাখা সবসময়ই কঠিন। বিশেষ করে নতুন বিয়ের পর মেয়েদের যখন শ্বশুরবাড়িকেই ঘর বানিয়ে নিতে হয়।
আবহমান কাল ধরে মেয়েদের কাছে নিঃসন্দেহে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। শাশুড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
২০২২ সালে দাঁড়িয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, আজকের দিনে এটা একটা সমস্যা নাকি?
আপনি চাকরি করুন অথবা গৃহবধূ, যৌথ পরিবার অথবা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, মাসে একদিন হলেও শ্বশুর বাড়ির মানুষের সঙ্গে কিছুটা সময় তো কাটাতেই হয়।


তখন কী করবেন আর কী করবেন না? মাঝে মাঝে দেখা হলেও কীভাবে বজায় রাখবেন সুসম্পর্ক?
ধরে নিন দেখে শুনে বিয়ে হচ্ছে কিংবা প্রেম করে। কিন্তু, শ্বশুর বাড়িতে এই প্রথম যাচ্ছেন তাও আবার বউ হয়ে একেবারের জন্য। এই ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
চটজলদি এই টিপসগুলো দেখে নিন।

১) প্রথমেই শাশুড়ির (Mother-in-law) মন জয় করতে হবে। তাহলেই জানবেন আপনার অর্ধেক যুদ্ধ জেতা হয়ে গেছে।
এইজন্য একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো জরুরি। কেনাকাটা করতে, স্পা বা এমনকি সন্ধেবেলা একসঙ্গে হাঁটতে যেতে পারেন। সিনেমা দেখতে যান, চাইলে কফি শপে বসে মামুলি গল্প করুন। এতে একে অপরকে বুঝতে সুবিধে হবে। সাথে বন্ধন করার সময় দেবে ।
মনে রাখবেন, কথা বলা যেকোনও ধরণের সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।

২) বিয়ের পর সকলকে শুধু দেখুন, শুনুন, বুঝুন। উত্তর একেবারেই নয়। হাসি মুখে শুধু দেখুন আর শুনুন।
শ্বশুর বাড়িতে যদি কারোর আচরণ আপনার খারাপ লাগে, তাকে প্রথম দিকে বুঝতে না দেওয়াই ভাল । তাঁর আচরণের দিকে লক্ষ্য রাখুন। পরবর্তীতে আপনি প্রতিবাদ করতে পারেন অথবা স্বামীর (Husband) কাছে পুরো ঘটনাটি তুলে ধরতে পারেন।

৩) শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময়, আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি হস্তক্ষেপ করছেন না বা কারোর গোপনীয়তাকে আক্রমণ করছেন না।
অনেক সময় পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানে অথবা গেট টুগেদারে একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো হয়। আধুনিক পরিবারে দেখা যায়, আত্মীয়রা একসঙ্গে মদ্যপান করছেন। তখন সারাক্ষণ স্বামীর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে না থাকাই ভাল।
আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই একটা কমফোর্ট জোন (Comfort Zone) থাকে। এমনও হতে পারে সেখানে উপস্থিত কারোর ব্যক্তিগত কিছু বিষয় আপনি জানেন। কিন্তু সীমানা অতিক্রম না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বিশেষত আপনার যদি দেওর, ননদ, জা, ভাসুর থাকে, সে ক্ষেত্রে আলাদা সতর্কতা দরকার।

৪) খারাপ ভাল বিচার করার জন্য পরে অনেক সময় পাবেন। বিয়ের পর থেকেই অমুক ভাল বা অমুক খারাপ, অমুক ঠিক বা ভুল এসব নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা না করাই ভাল। কারণ তিনি হয়তো আপনার আগে থেকেই সবটা জানেন।
স্বামীর কাছে তাঁর পরিবার নিয়ে নালিশ নয়। অবশ্য যদি খুবই খারাপ কিছু হয়, বা নিজের কানে শোনেন বা নিজের চোখে দেখেন তবে অবশ্যই জানান। কারণ এই নতুন পরিবারে তিনিই আপনার সব থেকে কাছের মানুষ।

৫) নিজেকে অহং এবং উত্তেজনা মুক্ত করুন।
আপনি যখন আপনার শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, তখন আপনি কিছু সমালোচনা শুনতে পারেন যা অপ্রত্যাশিত। সেই মুহূর্তেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা না করাই ভাল।
একটু ধৈর্য আর ঠান্ডা মাথা আপনার নতুন পরিবারের সঙ্গে আপনাকে মানিয়ে নিতে অনেকটাই সাহায্য করবে। তাঁরাও আপনার সঙ্গে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন।

৬) এ কথা ঠিক যে, কাউকে প্রভাবিত করার এবং বন্ধুত্ব করার সর্বোত্তম উপায় হল, প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন। নিজের খারাপ ভাল কাছের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে তাঁদের পক্ষে ও আপনাকে বোঝা সহজ হবে।
কোনও সম্পর্কই জীবনের সব পরিস্থিতিতে একই রকম থাকতে পারে না, যদি ভিত্তিগুলো মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।
যখন আপনি আপনার শাশুড়ির সঙ্গে থাকার সুযোগ পান, আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনার প্রকৃত ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরুন।

৭) বাইরের কথা বাড়ির ভেতর আনবেন না। একই ভাবে ঘরের কথা ও বাইরে নয়।
স্বামী বা শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে সংসারের কোনও বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হতেই পারে। শান্তি বজায় রাখতে গেলে তা হজম করে নিন। বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের কাছে এসব কথা বলতে গেলে পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখবেন আপনাকেই হেয় হতে হচ্ছে।

৮) বাপের বাড়ির সমস্যা শ্বশুর বাড়িতে জানাবেন না। আবার শ্বশুর বাড়ির খুঁটিনাটি বাবা মায়ের কাছে নয়। তবে বাড়াবাড়ি রকমের খারাপ হওয়ার আগে অবশ্যই নিজের বাব মাকে জড়াতে পারেন।

৯) শ্বশুর শাশুড়ি আপনার কাছে কী প্রত্যাশা করছেন তা
বোঝার চেষ্টা করতে হবে। বোঝার পর তাঁদের ও বোঝাতে হবে আপনি কী চান, কতটা চান আর তাঁদের চাহিদাই বা কতটা মেটাতে পারবেন।

১০) ভাল কথা যেমন হাসতে হাসতে খুশির মেজাজ নিয়ে বলেন, তেমন কড়া শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নমনীয় হতে হবে।

১১) শাশুড়ির সঙ্গে থাকার সময় আপনার সঙ্গীর সমালোচনা করা এড়িয়ে চলুন। কারণ মায়ের ভালবাসা সন্তানের ইতিবাচক দিকগুলি দেখতে পায়। তাই মায়ের কাছে, ছেলের সমালোচনা আপনাদের সম্পর্ককেই নষ্ট করতে পারে।

১২) ঘরে ননদ থাকলে তাঁকে বোন বা দিদি বানিয়ে নিন, নয়তো অশান্তি অনিবার্য।
মাথায় রাখুন আপনি যেমন একটা নতুন সংসারে গেছেন ঠিক তেমনভাবে সেই সংসারের সদস্যদের কাছেও আপনি নতুন মানুষ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *