আজ খবর ডেস্ক:
বিতর্ক পিছু ছাড়ে না এই তৃণমূল বিধায়কের (TMC MLA)!
প্রকাশ্যে দলনেত্রীকে সমর্থন জানিয়েও যে এহেন বিপাকে পড়তে হবে, সম্ভবত আগে বোঝেন নি। কারণ মাঝে মাঝেই দল বিরোধী উক্তি করে বিতর্কে জড়ান তিনি। এবার ঘটনা উল্টো।
সম্প্রতি রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের আয়ের নতুন পথ বাতলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বলেছিলেন, “পুজোর সময় ১ হাজার টাকা নিন। প্রথমে কেটলি ও চায়ের কাপ কিনুন। সঙ্গে রাখুন বিস্কুট। এক সপ্তাহ পরে মাকে বলুন একটু ঘুগনি করতে। এরপর ঘুগনি, তেলেভাজা এবং সঙ্গে মুড়ি, বাদাম আর ছোলা ভাজা নিয়ে বসে পড়ুন। এত বিক্রি হবে যে কুলোতে পারবেন না।”
সেইসঙ্গে, কাশফুল দিয়ে লেপ ও বালিশ বানিয়ে ব্যবসা করার কথা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। এই ঘটনার পর একদিকে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিরোধিতা শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। অন্যদিকে এই বক্তব্যে পরোক্ষভাবে সমর্থন জানান তৃণমূলের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Bapari)। যা বিতর্কের আগুনে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের পর মিমের (Meme) বন্যা বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর সেই প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের পোস্ট সামনে আসতেই ফের একবার সমালোচনায় সরব হলেন সকলেই।
“যারা অধিক রোজগারের জন্য চাকরিবৃত্তি করেন তাঁদের থেকে মুড়ি, তেলেভাজা বিক্রেতাদের আমি বেশি সম্মান করি”। সোশ্যাল মিডিয়াতে সম্প্রতি এমনই পোস্ট করেছেন তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি। তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ইতিমধ্যেই নেট দুনিয়া তোলপাড় ।
তৃণমূল বিধায়কের লিখেছেন- “যারা প্রচুর পড়াশোনা করে অধিক রোজগারের জন্য চাকরবৃত্তিকেই জীবনের পরমার্থ মনে করে তার চাইতে যে লোকটি স্বাধীন ভাবে চপ মুড়ি তেলে ভাজা বিক্রি করে সামান্য রোজগার করে সৎভাবে জীবন যাপন করে তার সন্মান অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।”
আবার তৃণমূল বিধায়কের এই লেখায় দেখা যাচ্ছে ভুল বানান। “সম্মান” এর বদলে তিনি লিখেছেন “সন্মান”।
অথচ একজন সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতি। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার।
এই মন্তব্যের জেরে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রূপ এবং কটাক্ষের শিকার হয়েছেন মনোরঞ্জন। পোস্টের কমেন্ট বক্সে কার্যত দীর্ঘদিনের জমা ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এক ব্যক্তি যেমন প্রতিক্রিয়ায় জানান, “তাহলে আপনার এই উঠে আসার গল্পটার কি মূল্য থাকে? যদি চা ও চানাচুর বিক্রি করেই সবাই জীবন কাটাবে, তাহলে বিধায়করা নিজেদের বেতন পাবলিকের টাকা থেকে তোলেন কেন? তাঁদের কাজটা কী?”
অন্য আরেকজন লেখেন, “শিরদাঁড়া বলে বস্তুটাকে যে বাঁচিয়ে রাখেননি সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু বিবেকটাও মেরে ফেলেছেন দেখে খারাপ লাগছে। ছিঃ! ছিঃ!”।
তৃতীয় আরেকটি কমেন্ট, “আপনি তাহলে চোরদের সাথে এমএলএ না থেকে ইস্তফা দিয়ে ঘুগনি মুড়ি বিক্রি করে সম্মানের সৎ জীবন পালন করুন”। এইসব মন্তব্যের পাশাপাশি কমেন্ট বক্সে তৃণমূল বিধায়ককে “চোর” বলেও কটাক্ষ করতে দেখা গেছে অনেককে।
আরও এক ব্যক্তি লিখেছেন, “একজন স্বাধীন মানুষ অবশ্যই প্রথাগত পড়াশুনো শেষ করে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করতেই পারেন এবং সে নির্বাচনের তালিকায় চপের দোকান কেন, একটি ছোট্ট বিড়ি সিগারেটের দোকানও থাকতে পারে। এতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু রাজ্যের সরকার যদি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরী করতে ব্যর্থ হয়, সরকারের প্রধান পদাধিকারী যদি চপ বেগুনী ঘুগনি ইত্যাদি ব্যবসার আইডিয়া দেন তাহলে অবশ্যই সমস্যা। কারণ তাহলে তিনি নিজের কাজটাই করছেন না।”
একের পর এক এহেন সমালোচনা হতে থাকলে পরবর্তীতে আরও একটি পোস্ট করেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তিনি লেখেন, “বলছি যে সব মা বাবাই চান যে তার সন্তান শিক্ষিত হোক। সেটা কোন দোষের নয়। সরকারও চায় সবাই লেখাপড়া শিখুক। তা চাকরির সংখ্যা তো সীমীত। একশোজন লেখা পড়া জানা লোকের মধ্যে মাত্র পাঁচ দশ জন চাকরি পেতে পারে। বাকিরা কী করবে? এবার তারা যদি বলে আমি লেখাপড়া শিখে টোটো কেন চালাব? চপের দোকান কেন দেব? আপনার জবাব কী হবে?”
এক্ষেত্রেও একই রকম ভাবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরে এক ব্যক্তি লেখেন, “মাসে ১.১৩ লাখ টাকা পেলে এসব বলাই যায়।”
আরেকজনের কথায়, “আপনাকে যথেষ্ট সন্মান করি, কিন্তু আপনিও তো একদিন স্কুলের রান্না করতেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাকরি চেয়েছিলেন, তাহলে আপনাকে কেন এই প্রশ্নটা করতে হচ্ছে? কেন শ্রমিকরা বাইরের রাজ্যে কাজের খোঁজে যায় তা জানার তো আপনার কাছে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মনোরঞ্জন বেপারি মাঝে মাঝেই দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নানান বক্তব্য রাখেন অথবা প্রশ্ন তোলেন। সেই তিনি হঠাৎ সমাজ মাধ্যমে এমন মন্তব্য করছেন কেন? তাকি দলের মধ্যে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর একটি চেষ্টা মাত্র?