আজ খবর ডেস্ক:
অপেক্ষা ছিল ৫ বছরের। রণবীর কাপুর (Ranbir Kapoor) এবং আলিয়া ভাট (Alia Bhatt) অভিনীত ব্রহ্মাস্ত্র (Brahmastra) আজ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। অয়ন মুখার্জি (Ayan Mukerji) পরিচালিত এই ছবি ঘিরে প্রথম থেকেই অধীর আগ্রহ ছিল দর্শকদের মধ্যে। ছবি মুক্তির আগেই অগ্রিম বুকিং কার্যত রেকর্ড করেছে।


কিন্তু ৪১০ কোটি টাকা ব্যয় তৈরি ব্রহ্মাস্ত্র ঠিক কেমন হল? আলিয়া-রণবীর রসায়নই বা কতটা জমল? পুজোর আগে মোটা টাকা খরচ করে যাবেন কি সিনেমা হলে এই ছবিটি দেখতে? জানতে হলে পড়ে নিন আমাদের এই প্রতিবেদন।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, ছবিটি মূলত দাঁড়িয়ে আছে “ভিজুয়াল এফেক্ট”এর (VFX) ওপর।
নির্মাতারাও দাবি করেছেন, ব্রহ্মাস্তোর বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হয়েছে অ্যানিমেশন আর গ্রাফিক্সের কাজে।
ছবিটি ভারতীয় পুরাণ এবং ফ্যান্টাসির মিশেলে তৈরি। রয়েছে ইতিহাসের আধার।

শিবা-ইশার প্রেম দিয়েই শুরু ব্রহ্মাস্ত্র, পরে সেটি মোড় নেয় শুভ বনাম অশুভর দ্বন্দ্বে। হিন্দু পুরাণের সঙ্গে কল্প-বিজ্ঞানের মিশেল অয়নের এই ছবি, যার প্রাণভ্রমরা শিবা-ইশার এক অন্যরকম প্রেমের গল্প।
অনাথ শিবা (রণবীর কাপুর) অদ্ভূত এক প্রাণশক্তিতে ভরপুর। বড় হয়ে ডিস্ক জকি-র (DJ) পেশা বেছে নেয় শিবা। তবে খুব ছোট বয়সেই শিবার সঙ্গে আগুনের এক অদ্ভুদ সম্পর্ক। আগুন তাঁকে জ্বালায় না, কিন্তু কেন? এর মাঝেই প্রথম দর্শনে ইশার প্রেমে পড়ে শিবা। দুর্দান্ত ছন্দে এগোতে থাকে তাঁদের প্রেমের কাহিনি। কিন্তু গুরুজি (অমিতাভ বচ্চন/ Amitabh Bachchan)-র সঙ্গে শিবার সাক্ষাৎ বদলে দেয় সবকিছু।
“ব্রাহ্মণশ” (Brahmansh) নামক এক গুপ্ত সমাজের (Private Group) নেতা অমিতাভ। ব্রহ্ম-শক্তির উপাসক এই সমাজ।


তাঁর জন্মই হয়েছে ব্রহ্মাস্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসাবে এবং সে নিজে একটা অস্ত্র (অগ্নি)। অমিতাভের হাত ধরেই এই সত্যের মুখোমুখি হয় শিবা। এদিকে অন্ধকারের রানি জুনুন (মৌনি) সকল অস্ত্রের মধ্যে শক্তিশালী ব্রহ্মাস্ত্র নিজের দখলে আনতে চায়, যাতে এই দুনিয়ার উপর তাঁর হুকুম চলে।

অন্ধকারের রানির হাত থেকে তিন টুকরোতে ভাগ হয়ে থাকা ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ রক্ষার জিম্মা রণবীরের অর্থাৎ শিবার ওপর বর্তায়। আর সেই যাত্রাপথে তাঁর সঙ্গী হয় ইশা (আলিয়া ভাট)। এই ছবির চিত্রনাট্যের বাঁধন কখন কখনও একটু বেশিই জটিল মনে হতে পারে দর্শকদের।


পাশাপাশি, ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট দীর্ঘ ছবি আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে পারে। চিত্র সমালোচকদের একাংশের বক্তব্য, ছবির প্রথমার্ধের ২০ মিনিট অনায়াসে ছেঁটে ফেলতে পারতেন পরিচালক।


রণবীর-আলিয়ার রোম্যান্স এই ছবির অন্যতম ইউএসপি (USP)। নিউ এজ সম্পর্কের গল্প বলতে দক্ষ “ইয়ে জওয়ানি হ্য়ায় দিওয়ানি” অথবা “ওয়েক আপ সিড” ছবির পরিচালক এখানেও নিজের মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন। তবে
ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অনেক বেশি টানটান। সেখানে ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে অনেক জটিল ধাঁধার জট খুলবে।
ভিএফএক্সের কাজ প্রশংসনীয়। বড় পর্দায় এই সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা না দেখাটা বড় মিস!

নাগার্জুন স্বল্প উপস্থিতিতে নিজের জাত চিনিয়েছেন। অমিতাভ বচ্চন সাবলীল। মৌনি রায় চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বেশকিছু জায়গায় খানিকটা যেন “ওভার দ্য টপ”।
এই ফিল্মের মূল ফোকাস কিন্তু পুরোপুরিভাবেই রণবীর কাপুর। ক্যামিও রোলে আছেন শাহরুখ খান (Shahrukh Khan)। তবে “কেসরিয়া” বাদে এই ছবির অন্যান্য গানগুলো সেভাবে মন কাড়ে না।


তারপরেও, কেন দেখবেন ব্রহ্মাস্ত্র?
এত বড়মাপের স্কেলে বলিউড ছবি রোজ রোজ তৈরি হয় না। ছবির ভিএফএক্সের কাজ মুগ্ধ করে। উপরি পাওনা হিসাবে থাকছে, প্রথমবার রুপোলি পর্দায় রণবীর-আলিয়ার রসায়ন।

ব্রহ্মাস্ত্র এখনও পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল হিন্দি ছবি। ৪১০ কোটি টাকা বাজেটে ছবিটি নির্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি ছিল “ঠাগস অফ হিন্দুস্তান”।

বাণিজ্য বিশ্লেষক তরণ আদর্শের মতে, “ব্রহ্মাস্ত্র একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র। আমরা জানি গত কয়েক সপ্তাহ হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভয়ঙ্কর ছিল। আমাদের দুর্যোগের পর দুর্যোগ হয়েছে। টিকিট বিক্রি হচ্ছিল না। শো বাতিল করতে হচ্ছিল। কিন্তু ব্রহ্মাস্ত্রের অগ্রিম বুকিং কিছুটা আশার আলো এনে দিয়েছে। আশা করছি, এই ছবির মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”


অগ্রিম বুকিংয়ের দৌলতে প্রথম দিন দাপটে চললেও পরবর্তী সপ্তাহে কি হবে? এখন সেদিকেই তাকিয়ে ফিল্ম ও বাণিজ্যমহল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *