আজ খবর ডেস্ক:
Bangla Pokkho শ্রমিকের (Casual Labourer) কাজ করার জন্য চলতি বছরের জুন মাসে, শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের (East Bardhaman, Jamalpur) এক দম্পতি (Bardhanan Couple Arrested in Bangalore) ব্যাঙ্গালোরে (Bangalore)যায়। পলাশ অধিকারী (Palash Adhikari), তাঁর স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু পুত্র এখনও জেলবন্দী।

একই উদ্দেশ্যে ওই অধিকারী পরিবারের অন্য সদস্যরাও (পলাশের বাবা পঙ্কজ অধিকারী, মা সবিতাদেবী ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী) ও ব্যাঙ্গালোরে যান। সেখানকার মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারথুর থানার সুলিবেলে গ্রামের কায়েম খানের ডেরায় তারা ওঠে।

দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরির শর্তে তাঁরা কায়েম খানের অধীনে কাজ শুরু করেন। তাদের কাজ ছিল হোটেল, রেস্তোরা, সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জয়গা থেকে সংগৃহীত বর্জ্যবস্তু, বোতল, প্লাস্টিক সরঞ্জাম এইসব বাছাই করা।
হঠাৎ গত ২৭ জুলাই ভারথুর থানার পুলিশ কায়েম খানের ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যাঁরা বাংলাভাষী (Bengali Speaking People) ছিলেন, তাঁদের বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী (Bangladeshi Infiltrators) সন্দেহে ভারথুর থানায় আটক করে রাখা হয়।

ওইসময়ে পলাশ, তাঁর স্ত্রী, বাবা-মা ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী, সবাই ভারথুর থানার পুলিশকে জানান তাঁরা কেউই বাংলাদেশী নন। এমনকী তাঁরা নিজেদের আধার কার্ড (Aadhaar Card), প্যান কার্ড (Pan Card), ভোটার কার্ড (Voter ID Card) দেখান। সেইসব দেখে সেখানকার পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা, মা ও প্রতিবেশীকে ছেড়ে দিলেও পলাশ, তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র সহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় তিন মাস হয়ে গেল শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পলাশ ও তাঁর স্ত্রী ব্যাঙ্গালোরের জেলেই দিন কাটাচ্ছেন।
পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। সেখানে রয়েছে তাঁদের টিনের চালার দু’কুঠুরি ভাঙাচোরা বাড়ি।

প্রায় তিন মাস ধরে শিশু পুত্র আদিকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরের জেলে দিন কাটাচ্ছেন পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। তাঁদের বাবা-মা ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে সেখানকার পুলিশকে ছেলে ও বৌমার ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রামান পত্র দেখান। অভিযোগ, তাতেও লাভ কিছু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ছেলে, বৌমা ও নাতির ব্যাঙ্গালোরের জেল থেকে মুক্তির জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর (Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন অসহায় বাবা মা।


ওই দম্পতির মুক্তির দাবিতে ভাইফোঁটার দিন অভিনব কর্মসূচী পালন করল বাংলা পক্ষ (Bangla Pokkho)।
FOREIGNERS ORDER ACT, 1948 (U/s-7(2)); FOREIGNERS ACT, 1946 (U/s-14 (B)) ধারায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলা পক্ষ’র অভিযোগ, বিজেপি (BJP) শাসনাধীন কর্ণাটক সরকার বাঙালির উপর আক্রমণ করেই চলেছে ক্রমাগত। আগে বাঙালির বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। নানা সময় নানা বাঙালিকে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

পলাশ অধিকারী, শুক্লা অধিকারী ও তাদের পুত্র, দেড় বছরের আদির মুক্তির দাবিতে ভাইফোঁটার দিন কলকাতার রানুছায়া মঞ্চে অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচী করল বাংলা পক্ষ। প্রতীকি ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্লেটে মিষ্টি নেই, কপালে ভাইফোঁটা নেই- কারণ বর্ধমানের বাঙালি বোন বাঙালি হওয়ার জন্য ব্যাঙ্গালোরের জেলে বন্দী। এই অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা জেলার সম্পাদক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা।
গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বাঙালি ভাইবোনদের ব্যাঙ্গালোরের জেল থেকে মুক্ত করে আনবোই। বাঙালি হওয়া কি অপরাধ? বাঙালিকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করা হচ্ছে নানা বিজেপি শাসিত রাজ্যে।”


বস্তুত, সার্বিকভাবে বাংলা পক্ষ’র অভিযোগ, বাংলার সমস্ত চাকরি-কাজ- ব্যবসা দখল করছে বহিরাগতরা, বঞ্চিত হচ্ছে বাঙালি। বাধ্য হয়ে তাঁরা অন্য রাজ্যে কাজে যাচ্ছে। তাই যাতে আর বাঙালিকে বাইরে কাজে যেতে না, বেসরকারি চাকরি- ঠিকা কাজ- টেন্ডারে ভূমিপুত্র সংরক্ষণ; এই সব দাবি নিয়ে লড়াই চালাচ্ছে এই সংগঠন।
বাংলা পক্ষ, স্থানীয় বিধায়ক ও বাংলার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছে । ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনারকে মেল করেছে, যাতে জেল থেকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হয় ওই দম্পতিকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *