আজ খবর ডেস্ক:
বেশ কয়েকদিন হল, তেমন সাড়াশব্দ নেই অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal)। বর্তমানে আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে বন্দি তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) এই দাপুটে নেতা। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) পর এবার অনুব্রতর শুনানিও ভার্চুয়ালি (Virtually) হবে। বিশেষ সিবিআই (CBI) আদালতের বিচারক রাজে‌শ চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়ে এমন আবেদন জানিয়েছেন আসানসোল জেলের সুপার কৃপাময় নন্দী। কারণ? অনুব্রতর নিরাপত্তা!


তবে অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, মন ভাল নেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির। একদিকে জেলে একাকী জীবন, মেয়ের জন্য চিন্তা, নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনা আর অন্যদিকে প্রবল অর্থচিন্তা। আপাতত এইসব নিয়ে জেরবার অনুব্রত।

অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তাঁর নিজের এবং মেয়ে সুকন্যা-সহ ঘনিষ্ঠদের কিছু অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই (CBI)। সেখানে যে ১৭ কোটি টাকার আমানত আছে, তা ব্যবহারের উপায় নেই। শুধু তাই নয়, অন্যান্য বেশ কয়েকজন ও ইডি (ED)/সিবিআইয়ের নজরে রয়েছেন। তাই সেখান থেকেও টাকা মিলছে না।
মামলা প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন ধরে চলতে পারে, খুব সহজে নিস্তার মিলবে না এমনটা মনে করছেন অনুব্রত নিজেও। এর ওপরে আবার যদি তাঁকে তদন্তের জন্য দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে সেখানে এমন আইনজীবী প্রয়োজন যাঁর বা যাঁদের সিবিআই-ইডি সংক্রান্ত মামলা সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের ফি বেশি হবে। ফলে খরচ অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ফলে এই সব খরচের জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তায় ডুবে রয়েছেন অনুব্রত।

দল সূত্রের খবর, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ নেতা থেকে ব্যবসায়ী, যাঁরা টাকা জোগাতে পারেন, তাঁরাও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভয় খুব একটা এগিয়ে আসছেন না। ফলে সোজা পথে কী ভাবে টাকা জোগাড় হবে, সেই চিন্তা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, বীরভূমের অনুব্রত লবির বহু নেতাই এখন বলছেন, টাকার থলি নিয়ে বসে থাকলেও সেই টাকা দিতে যাওয়াটা ঝুঁকির।
প্রকাশ্যে এই নিয়ে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে টাকার জোগান নিয়ে চিন্তা রয়েছে। তবে তারও পথ বার করা হচ্ছে।’’
বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, নেতাদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকলেও জেলা তৃণমূলের কোনও পাকা হিসেবযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে দলীয় তহবিল থেকে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ওই নেতা জানিয়েছেন, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা, বিধায়ক ও অনুব্রতের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক তহবিল করার চেষ্টা হচ্ছে। সকলকে বলা হচ্ছে, সে টাকার যেন হিসাব দেওয়া কঠিন না হয়।

শুধুই কি টাকা? জেলের খাওয়া দাওয়া নিয়েও বিস্তার অভিযোগ অনুব্রতর। বেশ কয়েকদিন আগে মাত্র একবার খাসির মাংস জুটেছিল। তারপর থেকে সেই একঘেয়ে ভাত ডাল তরকারি। অভিযোগ উঠেছে আসানসোলের সংশোধনাগারের খাবারের মান ভাল নয়। আগেই সিবিআই আধিকারিকদের কাছে অনুব্রত অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁর পাতে পড়ছে ‘চালানি’ মাছ। তাতে লম্বা ঢেকুর উঠছে। তাই দেশি মুরগির ঝোল বা পুকুরের টাটকা পোনা মাছ হলে মধ্যাহ্নভোজটা ভাল হয় বলে আবদার করেছেন বিচারাধীন বন্দি অনুব্রত মণ্ডল।


জানা গিয়েছে গত সপ্তাহে, সিবিআই টিম অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি তাঁর অসুবিধার কথা বলেছেন। এখানে প্রাতরাশে মুড়ি, চিঁড়ে, ছাতু দেওয়া হয়। এমনকী তাঁকে রুটি–তরকারিও দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহে দু’তিনদিন দুপুরে ডিম, মাছ বা মুরগির মাংস সবাই পেয়ে থাকে। অনুব্রতও তা পাচ্ছেন। কিন্তু যাবতীয় অসুবিধে হচ্ছে মাছ নিয়ে। তাই আপত্তি তুলেছেন অনুব্রত।
আর তাই এইসব নানান সমস্যা মিলিয়ে মন মেজাজ মোটেও ভাল নেই অনুব্রত মণ্ডলের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *