আজ খবর ডেস্ক:
আপডেট: রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত। প্রাক্তন মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেল থেকে নিয়ে যাওয়া হবে নিজামে ।
প্রথমে কান্না। তারপর কাকুতি মিনতি। এবার আদালত চত্বরেই তুমুল চিৎকার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)। যদিও বরফ গলল না তাতে।
শুক্রবার পার্থর হাজিরা ছিল আলিপুর আদালতে (Alipore Court)। শুনানি শেষে যখন তাঁকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই সময় তাঁকে ঘিরে ধরে সংবাদমাধ্যম। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই আর্তনাদ করে ওঠেন পার্থ। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘মরে যাব, আমি মরে যাব, আমাকে বেরোতে দিন!’’
রীতিমত চমকে ওঠে উপস্থিত জনতা।
এদিকে সেই ভিড়ের মধ্যেই পার্থকে দেখে “চোর চোর” স্লোগান ওঠে। জোকা ইএসআই হাসপাতালে (Joka ESI Hospital) চটি কাণ্ডের পর থেকে আজকাল কড়া নিরাপত্তায় জেল থেকে বের করা হয় পার্থকে।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Scam) মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ আলিপুর আদালতে হাজিরা দেন। এর পর দুপুর ২টো নাগাদ তিনি যখন আদালত থেকে বেরোচ্ছেন, সেই সময় চত্বর জুড়ে ওঠে “চোর চোর” চিৎকার।
শুক্রবার আলিপুর আদালতে যেন ঘটনার ঘনঘটা। একদিকে সেসময় বাইরে তুমুল বৃষ্টি, আর অন্যদিকে আদালত অলিন্দে বিস্ফোরক দাবি করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পার্থর আইনজীবী এদিন আদালতে একটি আবেদন জানিয়ে
এদিন আদালতে পাথর তরফে একটি আবেদন জমা করেন এই তৃণমূল (TMC) নেতার আইনজীবী। আদালতে জানানো আবেদনে পার্থ দাবি করেছেন, “আমি যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম তখন আমার ভূমিকা ঠিক কী ছিল তা খতিয়ে দেখা হোক। আমি শিক্ষা মন্ত্রী পদে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু নিয়োগের (recruitment) ব্যাপারে আমার নিয়ন্ত্রণ (Control) ছিল না।” পার্থ এও দাবি করেন, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) তাঁকে গ্রেপ্তার করলেও এখনও কোনও চার্জশিট পেশ করতে পারেনি। সুতরাং তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।
পার্থ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কল্যাণময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেফাজতে চেয়ে এদিন আদালতে আবেদন জানিয়েছে সিবিআই (CBI)।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে তাতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে “মাস্টারমাইন্ড” (Mastermind) বলে দাবি করেছে সিবিআই। এই মামলায় এবার সিবিআই চাইছে পার্থকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, এসপি সিনহা, অশোক সরকার, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে যাবতীয় অনিয়মের কাজ করিয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী।
এর আগে ভার্চুয়াল শুনানিতে জামিনের জন্য কান্নাকাটি করেছিলেন পার্থ। এদিন নিজের জামিনের আবেদন চেয়ে নিজেই সওয়াল করেন তিনি। তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা বলার পাশাপাশি পার্থ তাঁর পারিবারিক সুনামের কথাও বলেন আদালতে। খাতায় কলমে এখন ও বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “আমার কাকা প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক ছিলেন। আমার মা-বাবা দু’জনেই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। আমি নিজে এমবিএ, ডক্টরেট। দীর্ঘদিন একটি নামী সংস্থায় উঁচু পদে চাকরি করেছি। আমায় জামিন দেওয়া হোক।”
নিয়োগ দুর্নীতিতে নিয়ন্ত্রণ না থাকা নিয়ে পার্থর বিস্ফোরক উক্তিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পার্থর নিয়ন্ত্রণ যদি নিয়োগে না থাকে, তা হলে কার নিয়ন্ত্রণ ছিল? কারা নিয়ন্ত্রণ করত শিক্ষা দপ্তরকে?
প্রসঙ্গত, গ্রুপ সি মামলায় পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু নিয়োগ সম্পন্ন হয় ২০১৯ সালে। সিবিআইয়ের অভিযোগ অন্তত ৪০০জন প্রার্থীকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।