আজ খবর ডেস্ক:
রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একটানা সাত দিন ধর্মঘট চালালেন তৃণমূল ইউনিয়নের (INTTUC) পরিবহণ কর্মীরা। তাঁদের সপ্তাহব্যাপী এই কর্মবিরতিতে পুজোর মুখে কার্যত চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (SBSTC) কর্মীদের একাংশ কর্ম বিরতিতে চলে গিয়েছিলেন। ফলে বাস চালক ও কন্ডাক্টরের অভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় থমকে ছিল বাস পরিষেবা। এদিকে কুর্মি (Kurmi) সমাজের আন্দোলনের জন্য দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ ছিল ট্রেনও।


পরিস্থিতি এমন হয় যে বাবুঘাট, ধর্মতলা সহ বিভিন্ন বাস ডিপোয় চোখে পড়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে, বেসরকারি বাসের ছাদে চড়ে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।

পুজোর মুখে অনেকেই আগাম টিকিট কেটে রেখেছিলেন বেড়াতে যাওয়ার জন্য।
SBSTC-র কর্মীদের আন্দোলনের জেরে দিঘা-মন্দারমণি থেকে বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া, পর্যটকেরদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। ইতিমধ্যে পুজোর বুকিং হয়ে গিয়েছে। SBSTC-র কর্মীদের আন্দোলনের জেরে পর্যটকরা বুকিং বাতিল করবেন কিনা তা ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও। এদিকে লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া আন্দোলন তুলতে মোটেও রাজি ছিলেন না অস্থায়ী বাসকর্মীরা।


ফলে, পুজোর আগে কারও বাড়ি ফিরতে সমস্যা, কেউ আবার কর্মসূত্রে জেলায় গিয়ে আটকে পড়েছেন। হাওড়ার বাস ডিপোয় আন্দোলন কিছুটা শিথিল হলেও বর্ধমান, দুর্গাপুর, মেদিনীপুর সহ আন্দোলনের কেন্দ্র দিঘার SBSTC বাস ডিপোয় আন্দোলন চলছিল।

অবশেষে এদিন সকালে মিলল রফা সূত্র। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর আশ্বাসের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।
আন্দোলনকারীদের একাধিক দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল মাসের ২৬ দিনই কাজ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি। এদিন আন্দোলনকারী অস্থায়ী পরিবহণ কর্মীদের আশ্বাস দেন স্নেহাশিস চক্রবর্তী।


২০১৩ সাল থেকে যাঁরা বাস চালাচ্ছেন, তাঁদের স্থায়ীকরণ, মাসে ২৬ দিন কাজ, ছুটি-সহ অন্যান্য একাধিক সুবিধার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন SBSTC র অস্থায়ী কর্মীরা।
সোমবার সংবাদমাধ্যমে এই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী। স্নেহাশিস বলেন, “আমি আশ্বাস দিচ্ছি, মাসে ২৬ দিন কাজ থাকবে। বাকি যা দাবি, আমার পক্ষে যতটা সম্ভব, আমি মেনে নেব।” পুজোর পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার প্রতিশ্রুতি ও দিয়েছেন তিনি।

গত প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ডিপোগুলিতে মাসে ২৬ দিন কাজ-সহ একগুচ্ছ দাবিতে কর্ম বিরতি চলছিল। সরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন অস্থায়ী কর্মীরা। তাতে প্রভাব পড়েছিল জনজীবনে।
পরিবহণ ধর্মঘটের (Transport Strike) জেরে জেলাস্তরে বাস পরিসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। এদিকে অস্থায়ী বাসকর্মীরা জানিয়েছিলেন, দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে। গত সপ্তাহ থেকেই পরিবহণ দপ্তর দফায় দফায় বৈঠক করে।
এদিকে শাসকদলের ইউনিয়নের ছাতার তলায় এই আন্দোলন চলছিল বলে বিরোধী শিবির থেকেও একের পর এক কটাক্ষ শুনতে হচ্ছিল প্রশাসনকে। আপাতত সমস্যার সমাধান হওয়ায় পুজোর সময় অন্তত পর্যটক বা নিত্যযাত্রীদের অসুবিধের মুখে পড়তে হবে না, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *