আজ খবর ডেস্ক:
ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে শহরের ডেঙ্গু (Dengue) পরিস্থিতি। কালীঘাটের এক ছাত্রের পর এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক মহিলার।
সোমবার মৃত্যু হয়েছে হরিদেবপুর ব্যানার্জি পাড়ার বাসিন্দা ৫৯ বছরের শর্মিলা চট্টোপাধ্যায়ের। ঢাকুরিয়া আমরি (AMRI) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল, রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
শুধু কলকাতাই নয়, কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। যে কারণে, গত সপ্তাহে মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী রোগ নিয়ন্ত্রণে ডিএম (District Magistrate), স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিলেন।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, গত সপ্তাহে রাজ্য জুড়ে ৩০০০ টিরও বেশি ডেঙ্গুর ঘটনা ঘটেছে এবং রিপোর্টটি নবান্নে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে কেএমসি (KMC) এবং এইচএমসি (HMC) সহ ১২টি নাগরিক সংস্থায় রোগের প্রকোপ উল্লেখ করা হয়েছে।
ঠিক পুজোর মুখে কলকাতা ও রাজ্যের অন্যত্র ডেঙ্গু পরিস্থিতি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে রাজ্য প্রশাসনের।
শনিবার রাজ্যে প্রায় ৩০০জন নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় কলকাতা, দুই ২৪ পরগণা, জলপাইগুড়ি, হাওড়া এবং হুগলিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। শনিবার রক্ত পরীক্ষার পর ২৯২ জনের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। পরীক্ষা হয়েছিল ২,৭৫৮ জনের। শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
ঢাকুরিয়া এএমআরআই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃত শর্মিলা চট্টোপাধ্যায়ের গত ৩১ অগস্ট জ্বর এসেছিল। স্থানীয় এক ডাক্তারকে দেখানো হলে তিনি রক্ত পরীক্ষা করতে বলেন। ১লা সেপ্টেম্বর রক্ত পরীক্ষা হয়। রিপোর্ট এলে দেখা যায় ডেঙ্গু-পজিটিভ (Dengue-Positive)।
শর্মিলার পরিবারের দাবি, চিকিৎসা শুরু হলেও দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলেন, জ্বর নামছিল না তাঁর। অতি সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ঘণ্টাখানেক চিকিৎসার পর সেখানেই গত কাল মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর কারণ হিসাবে সেপসিস এবং তাঁর সঙ্গে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ছিল বলে জানা গিয়েছে।
হরিদেবপুর এলাকার ব্যানার্জি পাড়া রোডের বাসিন্দাদের বক্তব্য, এলাকার বেশিরভাগ বাড়ির মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। বহুদিন ধরেই ডেঙ্গু হচ্ছে এলাকায়, পুরসভার থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
শুক্রবার কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, চলতি বছরে এপর্যন্ত কলকাতায় মোট ৫৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত।
কলকাতা পুরসভার ৮, ৯, ১০ এবং ১২ নম্বর বরোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।
পুরসভা সূত্রে খবর, গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশোর বেশি। শুধু তাই নয়। আশপাশের জেলাগুলিতেও থাবা বসিয়েছে মশাবাহিত এই রোগ। এই সময় শিশুদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিত্সকরা।
অন্যদিকে, সল্টলেক, নিউ টাউন এবং রাজারহাটে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। বিধাননগর পুরনিগম এলাকা এবং আশপাশের জায়গা থেকে গত ৭ দিনে প্রায় ৩০০জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর নথিভুক্ত হয়েছে। পুরনিগমের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, রবিবার পর্যন্ত বিধাননগরের ৪১টি ওয়ার্ড থেকে ১৮৫ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে।
রাজারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতে গত সপ্তাহে ১০০টিরও বেশি ডেঙ্গুর ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পাথরঘাটা, জ্যাংরা, হাতিয়ারা এবং বিষ্ণুপুর।
সল্টলেকে কেষ্টপুর খাল এবং ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের পাশের কয়েকটি ব্লক থেকে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ই, বি ই, সি ই, এস এ এবং ডব্লিউ ব্লক থেকে বহু মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে।
এছাড়াও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের কাছাকাছি অবস্থিত ইডি, ইই, ডিএল, আইসি এবং কেবি-কেসি ব্লকগুলি থেকে অনেক রোগীর খবর মিলেছে। পাশাপাশি, চিনার পার্ক, কৈখালি, অর্জুনপুর এবং তেঘরিয়াতেও ডেঙ্গিতে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক।