আজ খবর ডেস্ক:
ওজন কমাতে হবে। রোগা হতে হবে। ফিট থাকতে হবে শারীরিক ভাবে। ভরসা জিম (Gym)।
আর জিম মানেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দ্রুতগতির ট্রেড মিলে (Treadmill) কানে হেডফোন গুঁজে ব্যায়ামে ব্যস্ত খেলোয়াড় বা ফিল্মি তারকারা।
অথচ আমাদের চোখের সামনে উদাহরণ রয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Saurav Ganguly), কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তবের (Raju Srivastav)।


ট্রেড মিলে ব্যায়াম করতে করতে আচমকা হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack/ Cardiac Arrest) হয়েছিল এই দুজনেরই। অবশ্য নিছক এই দুজন নন, এমন উদাহরণ চারপাশে অনেক রয়েছে। তবু আমরা এইসব ঘটনাকে চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে গিয়ে ট্রেডমিলে দৌড়ে রোগা হওয়ার স্বপ্ন দেখি প্রতিনিয়ত।
চিকিৎসকরা কিন্তু সতর্ক করছেন বারবার। তাঁদের বক্তব্য, ট্রেডমিলে দ্রুতগতিতে হাঁটার ফলে শরীরের ঘাম এবং হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে। বিশেষত যদি আগে থেকেই আপনার হার্টের কোনও সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে আরও বেশি করে সাবধান হওয়া উচিত।

চিকিৎসকদের মতে,
হার্ট অ্যাটাকের প্রকৃত কারণ পুষ্টি, পারিবারিক ইতিহাস, জেনেটিক্স এবং জীবনযাত্রার কারণগুলির মধ্যেই রয়েছে। যদি কারোর হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে, যদি কারোর স্থূলতা (Obesity), ধূমপান (Habit of Smoking), ডায়াবেটিস (Diabetes) বা পারিবারিক ইতিহাস (Family History of Cardiac Disease) – তাহলে তাঁদের কার্ডিও ভাসকুলার ব্যায়াম (Cardio Vascular Excercise) শুরু করার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল,” বলেছেন প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবী শেঠি৷

একটানা দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার বয়স এবং শারীরিক ক্ষমতার সীমা জানুন। এমন কিছু চেষ্টা করবেন না যা আপনাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলবে।, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
একাধিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, “যাদের বয়স ৪০ বছরের বেশি, তাঁদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত।”

এবার আসা যাক, নির্দিষ্ট নির্দিষ্টভাবে ট্রেডমিল শুরু করার আগে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন সেই প্রসঙ্গে।
নিয়মিত ধূমপান
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ (BP) বা হার্টের সমস্যা থাকলে ট্রেডমিল করা থেকে বিরত থাকুন।
ট্রেডমিল যদি নিতান্তই করতে হয় সেক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি মেনে চলবেন:


১) ট্রেডমিল করার সময়, পড়ে যাওয়া আটকাতে সঠিক জুতো এবং পোশাক পরতে হবে।
২) আপনার বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতার সীমা জানুন। যদি বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন যা বিশ্রামের পরেও কমে না, তাহলে অপেক্ষা করবেন না। অবিলম্বে একজন হার্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৩) একটি ট্রেডমিল ব্যবহার করার সময় হার্টের গতি বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সাধারণত তা ১৪০এর কম হয়। ব্যায়াম করার সময় আপনি যদি অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করেন তবে ব্যায়াম বন্ধ করুন। এবং একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

ট্রেডমিলে হাঁটার সময় কী করবেন/ কী করবেন না:
১) ধীরে শুরু করুন, প্রথম পাঁচ মিনিট ধীর গতিতে দৌড়ানোর চেষ্টা করুন।
২) ট্রেডমিল সহনীয় অ্যাঙ্গেলে রাখুন। খুব খাড়া দৌড়ানো বাঞ্ছনীয় নয়। নতুনদের কেবল ধীরে ধীরে গতি, বাঁক এবং সময়কাল বাড়াতে হবে।
৩) হৃদস্পন্দনের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। ট্রেডমিলে স্মার্টওয়াচ বা অন্তর্নির্মিত সেন্সর দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার সর্বোচ্চ হৃদস্পন্দনের ৭০% এর কম রাখা উচিত। একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তির জন্য, এটি প্রায় ১৫০/প্রতি মিনিটের নিচে হওয়া উচিত।
৪) কিছু মানুষের প্রচুর ঘাম হয়, অন্যরা কম ঘামেন। কিন্তু বুকে ভারী বোধ হওয়া, মাথা ঘোরা বা চোয়ালের ব্যথার সঙ্গে ঘাম হওয়া হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।

যেমন সম্প্রতি সামনে এসেছে যে স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তবের হৃদরোগের কোনও ইতিহাস ছিল না। এমন অনেকেই আছেন যারা একই রকম অভিজ্ঞতা পেয়েছেন—হার্টের সমস্যার আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত প্রকাশ।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের করা, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের একটি গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে যদি তা নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে পরবর্তী ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। এমনকি, বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মানুষকে হার্টের সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বেশিরভাগ ডাক্তারই নিয়মিত লিপিড প্রোফাইল, হোমোসিস্টাইনের মাত্রা এবং অ্যাপোলিপোপ্রোটিন সহ রক্তের মৌলিক পরীক্ষাগুলি করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *