আজ খবর ডেস্ক:
নিতান্ত আটপৌরে সাজ পোশাক। সুতির শাড়ি, মুখে মাস্ক, মাথায় সিঁদুর, কপালে টিপ। চুলে হাতখোঁপা। দেখেই বোঝা যায়, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ।
নাম শুভ্রা ঘড়ুই। বাড়ি আমতলা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা।
রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন মিডিয়ার কাছে। কারণ এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) দিকে জুতো ছুড়ে মারলেন এই মহিলা।
মঙ্গলবার জোকা ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রীকে। সেখান থেকে ফেরার পথে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি লক্ষ্য করে জুতো ছুড়ে মারেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মহিলা। তবে জুতো পার্থ’র গায়ে লাগেনি।
আদালতের নির্দেশ রয়েছে, প্রতি ৪৮ ঘণ্টা অন্তর পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সেই নির্দেশ মোতাবেক, নিয়মিত দুজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জোকা ইএসআই হাসপাতালে।
স্বভাবতই ভিভিআইপি (VVIP) রোগী হওয়ায় তাঁদের দুজনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অনেকটাই সময় চলে যাচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। ফলে বাইরে দীর্ঘ হচ্ছে অন্যান্য রোগীদের অপেক্ষার লাইন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে বের করে আনা হচ্ছিল পার্থকে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কে দেখা মাত্রই তিনি নিজের পা থেকে দু’পাটি জুতো খুলে পর পর ছুড়ে মারেন তাঁকে লক্ষ্য করে। পার্থর বদলে গাড়িতে লাগে ওই চটি। পরে শুভ্রা বলেন, ‘‘ওঁদের কোটি কোটি টাকা। কলকাতার একাধিক জায়গায় ফ্ল্যাট কিনেছে। বড় গাড়ি করে হাসপাতালে আসছে। এতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা ঠিক মত ডাক্তার দেখাতে পারছি না। তাই জন্যই জুতো ছুড়েছি। জুতোটা ওর মাথায় লাগলে শান্তি পেতাম।’’
কেন জুতো ছুড়েছেন প্রশ্ন করতেই রীতিমত ঝাঁঝিয়ে ওঠেন শুভ্রা। বলেন, ‘‘জুতো ছুড়তে গিয়েছিলাম। আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়ে গিয়েছে। এ বার খালি পায়েই বাড়ি যাব।’’
বস্তুত হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে যেদিন যেদিন পার্থ-অর্পিতাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়, তাঁদের পৌঁছনোর অনেক আগে থেকেই নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীতে গোটা চত্বর মুড়ে ফেলা হয়। ফলে আতান্তরে পড়েন ওপিডির জন্য সকাল থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা। উপস্থিত চিকিৎসকরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন পার্থ অর্পিতাকে নিয়ে।
অনেকটা সময় কেটে যাওয়ায় বাকি রোগীদের ঠিকমত পরীক্ষা-নিরীক্ষা খানিকটা মুশকিল হয়ে যায়।
এমনকি এও জানা গিয়েছে, গত বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছিল উপস্থিত জনতার মধ্যে।
জানা গিয়েছে, আমতলার বাসিন্দা ওই মহিলার একটি মেয়ে আছে। সে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে।
পাশাপাশি শুভ্রা বলেন, ‘‘এটা আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। হাজার হাজার মানুষ চাকরি পায়নি ওঁদের জন্য। তাঁদের সবার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’’
উত্তর প্রদেশ, বিহারে এমন ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটলেও বাংলার রাজনীতিতে কার্যত নজির বিহীন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়ানোর পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, জোকার রাস্তায় সেই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গেল।