আজ খবর ডেস্ক:
নতুন চেহারায়, নতুন নামে আজ থেকে চালু হচ্ছে টালা ব্রিজ (Tala Bridge)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হাত দিয়ে উদ্বোধন হবে ঝা চকচকে, হেমন্ত সেতু। তবে, সেতুটির উদ্বোধন হলেও আপাতত প্রথম এক সপ্তাহ ছোট যানবাহন চলাচল করবে। পূর্ত দপ্তর সূত্রে খবর, এক সপ্তাহ পর সেখানে ভারী যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে।


বহু প্রতীক্ষিত টালা সেতুর উদ্বোধন প্রথমে হওয়ার কথা ছিল দেবীপক্ষে। কিন্তু সেতু নির্মাণের যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই তা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সেতুটি তৈরি করতে কারিগরি সহায়তা নেওয়া হয়েছে আইআইটি খড়গপুরের (IIT Kharagpur) থেকে।

মোট ৪৬৫.১১ কোটি টাকা খরচ করে ৭৪৩.৪৩ মিটার লম্বা টালা সেতু ফিরছে। আগে টালা সেতুর ভারবহন ক্ষমতা ছিল ১৫০ টন। এ বার সেই ভারবহন ক্ষমতা বাড়ছে অনেকটাই।
পুরনো সেতুর যে দিকটি ডানলপ থেকে শ্যামবাজারমুখী যান চলাচলে ব্যবহৃত হত, নতুন সেতুর সেই ফ্ল্যাঙ্কটি দিয়েই শুধু ছোট গাড়ি চলাচল করানো হতে পারে। ওই ফ্ল্যাঙ্কটিকে দ্বিমুখী রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলেই জানা গিয়েছে। তবে প্রশাসনের একাংশের মতে, আপাতত ওই দিকটি একমুখী রেখে ব্যবহার করা হতে পারে সেতুর পার্শ্ববর্তী অন্য রাস্তা। আগামী ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হতে পারে দু’টি ফ্ল্যাঙ্কই।

এদিকে পুনর্বাসনের দাবিতে এদিন বেলা বারোটা থেকে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, সেতু সংস্কারের সময় নিচ থেকে কমবেশি ৩০-৪০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। বাসিন্দারা এদিন জানান, খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। তিন বছর কেটে গেলেও মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ মেলেনি। তাঁদের দাবি, বারবার অভিযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের আবেদন পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এদিন মানববন্ধন করলেন তাঁরা। যদিও এই বিক্ষোভের পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কাউন্সিলর তরুণ সাহার।


যাঁরা এদিন বিক্ষোভ দেখান তাঁদের সিংহভাগই দীর্ঘদিন ধরে টালা ব্রিজেন নিচে অস্থায়ীভাবে থাকতেন। কিন্তু, ব্রিজের পুর্নির্মানের সময় তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, তুলে দেওয়ার সময় সরকার তাঁদের নতুন বাসস্থান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখা হয়নি।

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আচমকা ভেঙে পড়ে তারাতলার কাছে মাঝেরহাট সেতু।
মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরেই কলকাতা শহরের সব সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই পরীক্ষাতেই ধরা পড়ে টালা সেতুর বেহাল অবস্থার কথা।
এর পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে টালা সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। ২০১৯ সালে পুজোর আগে ওই স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়ে সরকারি সংস্থা রাইটস (RITES) জানায়, টালা সেতু ভেঙে ফেলে নতুন নির্মাণ প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে টালা সেতু ভাঙার কাজ শুরু হয়। ওই বছরের এপ্রিলে শেষ হয় সেই কাজ। চার লেনের নতুন সেতুর দু’দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে রেলের জমিতে থাকা ৩৮টি আবাসন ভাঙতে হয়েছে।
২০২০ সালের আগস্টে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ‘লার্সন অ্যান্ড টুবরো লিমিটেড’। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পূর্ত দপ্তর জানিয়েছিল, এপ্রিলে খুলে দেওয়া হবে টালা সেতু। পরে সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হওয়ায় পুজোর আগে উদ্বোধন হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মহলের মত, টালা সেতুটি চালু হয়ে গেলে উত্তর কলকাতার বাসিন্দাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন এই সেতুটি তৈরি হওয়ায় তা আগের তুলনায় অনেক বেশি মজবুত হয়েছে।
উদ্বোধনের পরেই টালা সেতুতে বাস চালানোর আবেদন জানিয়েছিল বেসরকারি বাস মালিকদের একাধিক সংগঠন। সেই আবেদন জমা পড়েছিল পরিবহণ দপ্তরে। পত্রপাঠ তা খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।


সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সূত্রে খবর, চার লেনের ওই সেতু দু’টি ফ্ল্যাঙ্কে বিভক্ত। উদ্বোধনের পরে এখন শুধুই ডান দিকের ফ্ল্যাঙ্কটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *