আজ খবর ডেস্ক:
হিজাবে মাথা ঢেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ২২ বছরের মেহসা আমিনি (Mahsa Amini)। কিন্তু সেটি আলগা করে জড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে মনে হয়েছিল পুলিশের।
তাই গাড়ি থেকে বের করে রাস্তাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মেহসাকে। তারপরে আর বাড়ি ফেরা হয়নি ওই তরুণীর। তিনদিনের মাথায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।


এরপরই ইরানে (Iran Hijab Controversy) তুমুল বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। গত কয়েকদিনে থামা তো দূরের কথা, চরম আকার নিয়েছে তা। এর জেরে মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। দাবি একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
যাঁর মধ্যে ৩১জন সিভিলিয়ান। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ইরান হিউম্যান রাইটস ডিরেক্টর মেহমুদ আমিরি মোঘাদ্দম জানিয়েছেন, মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের জন্য রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন ইরানের মানুষ। আর সরকার সেই শান্তিপূর্ণ অবস্থানে গুলি চালিয়েছে।

দেশ জুড়ে ক্ষোভের আঁচ উত্তরোত্তর বাড়ছে। তেহরানের রাস্তায় রাস্তায় দেখা গেছে সেই গণক্ষোভের ছবি।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, ইরানের অন্তত ৩০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। একেবারে গণবিক্ষোভের চেহারা নিয়েছে। গণহারে গ্রেপ্তার বরণও চলছে।
ইরান হিউম্যান রাইটসের দাবি, কুরদিস্তানে প্রথম বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। সেখানেই আমিনির বাড়ি। এরপরই বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। আমোল শহরে মৃত্যু হয়েছে ১১জনের। বাবোল শহরে মারা গিয়েছেন ৬ জন।


এদিকে কুর্দিস্তান (Kurdistan) রাইটস গ্রুপের দাবি, কুরদিস্তান প্রদেশেও ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ইরানের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় চলছে বিক্ষোভ। মূলত নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে আওয়াজ।

নেটমাধ্যমেও এনিয়ে সরব অনেকে। চলছে অধিকার রক্ষার আন্দোলন। হিজাবের বিরুদ্ধেই উঠেছে আওয়াজ। সব মিলিয়ে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে ইরান।


খবর পাওয়া যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ইরান প্রশাসন দেশের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ইরানের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা (America)। এমনকি পাশে দাঁড়িয়েছেন এলন মাস্ক (Elon Musk) নিজেও। বিনামূল্যে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সংযোগ দেওয়া হয়েছে ইরানবাসীকে।


মূলত ইরানের কুর্দি-জনবহুল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল এই বিক্ষোভ। পরে তা সে দেশের অন্তত ৫০টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯-এ গ্যাসোলিনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিক্ষোভের পর এমন বিক্ষোভ চোখে পড়েনি, বলছেন ইরানবাসী। সেসময় প্রায় ১৫০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

কুর্দি অধিকার গোষ্ঠীর এক নিজস্ব প্রতিবেদন বলছে, বুধবার তিনজন মারা গিয়েছেন। সেই প্রতিবেদন অনুসারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
যদিও প্রশাসনের তরফে অস্বীকার করা হয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে।


ইরান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ১৭ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ইরানের হিউম্যান রাইটস স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে। জখম অনেক। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সরকার তার সঠিক হিসেব দিচ্ছে না। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, তেহরানের পরিস্থিতি সাঙ্ঘাতিক। ইরানের ৮০টি শহরে মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ।


কুশপুতুল জ্বালিয়ে, হিজাব পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। সমাজকর্মী এবং আন্দোলনকারীদের মারধর করা হচ্ছে। নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। , রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ আন্তর্জাতিক মহলের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *