আজ খবর ডেস্ক:
টার্গেট নবান্ন!
বস্তুত, নবান্ন অভিযান (Nabanna Rally) দিয়ে শুরু করছে বঙ্গ বিজেপি (BJP Bengal)।
মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযান কর্মসূচি। পরিকল্পনা হয়েছে, তিনটি মিছিল নিয়ে নবান্নের দিকে এগোবে গেরুয়া শিবির। তিন মিছিলের মুখ হবেন তিন নেতা।
কতটা এগোনো যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, প্রতিটি মিছিলকেই পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নবান্ন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
দিন কয়েক আগেই তিন দিনের কর্মশালা করাতে কলকাতায় এসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মুখ্য পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল। সেখানেই তিনি বলেছিলেন, নবান্ন অভিযানের কর্মসূচি দলের সামনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
নবান্ন অভিযানের লক্ষ্যে বিজেপিট তিনটি মূল মিছিল হবে। সব মিছিলের অভিমুখ হবে নবান্ন।
- প্রথম মিছিল – সাঁতরাগাছি বাস স্টান্ড থেকে ক্যারি রোড হয়ে নবান্ন।
- দ্বিতীয় মিছিল- হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে ব্রাবোর্ন রোড হয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে নবান্ন।
- তৃতীয় মিছিল – কলেজস্ট্রিট থেকে ওয়েলিংটন, এস এন ব্যানার্জী, চৌরঙ্গি, রানি রাসমনি ধরে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে নবান্ন ।
এখনও পর্যন্ত স্থির হয়েছে, প্রথম মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। দ্বিতীয় মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) এবং তৃতীয় মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
শুভেন্দুর সঙ্গী হবেন রাহুল সিনহা, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ’রা। সুকান্তর সঙ্গে থাকবেন মন্ত্রী সুভাষ সরকার, মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া, শমীক ভট্টাচার্য, অগ্নিমিত্রা পাল ও আরও অনেকে।
দিলীপ ঘোষের সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মন, সাংসদ জগন্নাথ সরকার, প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল সহ অন্যান্যরা।
চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুসারে, উত্তরবঙ্গ থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা শিয়ালদহ বা কলকাতা স্টেশনে নেমে চলে আসবেন কলেজ স্ট্রিটে। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও দুই ২৪ পরগণার কর্মীরাও সেখানে আসবেন। সেখান থেকে মিছিল হবে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে।
অন্য দিকে, হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনো কর্মীরা চলে যাবেন হাওড়া ময়দানে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, হুগলির কর্মীদের জমায়েত হবে সেখানে। ওই মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তৃতীয় মিছিলটি শুরু হবে সাঁতরাগাছি বাস স্ট্যান্ড থেকে। নেতৃত্বে থাকবেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুই মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গে যে কর্মীরা সড়কপথে আসবেন তাঁদের জমায়েত হবে সাঁতরাগাছিতে।
তবে নবান্ন অভিযান ঘিরে বিজেপির যে পরিকল্পনায় সব থেকে বেশি চমক থাকছে তা হল, মোট ৭টি ট্রেন ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
যদিও বিজেপি নেতারা দক্ষিণবঙ্গের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, কিন্তু ট্রেন আসবে উত্তরবঙ্গ থেকেও।
সোমবার সকাল পর্যন্ত যা পরিকল্পনা, তাতে উত্তরবঙ্গের জন্য ৩টি এবং দক্ষিণবঙ্গের জন্য ৪টি ট্রেন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিঘা থেকে সাঁতরাগাছি আসার ট্রেন।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা থেকে যাতে বেশি সংখ্যায় কর্মী, সমর্থক আনা যায় সেই কারণেই এই ট্রেনের ব্যবস্থা। বিজেপির অন্দরে এই ট্রেনটির নাম দেওয়া হয়েছে “শুভেন্দু এক্সপ্রেস” (Suvendu Express)।
শুধু শুভেন্দু নন, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের লোকসভা এলাকা বালুরঘাট থেকেও ১টি ট্রেন আসবে। আবার সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষও ট্রেন পাচ্ছেন। সেই ট্রেনটি ঝাড়গ্রাম থেকে ছেড়ে মেদিনীপুর হয়ে সাঁতরাগাছি আসবে।
এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, এদিন অর্থাৎ সোমবার বিকেল ও সন্ধের মধ্যেই বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার থেকে শিয়ালদহের জন্য ট্রেন ছাড়বে। তিনটি ট্রেনেই মালদহ থেকে যাতে কর্মীদের তোলা যায় সেই ব্যবস্থাও থাকছে। সবকটি ট্রেনই মঙ্গলবার সকালে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছবে। এই ট্রেনে যে যাত্রীরা আসবেন তাঁরা কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হওয়া মিছিলে অংশ নেবেন। সেই মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন দিলীপ।
ঝাড়গ্রাম এবং দিঘা থেকে আসা ট্রেন দু’টি সাঁতরাগাছি স্টেশনে থামবে। সেই ট্রেনের কর্মীরা সাঁতরাগাছি বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু হওয়া মিছিলে অংশ নেবেন। ওই মিছিলটির নেতৃত্বে থাকবেন শুভেন্দু।
আরও দু’টি ট্রেন পুরুলিয়া এবং রামপুরহাট থেকে আসবে হাওড়ায়। এই দু’টি ট্রেনে আসা কর্মীরা হাওড়া ময়দান থেকে শুরু হওয়া মিছিলে অংশ নেবেন। সেই মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন সুকান্ত।
এছাড়াও লোকাল ট্রেনে যাঁরা আসবেন তাঁদের সাঁতরাগাছি, হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশনে নামতে বলা হয়েছে বিজেপির তরফে।
সোমবার থেকেই কন্ট্রোল রুম খুলছে রাজ্য বিজেপি। হেল্পলাইন নম্বরও দিয়ে দেওয়া হবে কর্মীদের।
দেশে চলছে বিজেপির সরকার। রেল দপ্তর ও তাদেরই হাতে। তবু প্রশ্ন উঠেছে, ৭টি ট্রেনের জন্য ঠিক কত টাকা খরচ হচ্ছে? রেলকে কত টাকা দেওয়া হচ্ছে তা জানাতে চাননি রাজ্য বিজেপির কোনও নেতাই। যদিও ইতিমধ্যেই নবান্ন অভিযান কর্মসূচির খরচ নিয়ে কটাক্ষ শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল।
জবাবে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ট্রেন ভাড়ার জন্য খরচ হচ্ছে। তবে অন্য দলের কর্মীরা বিনাভাড়ায় বৈধ যাত্রীদের ওপর অত্যাচার করে আসেন। আমরা সেই সংস্কৃতির বদল চাইছি। সেই কারণেই ট্রেন ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা।”