আজ খবর ডেস্ক:
বেআইনি কয়লা পাচার (Coal Scam) মামলায় (Coal Scam) শুক্রবার কলকাতায় ইডি দপ্তরে (ED) হাজিরা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এদিন সকাল পৌনে ১১ টা নাগাদ সেখানে পৌঁছেছেন তিনি। বেরিয়েছেন বিকেল প্রায় পৌনে ছটা নাগাদ।
জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রীতিমত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে অভিষেক তোক ডাকলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) বিরুদ্ধে। বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধেও।
পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সোমবার। তার আগে ইডি যেন কোনও চরম পদক্ষেপ না করে।

এদিন একটানা প্রায় আট ঘন্টা চলতে থাকা জেরার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের থেকে সাময়িক স্বস্তি মেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শীর্ষ আদালত (Supreme Court) জানিয়ে দেয়, সোমবার পর্যন্ত অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও চরম পদক্ষেপ করতে পারবে না এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অর্থাৎ তাঁকে গ্রেফতার করা বা আটক করা যাবে না।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরেই রীতিমত তেড়েফুঁড়ে বিজেপিকে আক্রমণ শানান অভিষেক।
প্রথমে অভিষেক বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহকে ২৯শে আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চ থেকে আক্রমণ করেছিলেন। তাই আজ ফের তাঁকে ইডি অফিসে ডেকে হেনস্থা করা হল৷ ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, “কেউ যদি ভাবে কারও ছেলেকে আক্রমণ করেছি বলে আমাকে ইডি-র জুজু দেখিয়ে ভয় দেখাবে, তাহলে ভুল করছে৷”
এরপরেই সরাসরি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন অভিষেক। বলেন, “ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ‘পাপ্পু’ অমিত শাহ।” পাশাপাশিই তাঁর আরও বক্তব্য, দিল্লির জল্লাদ’-দের কাছে তিনি মাথা নত করবেন না।

শুক্রবার ইডির জিজ্ঞাসাবাদের পর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোন অভিষেক। মাইক হাতে নিয়ে রণং দেহি মূর্তিতে দেখা গেল ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে। বলেছেন, তিনি ইডিকে লিখিত বয়ান দিয়েছেন। কিন্তু একের পর এক তোপ দেগেছেন অমিত শাহের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার অভিষেক দাবি করেন, কয়লা পাচারের টাকা ঢুকেছে অমিতের পকেটে। তাঁর কথায়, ‘‘গরু পাচার হয় কী করে? বর্ডারের দায়িত্বে কে? এই টাকা তো সরাসরি অমিত শাহের কাছে গিয়েছে! সরাসরি বিজেপি নেতাদের কাছে গিয়েছে। এটা গরু বা কয়লা কেলেঙ্কারি নয়। এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেলেঙ্কারি!’’
অভিষেকের দাবি, ইডি-সিবিআইকে দিয়ে তৃণমূলকে দাবিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কারণ, রাজনৈতিক ভাবে তারা তৃণমূলের সঙ্গে লড়তে পারছে না। তিনি বলেন, ‘‘ওরা পলিটিক্যালি লড়তে পারছে না বলেই ইডির জুজু দেখাচ্ছে। কিন্তু ভুল করছে। দিল্লির জল্লাদদের কাছে মাথা নত করব না। যত বার ডাকবেন, তৃণমূলের প্রত্যয় তত দৃঢ় হবে।


তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এদিন টানা প্রায় ৪০ মিনিট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন অভিষেক। সেখানে একবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) নাম নেন নি তিনি। প্রায় পুরোটা জুড়ে ছিলেন অমিত শাহ এবং শুভেন্দু অধিকারী।
অভিষেক বলেন, ইডির সমন তিনি পেয়েছিলেন বৃহস্পতিবার, ক্যুরিয়রে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অথচ মঙ্গলবার থেকে সংবাদমাধ্যমে বলা শুরু হয়েছে, আমায় ইডি ডেকে পাঠিয়েছে।
অভিষেক আরও বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীকে এক বার সিবিআই (CBI), এক বার ইডি ডেকেছে। আমাকে তিন বার। কিন্তু ফলাফল শূন্য! আমায় যত বার ডাকবে, আমি ‘আউট অব দ্য ওয়ে’ গিয়ে সহযোগিতা করতে তৈরি। আমি তিন বার গিয়েছি। প্রয়োজনে আরও ৩০ বার যাব। কিন্তু আমি মাথা নত করার ছেলে নই।”

এরপরেই রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন অভিষেক। একসময়ের তৃণমূল যুবা (TMC Yuva) সংগঠনের নেতা বিনয় মিশ্র কয়লা দুর্নীতি কাণ্ডে আপাতত ফেরার।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এদিন দাবি করেন, কয়লা ও গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, সেই বিনয় মিশ্রের সঙ্গে আট মাস আগে শুভেন্দু অধিকারীর ফোনে কথা হয়েছে।
অভিষেকের দাবি, “এক সাংবাদিকের কাছে সেই অডিও ক্লিপ রয়েছে। আমি তা শুনেছি। ঠিক সময়ে সামনে আনব।” বিরোধী দলনেতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক।”


অভিষেকের দাবি, শুভেন্দু নাকি বিনয়কে মামলার বিষয় দেখে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, যিনি অভিযোগ করছেন তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে। শুভেন্দু আরও বলেন, “আমার ফোন নাম্বার সকলের কাছেই আছে। অনেকেই ফোন করেন। কিন্তু যিনি এইরকম অভিযোগ করছেন, তিনি আগে প্রমাণ দিন”।
সবমিলিয়ে একটা কথা বলা যেতেই পারে, বঙ্গ রাজনীতিতে আজকের দিনটি যথেষ্ট ঘটনা বহুল হয়ে রইল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *