আজ খবর ডেস্ক:
অতীতে হাওড়ার এক প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) তথা রাজ্যের মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ছবি হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে দল ছেড়েছিলেন। যদিও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) বিজেপি (BJP) ছেড়ে ফের তৃণমূলে ফিরে এসেছেন।
এবার সেই হাওড়া জেলারই আরেক বিধায়ক সমাজ মাধ্যমে তৃণমূল নেত্রীর ছবি দিয়ে দল থেকে বিদায় চাইলেন। ফেসবুকে লিখলেন, “দলে পুরনো নেতা-কর্মীদের সম্মান নেই। প্রাপ্য মর্যাদা না পাওয়া নিয়ে এই বিতর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়৷”
তবে, সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) “নতুন তৃণমূল” সংক্রান্ত মন্তব্যে এই বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার কথা বলেছেন তাপস রায়, মদন মিত্র’দের (Madan Mitra) মত সিনিয়র নেতারাও৷
হাওড়ার (Howrah) উদয়নারায়ণপুরের ৩ বারের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা (Samir Panja) শুক্রবার রাতে ফেসবুকে নিজের পেজে একটি পোস্ট করেন। যা নিয়ে সকাল থেকে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
তৃণমূল নেত্রীর ছবি দিয়ে ওই পোস্টে সমীর পাঁজা লেখেন, “হ্যাঁ , আমার এই মহাননেত্রী আছেন বলেই, দলটা ছেড়ে যাইনি। কারণ কত ঝড়, ঝাপটা পেরিয়ে নানান ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থেকে ৩৮ টা বছর মহান নেত্রীর সঙ্গে একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে করতে, এখন বড়ই বেমানান লাগছে নিজেকে। কারণ আজ অবধি মিথ্যে নাটক করে দল নের্তৃত্বের কাছে ভালো সেজে, মেকি লিডার হতে চাই না আমি। না কবেই টাটা বাই বাই করে দল ছেড়ে চলে যেতাম আমি। আমার মতো অবিভক্ত যুব কংগ্রেসের আমল থেকে যারা আছে, তাঁরা আদৌ কোনও গুরুত্ব পাচ্ছে কি বর্তমানে ?” প্রশ্ন তোলেন সমীর। শেষ লাইনে লেখেন, “তাই আর কি, আমার যাবার সময় হল, দাও বিদায়।”
তবে শুধু সমীর পাঁজাই নন, তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে প্রকাশ্যে সমীরের বক্তব্যকে সমর্থন জানালেন তৃণমূলের আরেক সিনিয়র নেতা তথা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ও (Arup Roy)।
প্রসঙ্গত সমীর পাঁজা শুধু তৃণমূলের বিধায়কই নন, হাওড়া গ্রামীণ এলাকার তৃণমূল সভাপতিও বটে। সমীরের এই হতাশার সঙ্গে গলা মিলিয়ে ওই পোস্টের কিছুক্ষণের মধ্যে অরূপ রায়ও জানিয়ে দিলেন, দল চাইলে তিনিও সরে যেতে তৈরি!
অরূপ রায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “সমীর পাঁজা দলের সম্পদ। তাঁর হতাশা দুঃখজনক, ও অন্ধের মত দল করে৷ , দলকেও পুরনো কর্মীদের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে৷ সমীর ছাড়া হাওড়ায় দল অচল৷”
তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে অরূপ আরও বলেন, “আমারও একই অবস্থা , দীর্ঘদিন দল করেছি, আমার নেতৃত্বে দল ক্ষমতায় এসেছে৷ যতদিন আমি মনে করবো দলে থাকা দরকার বা দল যেদিন মনে করবে আমিও সরে যাবো৷”
বস্তুত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে “আদি-নব্য” দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছিল। এরপরে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক থেকে রাজ্য সভাপতি, এমনকি দলের মুখপাত্রদের তালিকাও আমূল বদলে দেয় গেরুয়া শিবির।
আর এবার একদিকে যেমন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) প্রতিদিন হুঙ্কার দিচ্ছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসতে চাইছেন অনেকে, অন্যদিকে ঘাসফুল শিবিরে ও ক্রমশ ছড়াচ্ছে বিদ্রোহের বারুদ।