আজ খবর ডেস্ক:
“শেষ হয়ে হইল না শেষ”!
১০০ ঘণ্টা পার করেও রাজ্যের একাধিক জেলায় স্তব্ধ গণ পরিবহণ (Public Transport)। তবে শনিবার বেলা বাড়ার পর থেকে এই আন্দোলনে একের পর এক টুইস্ট।


প্রথমে দুপুর ১টা নাগাদ জানানো হয়, কুস্তাউর স্টেশন থেকে অবরোধ তোলার কথা ঘোষণা করবেন কুর্মি সমাজের নেতারা। ধীরে ধীরে নীচু স্তরের কর্মীদের মধ্যে সেই বার্তা পৌঁছবে। তারপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে ট্রেন ও বাস চলাচল।
কিন্তু দুপুর গড়াতেই অন্য ছবি। কুর্মি (Kurmi) সমাজের একাংশ, যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁদের তরফে জানানো হল এখনই উঠছে না অবরোধ-বিক্ষোভ।

শনিবার পঞ্চম দিনে পড়েছিল কুর্মিদের আন্দোলন। সব মিলিয়ে ১০০ ঘণ্টা পেরিয়েও অধরা সমাধান। এমনকী, রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর আবেদনে ও কান দিচ্ছেন না বিক্ষোভকারীরা।
মনে করা হয়েছিল, এদিন জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পর সমাধান মিলবে। বৈঠক শেষে কুর্মি সমাজের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “আমরা জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করি। কিছু আশাজনক কথাবার্তা হয়েছে। তারপর এই সিদ্ধান্ত নিই যে আন্দোলন প্রত্যাহার করল কুর্মি সমাজ”।
কিন্তু একটু পরেই দেখা গেল, আন্দোলনকারীদের একাংশ বিক্ষোভ তুলে নিতে নারাজ।


আন্দোলনের পঞ্চম দিনেও সকাল থেকে “রণং দেহি” মনোভাবে ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। ট্রেন লাইনে বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। তার জেরে এদিনও বাতিল করতে হয়েছে একের পর এক প্যাসেঞ্জার ও এক্সপ্রেস ট্রেন।
সব মিলিয়ে প্রায় ২৩টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। তালিকায় আছে ১. রাঁচি-খড়গপুর এক্সপ্রেস
২. ধানবাদ-টাটানগর এক্সপ্রেস ৩. খড়গপুর-টাটানগর এক্সপ্রেস ৪. হাওড়া-বারবিল জন শতাব্দী এক্সপ্রেস
৫. ইস্পাত এক্সপ্রেস
৬. টাটানগর-দানাপুর এক্সপ্রেস ৭. হাতিয়া-খড়গপুর এক্সপ্রেস ৮. স্টিল এক্সপ্রেস
৯. বোকারো-আসানসোল প্যাসেঞ্জার ১০.পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম সহ একাধিক লোকাল ট্রেন। চলছে চুড়ান্ত যাত্রী বিক্ষোভ।

প্রসঙ্গত, কুর্মি জাতিকে তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত করা-সহ একাধিক দাবিতে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ায় আন্দোলন চলছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে চলছিল রেল ও সড়ক অবরোধ। অবরোধের জেরে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে ওঠে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ।
বহু মানুষ পুজোর আগে নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরতে পারছেন না।


২৩ টি ট্রেন বাতিল করা ছাড়াও ঘুরপথে চালাতে হচ্ছে ৭টি ট্রেন৷ একই সঙ্গে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরুদ্ধ করে রাখায় গত ৫ দিন ধরে রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক৷ আটকে রয়েছে দূরপাল্লার বহূ বাসও৷
অনেকেই মনে করছেন এর ফলে, আর দিন কয়েকের মধ্যেই হু হু করে আনাজ (Vegetables), মাছ (Fish) সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে।
কুর্মি সমাজের অবরোধের মূল দাবি, কুড়মি সম্প্রদায়কে এসটি (ST) তালিকাভুক্ত করা ছাড়াও কুড়মালি ভাষাকে স্বীকৃতি এবং সারনা ধর্মের স্বীকৃতি। এই তিনটি দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি চলছে।

পুরুলিয়ার কুস্তাউর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে রেল অবরোধের জেরে দক্ষিণ পূর্ব শাখার খড়্গপুর- টাটা ডিভিশনে রেল চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার রেল যাত্রী৷
খড়্গপুর-হাতিয়া-খড়্গপুরের মত বেশ কয়েকটি ট্রেনকে আদ্রা পর্যন্ত চালাতে হচ্ছে। এরপর ট্রেনগুলি ফিরতি পথে রওনা দিচ্ছে৷

সড়ক পথেও চরম নাজেহাল পরিস্থিতি। পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে জাতীয় সড়কেও চলছে অবরোধ৷ ফলে সড়ক পথে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড, বিহার, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বন্ধ পণ্য পরিবহণ। জাতীয় সড়কের দুপাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে পণ্যবাহী লরি। নষ্ট হচ্ছে কাঁচামাল।
আন্দোলন তোলার জন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম প্রশাসন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কুর্মি সমাজের নেতৃত্ব প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পরে অবরোধ তোলায় সম্মতি জানালেও বেঁকে বসেছেন বহু অবরোধকারী। তাঁরা বলছেন, কোনওমতেই তাঁদের দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত অবরোধ উঠবে না।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকারি তরফে তাঁদের যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তাতে খুশি নন তাঁরা৷ তাই এখনই অবরোধ তোলা সম্ভব নয়৷

এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রামের লোধাশুলিতে জাতীয় সড়কে (National Highway) এবং রাজ্য সড়ক (State Highway) স্তব্ধ। অবরোধের জেরে ট্রাক, লরি, বাসের দীর্ঘ লাইন।
বস্তুত কুর্মি সমাজেরএই দাবির বেশিরভাগটাই কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্গত। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু এখনো কেন্দ্রের তরফে কোনও সমাধান সূত্র দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রাজ্য প্রশাসনের।


পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দার দফতরে ভিডিও কনফারেন্স হয়। সেখানে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিব সঞ্জয় বনশলের সঙ্গে বৈঠক হয়। সিআরআই–এর চিঠিতে যে ভুল ছিল তা সংশোধন করার কথা জানানো হয় রাজ্যের পক্ষ থেকে। তাতেও মন গলানো গেল না আন্দোলনকারীদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *